নতুন সরকার ও মন্ত্রী পরিষদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা

অভিজিৎ বড়ুয়া অভি

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিরোধী দল যখন বর্তমান সরকারের দুর্নীতির, অনিয়মের, গণতন্ত্র ধংসের কথা বলেন, তখন কি আপনারা একবার ফিরে গিয়ে অতীতে আপনাদের কর্মকাণ্ডের কথা ভাবেন? দুর্নীতি, একনায়কতন্ত্রী আচরণ, নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা আপনাদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। আপনাদের দলীয় বর্তমান প্রধান বিদেশি কোম্পানির কাছে সয়ং গিয়ে কমিশন চেয়েছে। জনগণের আন্দোলনকে প্রতিহত করতে বোমা গ্রেনেড মেরে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের জনগণকেই আপনার হত্যা করেছেন, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ২৪ জনকে নিহত এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত করেছেন। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভি রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী। যার ফলে আপনারা নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস করেছেন। বৌদ্ধদের জ্বালিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, পাহাড়ে অশান্তি, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার ভিশন, মিশন ও কৌশল ছিল আপনাদের। যে আমেরিকার হাত ধরে আপনারা ক্ষমতায় আসতে চান, তারাই ইসরাইলের হাত ধরে নিরীহ ফিলিস্তিন মা, শিশু, মুসলিম নাগরিকদের হত্যা করছে, আশ্চর্যজনকভাবে আপনারা সে বিষয়ে নীরব। কারণ আপনাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আর ইসরাইল, আমেরিকার বৈশিষ্ট্য একই। সুতরাং, আমাদের কাছে ভোট দিতে গিয়ে একমাত্র বিকল্প আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানের ইমরান খান প্রমাণ করেছে জনগণ সাথে থাকলে শক্তিশালী আর্মি, প্রশাসন, সরকারকে পরাজিত করে নির্বাচনে জেতা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যেতে ভয় পায়, কারণ তাদের সাথে জনগণ নেই।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পাঁচবার সরকার গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের প্রমাণ আমরা দেখছি। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও বিভিন্ন ঋণ ইস্যু থাকলেও উন্নয়ন হয়েছে, হবে। আমার নির্বাচনি এলাকা আনোয়ারা চট্টগ্রাম থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছিলেন। আমরা খুবই আনন্দিত হই। আমাদের এলাকার ও চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান তিনি। তিনিও মন্ত্রী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আধুনিক রূপ দেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটেল আধুনিক রূপকার তিনি। আমি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখি। জয় গান করি। পরে দেখি উনার এপিএস বেনামে আমার জমি ক্রয় করে অর্থ পরিশোধ না করে দখল করে নিয়েছে। আমি হলাম সর্বস্বান্ত, সর্বনাশগ্রস্ত। কারণ, তিনি আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছেন এপিএসদের। ফলশ্রুতিতে এলাকার মাঠের রাজনৈতিক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সাথে উনার দূরত্ব বেড়েছে। এখন জানলাম বিদেশে ওনার অর্থের পাহাড়। আমরা আশাহত হলাম। তবে সাহস করে উনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা একটির সাথে অন্যটি সামঞ্জস্যহীন। একবার বলছেন অর্থ নেননি, একবার বলছেন নিয়েছেন। উনার কথার সূত্র ধরে বলতে চাই, অবশ্যই আমরা বিদেশে অর্থ নিয়ে ব্যবসা করব। আবার সে অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করব। যা ভারত, চীন করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমাদের দেশ হতে যারা অর্থ বিদেশে নিয়ে যান তারা দেশে অর্থ ফিরিয়ে আনেন না। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জসহ নানা দেশে বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে। তারা আমেরিকার বিখ্যাত কফি হাউজে সন্তানদের নিয়ে কফি খান, আর আমাদের ভাতের পরিবর্তে আলু, কাঁঠাল খেতে বলেন। রোজার সময় খেজুর আঙ্গুর নয়, বরই খেতে বলেন। ফ্রিজে ডিমের পাহাড় করতে বলেন। পেঁয়াজ বিহীন তরকারি খেতে বলেন। তেল কম খেতে পরামর্শ দেন। আমাদের অর্থনীতি এতোই উন্নত হয়েছে, এখন মানুষ আর ভাত, পেঁয়াজ, আঙ্গুর, খেজুর, তেল কেনার সামর্থও হারিয়েছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান, কারণ দেশে স্বাস্থ্যখাত এতোই উন্নত হয়েছে যে তাদের চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হয়নি। কানের চিকিৎসাও বিদেশে করাতে হয়। স্বাস্থ্যখাত বিগত সময়ের দুর্নীতির অনেক সংবাদ আছে। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুবই ভালো মানুষ। তাই তিনি ডান আর বাম হাতে ধরে রাখেন, উচিয়ে ধরেন সচিবদের। আশা করেন উনারা সহযোগিতা করবেন। খুবই ভাল। তবে দেশে সরকার মন্ত্রী যায় আর আসে সচিব বহাল ঠিকই থাকে। বর্তমান সরকার ও মন্ত্রী পরিষদের কাছে আমাদের প্রার্থনা আগের তিন বারের অভিজ্ঞতাকে স্মরণে রেখে একটি দুর্নীতিমুক্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ, শান্তির বাংলাদেশ আমাদের উপহার দেবেন। আমরা চাই না সোনার বাংলাদেশের সোনা ছিনতাই লুটপাট হোক দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী, আমলা, রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীদের দ্বারা, আর দ্বীন বাংলাদেশ থেকে যাক আমাদের কাছে। আমরা আশায় বুক বেঁধেছি। আমরা গত পাঁচবার আপনাদের ভোট দিয়েছি, সামনেও দিতে চাই। তবে আর বিদেশে মন্ত্রীদের হাজার কোটি টাকার সংবাদ শুনতে চাই না।