ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বহুগুণ বেড়েছে ওষুধ খরচ

জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
বহুগুণ বেড়েছে ওষুধ খরচ

আমাদের দেশের সবকিছুই ঊর্ধ্বগামী। সব কিছুই বাড়তি। উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সব কিছু বাড়ছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, মানুষের গলার জোর বেড়েছে, প্রতারণা ও মিথ্যাচার বেড়েছে। রাজধানীর যানজটও বেড়েছে। বাড়ার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রাণরক্ষাকারী ওষুধের দাম। অভাবের কারণে খাবার কম খেলে চলে কিন্তু জীবনকে সুস্থ রাখতে হলে ওষুধ না খেলে চলে না। যারা আর্থিক সামর্থ্যরে কারণে ওষুধ নিয়মিত খেতে পারেন না, পুরো কোর্স সম্পন্ন করতে পারেন না তারা পরবর্তীতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। অনেক সময় প্রাণ হারাতে হয়। অন্য সব পণ্যের চাহিদা পূরণে কাটছাট করা হলেও ওষুধ খরচ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। অথচ গত দুই মাসে অন্তত ৫০ ধরনের ওষুধের দাম পাঁচ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ডায়াবেটিকস রোগীদের ইনসুলিন ও ইনজেকশনের দাম। এ ছাড়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, ভিটামিন ও হাঁপানিসহ বিভিন্ন ওষুধের প্রতি পিসের দাম ৫০ পয়সা থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাদ যায়নি জ্বর-সর্দির ট্যাবলেট-ক্যাপসুল ও বিভিন্ন অসুখের সিরাপও। অনেকে টাকার অভাবে মাঝখানে ওষুধ ও চিকিৎসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। জটিল কিডনির সমস্যায় নিয়মিত ডায়ালাইসিস করার পরামর্শ দেয়া হলেও মাঝখানে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন পরপর ওষুধের দাম বাড়ছে। অভাবী মানুষ বলছে, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পেটই চলে না, ওষুধ কিনব কীভাবে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক জরিপ অনুযায়ী, চিকিৎসা-ব্যয়ের ৬৪ শতাংশই এখন ওষুধের পেছনে খরচ হচ্ছে। দাম নিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসা করার কোনো সুযোগ থাকে না। আবার জিজ্ঞাসা করলেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারে না। অথচ ১৯৮২ সালের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১১ (১) ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, সরকার অফিসিয়াল গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় দেড় হাজারের বেশি এসেনশিয়াল ড্রাগের (জীবনরক্ষাকারী ওষুধ) ২৭ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় আছে ২১৯টি। এর মধ্যে ১১৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। অন্যান্য ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। অথচ একসময় দুইশ’র বেশি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দিত সরকার। সেই সংখ্যা এখন আরও কমে গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল বিষয় হচ্ছে, ওষুধের দামটা কীভাবে বাড়ে, কী কারণে বাড়ে, সেটা কেউই জানে না। কোম্পানিগুলো সবসময় বলে, ওষুধের কাঁচামাল আনতে আমাদের বেশি দাম দেওয়া লাগে। এসব কাঁচামাল কোম্পানিগুলো বছরে একবারই নিয়ে আসে। তবে কেন দুই-তিন মাস পর তো এ কারণে দাম বাড়বে- তা বোধগম্য নয়। আমাদের স্বাস্থ্য খাত পরিচালিত হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে হলে শক্তিশালী একটি ব্যবস্থাপনা কাঠামো দরকার। পণ্যের দাম বাড়লে কম দামের পণ্য কেনা কিংবা কেনা কমিয়ে দেয়া কোনো সমাধান নয়। তবে ওষুধের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। চিকিৎসক যে ওষুধ লিখেন সেটাই তাকে খেতে হয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ওষুধের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে বাধ্য হয়ে মানুষ ওষুধ খাওয়া কমিয়ে দেয়। এই চর্চা আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। সরকার বা ঔষধ শিল্প সমিতি যদি কোম্পানিগুলোকে মার্কেটিং-প্রমোশন খরচ কমানোর বিষয়ে বাধ্য করে তাহলে ওষুধের দাম এমনিতেই কমে আসার কথা। বিভিন্ন কোম্পানি চিকিৎসকদের বিভিন্ন উপহার-উপঢৌকন প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কেউ চিকিৎসককে গাড়ি-বাড়ি করে দেয়, বাসায় লিফট লাগিয়ে দেয় বা অন্যান্য উপহার দেয়। আবার অনেক কোম্পানি সরাসরি বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর আগে সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে তাদের ওপর বাড়তি দামের বোঝা চাপিয়ে দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব নেয়ার পরই অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত অভিযানে অনেক হাসপতাল ও ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে। এই পর্বটি শেষ হওয়ার পর তিনি ওষুধের দাম নিয়ে বিরাজমান অস্থিরতা নিরসনেও এগিয়ে আসবেন সেই প্রত্যাশা দেশের দরিদ্র রোগীদের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত