ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রেস্টুরেন্টে জীবনের নিরাপত্তা

নিয়মিত করা হোক পুলিশি অভিযান
রেস্টুরেন্টে জীবনের নিরাপত্তা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘রেস্তোরাঁ পাড়া’ গড়ে উঠেছে। ব্যস্ত সড়কের পাশ ঘেঁষে বহুতল ভবনজুড়ে রয়েছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্ট হিসেবে ভবনগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যতটুকু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার, অধিকাংশ ভবনে তা নেই। বহুতল ভবনে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা বা সেখানে গিয়ে আহার করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা নিয়ে এখন চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। খেতে গিয়ে মৃত্যু ডেকে আনার ঝুঁকি তো অনেকেই নিতে চায় না। রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মানুষের মধ্যে এই আতঙ্ক বিরাজ করছে। উৎসবমুখর পরিবেশে খেতে গিয়ে যদি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়, তাহলে সেই খাবার খেয়ে কেউ স্বস্তি পাবে না। শুধু বেইলি রোডেই নয়, রাজধানীর অন্যান্য শপিং সেন্টার নামে খ্যাত বহুতল ভবনে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বাহারি নামের রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাসের বড় বড় সিলিন্ডার। ওসব ভবনে ওঠাণ্ডনামার জন্য শুধু একটি সিঁড়ি ব্যবহার করা হলেও সেটাও বেশ সরু। রেস্টুরেন্টেগুলোর ম্যানেজাররাও নিরাপত্তা ঘাটতির কথা অপকপটে স্বীকার করে নিচ্ছে। তবে তাদের আক্ষেপ ভবনের ম্যানেজার কিংবা ভবনের মালিক এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে না। জীবিকার তাগিদে তারা এসব রেস্টুরেন্টে কাজ করে থাকে। কোনো কোনো রেস্টুরেন্টে লাইনের গ্যাস থাকে, আবার কোনো কোনোটিতে সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওটা নিয়ে কয়েকদিন আলাপ-আলোচনা হয়। গণমাধ্যম সরব হয়ে উঠে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা হাওয়ায় মিলে যায়।

আবাসিক ভবন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা এবং সেখানে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সিলিন্ডারের ব্যবহার নিয়ে কেউ কেউ হয়তো ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন। তবে সেটিও বেশি দিন স্থায়ী থাকে না। সাধারণত মানুষ সবসময় রেস্টুরেন্টে খেতে যান না। কোনো উপলক্ষ্যে হয়তো রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। রেস্টুরেন্টে যদি প্রাণহানির শঙ্কা থাকে, তাহলে মানুষ রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে চিন্তাভাবনা করবে- এটাই স্বাভাবিক। স্থপতিদের অভিমত, ‘রেস্টুরেন্ট আর অফিস ভবনের নকশা এক হতে পারে না। একটি ভবনের নকশা করা হয়, তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। কোনো ভবন অফিসের জন্য তৈরি করে রেস্টুরেন্টের জন্য ভাড়া দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ তো এতকিছু বোঝে না যে, বিপদ হলে কী হতে পারে। তারা নামি-দামি রেস্টুরেন্ট দেখে সেখানে যায়। রেস্টুরেন্টে চুলা ও সিলিন্ডারের ব্যবহার থাকায় বহুতল ভবনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য স্পেস বা জায়গা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্নিনিরাপত্তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার উপর জোর দেন স্থপতিরা।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান নিজেও জানিয়েছেন, ‘সমিতির পক্ষ থেকে আমরা সবসময় সবধরনের নিরাপত্তা মেনে ব্যবসা করার কথা বলে আসছি। কিন্তু অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক এসব নিয়মণ্ডকানুনের কোনো তোয়াক্কা করে না। বাণিজ্যিক ভবনে রেস্টুরেন্টের বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বেইলি রোডে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, এরকম ঘটনা আবার না ঘটুক; এটাই আমরা সবাই চাই। কোথাও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে শুধু নোটিশ না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যার ত্রুটি থাকবে, তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সেটা যদি কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হয়, তবে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে, আর যদি কোনো সংস্থা বা ভবন মালিকের বিরুদ্ধে হয়, তবে সেটা তার বিরুদ্ধে। সবকিছু বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে, আর সেটার মাধ্যমে মানুষের জীবন চলে যাবে, এটা হতে পারে না।’

তবে একটি স্বস্তিকর খবর হচ্ছে- রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, মিরপুর ও উত্তরার প্রায় অর্ধশত রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব খাবারের দোকানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কয়েকটি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক ও কর্মীসহ অন্তত ২২ জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে এসব রেস্টুরেন্ট-ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা দেখতেই অভিযান চালানো হয়। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা থাকবে, এসব রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে যেন সারা বছর এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকে। অভিযোগ করা হয়, কোনো কোনো হোটেল-রেস্টুরেন্টে মানহীন খাবার পরিবেশন করা হয়। আবার কোনো কোনো রেস্টুরেন্টে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ভোক্তা অধিদপ্তর হোটেল-রেস্টুরেন্টে ভেজাল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখভাল করার কাজটি করে। তবে এখন থেকে তাদের হোটেল-রেস্টুরেন্টে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও দেখা দরকার হয়ে পড়েছে। মানুষের মনের মধ্যে যদি হোটেল-রেস্টুরেন্ট নিয়ে ভীতি কিংবা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে মানুষ সেখানে খেতে যাবে না। ফলে এই খাতের ব্যবসায় ধস নামবে। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকদের অধিকতর সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত