সড়কে ফিটনেসবিহীন যান

মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে চাই নিরাপদ সড়ক

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে চলাচলকারী ১৮.৯ শতাংশ বাসের নিবন্ধন, ২৪ শতাংশ বাসের ফিটনেস, ১৮.৫ শতাংশ বাসের ট্যাক্স টোকেন ও ২২ শতাংশ বাসের রুট পারমিট নেই। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গতকাল এই আতঙ্কজনক বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সড়কে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলকারী প্রত্যেকটি বাসের জন্য নিবন্ধন ও তিন ধরনের সনদ বাধ্যতামূলক। তবে ৪০.৯ শতাংশ বাসকর্মী ও শ্রমিকদের মতে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক বা একাধিক বাসের নিবন্ধনসহ কোনো না কোনো কাগজপত্রে ঘাটতি আছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস শ্রমিকদের প্রতিদিন প্রায় ১১ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আর তাদের মধ্যে ৮২ শতাংশের কোনো নিয়োগপত্র নেই, ৬৯.৩ শতাংশের নেই নির্ধারিত মজুরি। যাত্রী সেবা প্রসঙ্গে সংস্থাটির দাবি, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৫.৮ শতাংশ যাত্রী, ৪৮ শতাংশ শ্রমিক এবং ৫১.৮ শতাংশ মালিক বাসের মাত্রাতিরিক্ত গতিকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২২.২ শতাংশ কর্মী/শ্রমিকদের মতে, মদ্যপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক গাড়ি চালান এবং কন্ডাক্টর/হেলপার/সুপারভাইজার বাসে দায়িত্ব পালন করেন। সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে এ হার ৪৫.৯ এবং আন্তঃজেলার ক্ষেত্রে ১৯.২ শতাংশ বলে জানায় সংস্থাটি। নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগের অভাবে চলন্ত বাসে চালকরা ফোন ব্যবহার করেন। এর ফলে অনেকসময় প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনা ঘটে বলেও জানানো হয়। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বিআরটিএ এর প্রকাশিত তথ্যের গড়মিল হয় বলে দাবি করছে টিআইবি। বিআরটিএ এর তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ২৪ জন এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী এ সংখ্যা ৭ হাজার ৯০২ জন। টিআইবির এমন আতঙ্কজনক তথ্য জানার পর মানুষ রাস্তায় কীভাবে বের হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। বাসে চলাফেরা করতে গিয়ে মানুষ যে কতটা অসহায়ত্ব বোধ করে তা নিসন্দেহে অনুমেয়। কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়- তা কেউ বলতে পারে না। যানবাহনের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সরকার যাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছে তাদের বৈষয়িক অবস্থা কেমন তা একটু খোঁজ-খবর নিলে অনুধাবন করা যাবে। যারা রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করেন তারা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন কোনো একটা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার জন্য যখন গাড়িটি রাস্তার পাশে দাঁড় করানো হয় তখন বাসের চালক ও হেলপারের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তারা রাস্তার লাইনম্যানদের মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার নাম পরিচয় ও অবস্থান জানিয়ে দেন। লাইনম্যান ‘লাইনঘাট’ করেন। আর বাসটি চলতে থাকে। যেসব যানবাহনের ফিটনেস নেই। সেগুলো রাস্তায় একেকটা দানব। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এই দানবের ভয়াল থাবায় মানুষ মারা যাচ্ছে। অকালে কিংবা পরিণত যে কোনো বয়সেরই হোক না কেন মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যাবে এটা কারো কাম্য নয়। সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করা কোনোদিনই সম্ভব নয়। তবে যাতে দুঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। আর তা করার জন্য যানবাহনের ফিটনেস, চালক ও হেলপারের লাইসেন্স প্রদান এবং তা সঠিক কি না তা পরীক্ষা করার দায়িত্ব যারা পালন করেন তাদের সক্রীয় হতে হবে। আমাদের সমাজে নকল শব্দটি অধিকাংশই ক্ষেত্রে যানবাহনে সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে আসল কাগজপত্র করেও কোনো লাভ হয় না বলে চালক ও হেলপারদের অভিমত। তারা বলছেন, নকল কাগজপত্র থাকলেও রাস্তার খরচ আছে আবার আসল কাগজপত্র থাকলেও রাস্তার খরচ থেকে কেউ বাদ যায় না। তাহলে কেন অর্থ খরচ করে আসল কাগজপত্র জোগাড় করতে হবে। আসল কাগজপত্র তৈরি করে আনতে গিয়ে আবার বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। সেই সঙ্গে রয়েছে অফিসের ভোগান্তি। তাই রাস্তার বিড়ম্বনা মেনে নিয়েই যানবাহন চালাতে হবে। চালক ও হেলপারদের এমন মনমানসিকতায় নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।