ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কথাতেই সুখ, কথাতেই ব্যথা!

রাজু আহমেদ
কথাতেই সুখ, কথাতেই ব্যথা!

পরস্পরের খাতির যতটুকু তার নির্ধারক ওই কথা, অখাতির যা তাও ঠিক করেছে ওই কথা! তোমার কথাতেই কারো দিন ভালো কেটে যেতে পারে, আবার কথাতেই শত্রুতাও বাড়াতে পারে! দিনক্ষণ-সম্পর্ক গোল্লায় ফেলতে পারে কু-কথা। সম্পর্ক টাকা দিয়ে মাপা যায় না; কিন্তু কথা দিয়ে মাপা যায়! মনে থাকবেন নাকি দূরে ভাগবেন তা কথাই নির্ধারণ করে। অর্থের লেনদেনে শত্রুতা, স্বার্থের বলিদান যত নগ্নভাবে ঘটে তার অন্তরালে কথাই থাকে। খোঁচা মেরে কথা বলে, বাঁকা কথা বলে, বাজে কথা বলে কিংবা অসম্মানের কথা বলে কারো সঙ্গেই খাতির টেকানো যায় না। বড়জোর দেহ ঠেকিয়ে রাখা যায়! দূর-বহুদূরে থেকেও কথা দিয়ে মানুষকে ধরে রাখা যায়! আবার পাশাপাশি থেকেও কথার কোপে হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়া যায়। হৃদয়হীনের মধ্যেও জাগানো যায় ভালোবাসা। কথা দিয়ে মানুষকে আঘাত দেয়ার মত নির্মম ব্যথা শারীরিক আঘাতেও লাগে না। কথা শুনে কত মানুষ কেঁদেছে, মন খারাপের হাটবার বসিয়েছে তার ইয়ত্তা আছে? মনে করে দেখুন, আপনার বড় বড় ব্যথাগুলো কারো না কারো কথা থেকেই পেয়েছেন। কেউ কেউ দুর্বলতায় আঘাত করে, অক্ষমতায় খোঁচা দিয়ে, অপূর্ণতায় ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলে পৈশাচিক আনন্দ পায়। যারে ব্যথা দেয়া হয়, তার মন কীভাবে বিষাদ মাখে, সে খবর আর ক’জনে রাখে? কথার হার-জিতে কখনো কখনো জয়ের চেয়ে পরাজয় বড় গৌরবের হতে পারে। কত ধরনের কথা বাজারে চালু আছে! কু-কথা, বাজে কথা, বাঁকা কথা, কটু কথা, তীর্যক কথা, অশ্লীল কথা, অপবাদের কথা এবং মিথ্যা কথা! জিদের কথা, অহংকার-অহমিকার কথা কিংবা দম্ভে ভরা কথা আমাদের প্রাত্যহিক সম্পর্কগুলোকে রোজ খারাপ করে। মানুষ মানুষের বন্ধু হতে ভালো কথা বলতে হয়। যে কথায় আন্তরিকতা থাকে, সৌহার্দ্য ও সদয় থাকে, বিনয় এবং সত্য থাকে সেই কথাই সম্পর্ককে দৃঢ় করে। কথা ছাড়া কেউ এসে আপনা-আপনি শরীরে আঘাত দিতে পারে না, কিংবা অধিকার ছিনিয়ে নিতেও পারে না। কত কথা যে ভেতরের ব্যথা বাড়িয়ে-জাগিয়ে তোলে তা ধরাধামের ক’জনে বোঝে? অথচ যেটুকু অর্জন তাও ওই কথার কল্যাণে, যা কিছু জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাও ওই কথার বদৌলতে! কথাই তো মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে! যে মানুষ মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলে, সে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারে না। কাউকে ঠকায় না। যিনি কথায় শুদ্ধ তিনি মন-মানসিকতাতেও পবিত্র। মানবিকতাতেও উজ্জ্বল। যার মুখে অশ্লীলতা সে চরিত্রে সাধুতা পুষবে- সে আশা আহম্মকের! কথা মানুষের জ্ঞানের মাপকাঠি। কথাতেই বিনয় আর কথাতেই চূড়ান্ত পরিণতি। কারো মধ্যে অহংকার থাকলে, দম্ভ পুষলে সেটা কথাতেই প্রকাশ পাবে। একজন মানুষের মন কেমন, সে কী চায়, তার উদ্দেশ্য কী? সেটার আছড় কথাতেই থাকবে। তবে এখানে একটুখানি কিন্তু আছে! নেশাখোর-ভণ্ডরাও কথায় সাধু। গাঁজাখোরের কথা শুনলে মনে হবে, এদের চেয়ে সাধু মানুষ ভবে আর দ্বিতীয়টি জন্মায়নি। ভণ্ড এবং ভালোর পার্থক্যটুকু বোঝার সক্ষমতা ও শিক্ষা থাকতে হবে। মুখের ভাষার সঙ্গে সঙ্গে চোখের ভাষাও পড়তে হবে। তবে যারা ব্যথা দিয়ে কথা বলে, জিহ্বা দিয়ে আঘাত করে আনন্দ পায়, তারা যে ভালো মানুষ নয়, সেটার ফতোয়া জানতে সাধুর ঢেরায় যেতে হবে না। বিবেক কাজে লাগালেই রায় দিয়ে দেবে। কে আপন, আর কে পর! আমাদের অনেক কিছুর ঘাটতি আছে। অক্ষমতার খতিয়ানও দীর্ঘ। তবে কথা বলার সময় হাসিমুখে মিষ্টি কথা বলার চেষ্টাটুকুন সবার মধ্যেই থাকা উচিত। কথা দিয়ে কাউকে আঘাত করলে সে ব্যথা ভুলতে পারা কঠিন। আবার যারা কথা দিয়ে বুকে টানে তাদেরও ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সম্পর্কের মধুরতা শুধু বাহুডোরে জড়িয়ে থাকার মধ্যে থাকে না বরং মিষ্টি কথার উষ্ণতাতে মধুরতা বেড়ে যায়। মনের সঙ্গে পিষ্টে থাকে। আমরা বোধহয় কথার জাদুকর হতে পারি। তবে যেখানের কথা সেখানেই হোক! অপাত্রের কথায় ধ্বংস ঘটায়! কথা হোক সততায়, চলা হোক একতায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত