ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুঘটনাস্থলে উৎসুক জনতা

ভিড় এড়াতে বিধি প্রণয়নের বিকল্প নেই
দুঘটনাস্থলে উৎসুক জনতা

দেশের যে কোনো স্থানে আগুন, ভূমিধস, বিস্ফোরণ, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটলে, সেখানে হঠাৎ করে জনতার ভিড় জমে যায়। এসব মানুষ নিছক সেখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখতে থাকে। কেউ কেউ মোবাইলে সেখানকার চিত্রধারণ করে। কেউ কেউ ভিডিও করে। গণমাধ্যমের কর্মীরাও তা সরাসরি প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া ইউটিউব যারা চালান তারাও ভিডিও করেন। এতে করে দুঘটনাস্থলে মানুষের জটলা বাড়তে থাকে। ফলে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। সাধারণ ও অপ্রয়োজনীয় মানুষ কেন দুঘটনাস্থলে গিয়ে ভিড় করবে, সেই মনস্তাত্বিক কারণ খুঁজে বের করতে হবে। অনাবশ্যক ভিড়ের কারণে দমকল বাহিনী ও পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উৎসুক জনতাকে নিবৃত্ত করার জন্য কোনো আইন বা বিধি প্রণয়ন করা যায় কি না, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। রাজধানীর বেইলি রোডে গত বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগার পর ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কাজ ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু ঘটনাস্থলেই নয়, আগুনের ঘটনায় হতাহতদের বহন করা অ্যাম্বুলেন্স যখন গভীর রাতে হাসপাতালে পৌঁছায়, সেখানে জরুরি বিভাগে প্রবেশ করতে গিয়ে জনতাকে সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের সুবিধার্থে জরুরি বিভাগের বাইরের গেটে থাকা অস্থায়ী দোকানগুলো পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তুলে দেয়ার পরও ‘উৎসুক মানুষের’ ভিড়ে অ্যাম্বুলেন্সকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অনেকক্ষণ। এ সময় আনসার সদস্যরা হ্যান্ডমাইকে বার বার করে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও জনতা সে আহ্বানে গুরুত্ব দেয়নি। এর আগেও রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘উৎসুক জনতা’। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তেমন তৎপর দেখা যায় না। দাঁড়িয়ে ভিডিও করা, সাহায্য করার আগ্রহ থেকে ভিড় জমানো এ যেন স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড হয়ে উঠেছে। অথচ মূল কাজটি যে ব্যাহত হচ্ছে, তা কারোর চিন্তাতে নেই। লোকজনকে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন- ভোর, সকাল কিংবা মধ্যরাত যখনই আগুনের ঘটনা ঘটে, তার পরপরই উৎসুক জনতার ভিড়ে আগুন নেভানোর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। আগুন লাগার পর কত দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, সেদিকেই বেশি তৎপর থাকেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয় আগুন নেভানোর কাজ। ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে মাইকে কিংবা স্থানীয় ব্যক্তিরা, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উৎসুক জনতাকে ভিড় না করতে বললেও তারা শোনে না। বেইলি রোডের ঘটনায় দেখা যায়, আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনটির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন ভেতরে আটকে পড়াদের স্বজনরা। এ সময় উৎসুক মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ে আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ের কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হওয়ায় এক পর্যায়ে ভবনটির সামনে থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। তবে দুর্যোগব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ দিয়ে জনতার ভিড় ঠেকানো যাবে না। এ জন্য একটা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে যদি একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়, তবে যেখান থেকে মানুষ সব তথ্য পাবে। তাহলে হয়তো ভিড় এড়ানো সম্ভব। আহতদের মধ্যে যাদের হাসপাতালে নেয়া হয়, তাদের নামণ্ডঠিকানা মাইকে ঘোষণা করা হলে অযথা ভিড় কমবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাদের অভিমত ‘যেকোনো দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় যাওয়ার আগে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়। তবে তারা সেখানে পৌঁছানোর আগেই ভিড় হয়ে যাওয়ায় তাদের কাজ ব্যাহত হয়। দমকল বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভানো ও উদ্ধারের দায়িত্ব পালন করেন। ভিড় সামলানোর দায়িত্ব তাদের নয়।’ ঢাকার মতো যানজটের শহরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে কিছুটা সময় লাগে উল্লেখ করে পুলিশ বলছে, ‘উৎসুক জনতাকে শৃঙ্খলায় আনতে পুলিশ সচেষ্ট থাকে। ঘটনাস্থলে অশিক্ষিত, শিক্ষিত নানা ধরনের মানুষ আসেন। তাদের সচেতন হতে হবে। যেখানে পুলিশের করণীয় নেই, সেখানে শুধু কৌতূহলবশত ভিড় বাড়ানো ঠিক না, সেটা বুঝতে হবে। সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। শৃঙ্খলায় রাখতে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে ব্যারিকেড দেয়, মানববন্ধন তৈরি করে ঘিরে রাখতে চেষ্টা করা হয়। আবার অনেকে আপনজনের জন্যও আসে। ফলে ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে অনাকাঙ্ক্ষিত জনতার ভিড় কোনো অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত নয়। এ জন্য একটা বিধিবিধান প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত