অনুমোদনহীন সোয়া ৩ লাখ ভবন

অব্যাহত রাখতে হবে আইনি ব্যবস্থা

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীতে অনুমোদনহীন ভবনের সংখ্যা সোয়া ৩ লাখ এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কি সাংঘাতিক কথা। রাজধানীতের মানুষের নিশ্চিত বসবাসের সুযোগ কোথায় পাওয়া যাবে, তা নিয়ে এখন নতুন করে ভাবতে হবে। অনুমোদনহীন ভবনগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় মানুষ প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে তাড়া করে ফিরছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় যারা অনুমোদন নিয়েছেন, এর মধ্যে ৯০ ভাগেরই নেই ব্যবহারের সনদ। যার কারণে নকশার বিচ্যুতি করে গড়ে ওঠা এসব ভবনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন একরকম নিলেও সেটি মানা হচ্ছে না। রাজউক বলছে, এসব ভবনের বিচ্যুতি নিয়ন্ত্রণে বছরে গড়ে ৫ হাজার নোটিশ দেয় তারা। গত বছর রাজউকের পক্ষ থেকে বিচ্যুতি প্রতিরোধে ১ হাজার ৮৯০টি ভবনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। আগুন লাগলে কিংবা কোনো ভবন ধসে পড়ার পর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন গণমাধ্যমে আলাপ-আলোচনার ঝড় উঠে। নানা জনে নানা পরামর্শ দেয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। অভিযান চালানো হয়। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, কিছুদিন যেতে না যেতেই সব কিছু হাওয়ায় মিশে যায়। আমাদের দেশের মানুষ অত্যন্ত সহনশীল। সেই সঙ্গে তারা সব কিছু ভুলে যায়। অপরাধী চক্রও সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। তবে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য আইনি ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে সারা বছর। সারা বছর নজরদারি থাকলে মানুষ এতোসব অবৈধ ভবন নির্মাণ করার সাহস পেত না। মানুষকে যমদূতের সঙ্গে বসবাস করতে হতো না।

২০২২ সালে গেজেটভুক্ত হওয়া রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) জরিপের তথ্যমতে, রাজউক এলাকায় প্রায় ২১ লাখ ৪৫ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একতলা থেকে বহুতলা ভবন রয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার। এসব ভবনের মধ্যে মাত্র ২ লাখের অনুমোদন রয়েছে, বাকি প্রায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ভবনের কোনো অনুমোদন নেই। পাশাপাশি ১৬ লাখের বেশি সেমিপাকা ভবনও অবৈধ। রাজউকের আওতাধীন এলাকা ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৩০৫ বর্গকিলোমিটার, সাভার উপজেলা, কেরানীগঞ্জ উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ, ভুলতা ও গাউছিয়া। দুই সিটির ভেতরে যেসব স্থানে অবৈধ ভবন রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ডেমরা, বসিলা, ঢাকা উদ্যান, কামরাঙ্গীরচর, সারুলিয়া, নাসিরাবাদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান, হরিরামপুর, ভাটারা, বাড্ডা ও পুরান ঢাকা। আর ঢাকার দুই সিটির বাইরে সাভার, কেরানীগঞ্জ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শত শত ভবন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। রাজউকের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই হাউজিং প্রকল্পের নামে কেরানীগঞ্জে অর্ধশত আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ভবনে বসবাস বা ব্যবহারের আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যবহার বা বসবাস সনদ নিতে হবে।

২০০৮ সালে এই আইন চালুর পর ১০ ভাগ ভবনও এই সনদ নেয়নি বলে জানা যায়। নগরবিদ ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ব্যবহারের সনদ না নেওয়ায় নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করা যাচ্ছে না। কোনো ভবন মালিক অনিয়ম করে নকশায় পরিবর্তন আনলেও তা ধরা পড়ছে না। ফলে নির্মিত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলেও তা চিহ্নিত হচ্ছে না। আর ভবন ব্যবহার সনদ না নিলে রাজউক থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির নেই। তবে রাজউক কর্মকর্তাদের মতে হাজার হাজার অবৈধ ভবন ভেঙে ভবন নির্মাণকাজ শৃঙ্খলায় আনা রাজউকের পক্ষে সম্ভব নয়। ঢাকার ভবনগুলোর দুর্ঘটনা রোধ ও নকশা অনুযায়ী নির্মাণ নিশ্চিত করতে ‘থার্ড পার্টি এন্ট্রি (টিপিই)’ নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব আইন ও বিধি পর্যালোচনা করে গাইডলাইনও তৈরি করবে সংস্থাটি। রাজউক সূত্রে জানা যায়, টিপিইর মাধ্যমে ভবনের ফিটনেস যাচাই করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়, ঝুঁকিপূর্ণ বা পুনর্নির্মাণ করার সুপারিশ করবে। থার্ড পার্টির পরিদর্শকদের রাজউক পরিচয়পত্র দেবে, যা তাদের ইমারত পরিদর্শনের অধিকার দেবে। তবে অনুমোদনহীন ভবনগুলোর ফিটনেস যাচাই করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত রাজউক গ্রহণ করবে। ভবনসংক্রান্ত রাজউকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা অথরাইজড অফিসার ও সহকারী অথরাইজড অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকবে ‘থার্ড পার্টি এন্ট্রি’ (টিপিই)। এই কর্মকর্তারা যেকোনো সময় টিপিইদের কার্যক্রম তদারক করতে পারবেন। এসব কার্যক্রম তদারকি কৌশল শেখাতে তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনবে রাজউক। এটা অবশ্য আশার কথা, তবে তার বাস্তবায়ন কতখানি সম্ভব তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।