ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গ্রামভিত্তিক পণ্য ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে হবে

রেজাউল করিম খোকন
গ্রামভিত্তিক পণ্য ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে হবে

সরকার এখন গ্রামভিত্তিক পণ্য ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ‘একটি গ্রাম, একটি পণ্য’র এই স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামে তৈরি পণ্যকে দেশে-বিদেশে মূলধারার বাজারে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের তৈরি হস্তশিল্প ও খাদ্যসামগ্রীর বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বছরব্যাপী একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার স্লোগান- ‘একটি গ্রাম, একটি পণ্য’। এর মাধ্যমে গ্রামভিত্তিক পণ্যকে মূলধারার বাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে। পণ্যের সঙ্গে পণ্যের কারিগরদেরও মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোন গ্রাম থেকে কোন কারিগর পণ্যটি তৈরি করল; তা সবার সামনে তুলে ধরা হবে। উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে হলে পণ্য তৈরির কারিগরদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। গ্রামে তৈরি পণ্যের কারিগর ও তৈরির স্থান চিহ্নিত করে তা দেশি-বিদেশি বাজারে পৌঁছে দেওয়া হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে ১২৮টি পণ্য নিয়ে জীবিকায়ন শিল্পপল্লী গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ছয়টি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে- পল্লীতে টেকসই জীবিকায়ন-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পল্লী পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রসার, পল্লী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি, উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন ও বিপণন সংযোগ তৈরি। সরকার বর্তমানে বিআরডিবির পল্লীতে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদিত পণ্যের সুসংহত বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পে এক পণ্যে এক পল্লীভিত্তিক জীবিকায়ন শিল্পপল্লী গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮ জেলায় ২২০টি উপজেলায় ২০২৬ সালের মধ্যে ১২৮টি পণ্যভিত্তিক জীবিকায়ন শিল্পপল্লী গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পল্লি পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, বহুমুখীকরণ, উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজার সম্প্রসারণ ইত্যাদি কার্যক্রমের সমাহারে জীবিকায়ন শিল্প পল্লি উন্নয়নে নবযুগের সূচনা করবে। এটি বাস্তবায়িত হলে পল্লি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পল্লি অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এলাকাভিত্তিক সুফলভোগীদের জন্য তাদের ভৌগোলিক এলাকায় উৎপাদিত পণ্যের জন্য ঋণের পরিমাণ বাড়ানোসহ কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ উন্নয়ন অপরিহার্য। আর সব দেশেরই গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। প্রতিটি রাষ্ট্রই কৃষি উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কৃষির উন্নয়ন প্রকারান্তরে কৃষকের উন্নয়ন। কৃষিভূমির প্রতিটি ইঞ্চিতে উন্নত বীজ ও সার ব্যবহারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যে নিবিড় চাষাবাদ করা হয় তাকে কৃষি বিপ্লব বলা হয়। গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা শহরাঞ্চল থেকে ভিন্নতর হলেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াসহ প্রতিটি বাড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা করা গেলে তা উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনের সহায়ক হয়। এর সাথে সাথে যেটি প্রয়োজন তা হলো স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। বাংলাদেশের সংবিধানে গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিককরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশ অভ্যুদয় পরবর্তী দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। এখন গ্রামের পথঘাট অনেক উন্নত। এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলো পাকা রাস্তার মাধ্যমে শহরের সাথে সংযুক্ত। বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা সৌরবিদ্যুতের বদৌলতে আধুনিক জীবনযাত্রার সব উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে রান্নার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের গৃহভিত্তিক প্রকল্প তিন দশকের অধিক সময় আগে যাত্রা শুরু করলেও এ ব্যাপারে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় কৃষিভূমির পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু উন্নত বীজ ও সার এবং বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের কারণে কৃষিজ প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশের কৃষকরা এক বছর যে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হয় পরবর্তী বছর একই ফসল উৎপাদনে উদ্যোগী হয়। এভাবে একজনকে লাভবান হতে দেখে অনেকে একই ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এভাবে ফসলের বাড়তি উৎপাদনের কারণে মূল্য পড়ে গিয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলের উৎপাদন, বিপণন ও চাহিদা বিষয়ে কৃষকের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে তাদের ক্ষতির আশঙ্কা কমে। এমন অনেক মসলাজাতীয় ফসল রয়েছে যেগুলোর উৎপাদন আমাদের দেশে কম অথবা দেশে একেবারেই উৎপন্ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এলাচি, দারুচিনি, গোলমরিচ, জিরা, জাফরান, জায়ফল, জয়ত্রী, পোস্তদানা প্রভৃতি। এসব মসলাজাতীয় ফসল আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত এবং সার্কভুক্ত রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রচুর উৎপন্ন হয়। বর্তমানে মাটির পরিচর্যার মাধ্যমে পৃথিবীর এক অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। অর্থকরী এসব ফসলের আবাদ করলে এর মাধ্যমে যে আয় হবে তা কৃষকদের সচ্ছল জীবনযাপনে সহায়ক হবে। সুতরাং আমাদের সরকার ও কৃষি বিভাগের উচিত কৃষকদের সে লক্ষ্যে উৎসাহী করে তোলা। আমাদের দেশে যেসব অঞ্চলে আম, লিচু, কমলা, মাল্টা, বাউকুল, আপেল কুল, আমড়া, বেল, কতবেল, কাজী পেয়ারা, আঙ্গুর প্রভৃতি উৎপন্ন হয় সেসব অঞ্চলের কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় পুকুর ও রাস্তার ধারে আবার কৃষি জমিতে এসব গাছ লাগিয়ে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। এ সফলতা তাদের বাড়তি আয়ের পথ করে দিয়েছে। আমাদের দেশে এখনো নগর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। যদিও আমাদের সংবিধানে এ বৈষম্য দূর করার জন্য কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিককরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ওপর সমধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে সরকারি বেতনভুক্ত যেসব ব্যক্তি জড়িত তাদের কর্মের প্রতি অনীহা, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, দুর্নীতি, অদক্ষতা, আন্তরিকতা, একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততার অভাব প্রভৃতি এ বিষয়ক সরকারের প্রতিটি কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। এ কথাটি সত্য যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন উচ্চ ফলনশীল বীজ ও বিভিন্ন সারের আনুপাতিক ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে উৎপন্ন হয় এমন সব সফলের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। এমন অনেক ফসল আছে যেগুলো মৌসুমি কিন্তু বৈজ্ঞানিক পন্থায় চাষের কারণে সেসব ফসলও এখন সারা বছর উৎপন্ন করা সম্ভব। তা ছাড়া অতীতে যে ভূমিতে বার্ষিক একটি ফসল হতো এখন একই ভূমিতে বার্ষিক দুটি বা ক্ষেত্রবিশেষে তিনটি ফসলের চাষ করা হচ্ছে। আবার একই ভূমিতে একটি ফসলের ফাঁকে ফাঁকে আরেকটি ফসলের চাষ হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ধান ও মাছের চাষ একই ভূমিতে একসাথে করা হচ্ছে। এ ধরনের উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রতিটি ফসল ও মাছ উৎপাদনে বৃদ্ধি ঘটালেও কৃষকপর্যায়ে পাইকারি বিক্রয়মূল্য এবং ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ব্যাপক ফারাক থাকায় বাড়তি উৎপাদন ও বাড়তি মূল্য কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারছে না। বর্তমানে আমাদের বেশকিছু কৃষিপণ্য বিদেশে রফতানি হয়। এ সব পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্য বিধায় রফতানিকারকদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়। যদিও এ প্রণোদনার একটি অংশ কৃষকের পাওয়ার কথা; কিন্তু আজ আমাদের দেশের কৃষক সে প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত। বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী প্রতিটি সরকারই গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লবের লক্ষ্যে বার্ষিক রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট প্রণয়নকালে যথাযথ বরাদ্দ দিতে সচেষ্ট থেকেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বিরাট অংশ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি ব্যক্তিরা লুণ্ঠন করায় তা কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারেনি। আর এ কারণেই আমাদের গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব দীর্ঘদিন ধরে একটি আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে কৃষির পাশাপাশি সমভাবে কুটির শিল্প স্থাপন ও অন্যান্য শিল্প কারখানার বিকাশ সাধন করা গেলে গ্রামের মানুষ জীবিকা ও বাড়তি আয়ের অন্বেষণে শহরমুখী হবে না। এসএমই উদ্যোক্তাদের সক্ষম করে গড়ে তোলা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বর্তমান চাহিদার আলোকে প্রযুক্তি ব্যবহার, উদ্ভাবন, জ্ঞান বিনিময় ও বিপণন বিষয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া কটেজ ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের জন্য কর-ভ্যাটের আলাদা নীতিমালা করা প্রয়োজন। সারা বিশ্বেই অর্থনীতি এমএসএমই খাতের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদহার, কাঁচামালের স্বল্পতা প্রভৃতি সংকটের মধ্যেও এসএমই খাত আশা দেখাচ্ছে। তবে এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নীতি ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা প্রয়োজন। এমএসএমই খাতের সংজ্ঞা মেনে কর ও ভ্যাট আদায় করা হয় না। এতে উদ্যোক্তারা অসুবিধায় পড়েন। দেশে রিজার্ভ বর্তমানে কিছুটা কম রয়েছে। এ জন্য উদ্যোক্তাদের রপ্তানিমুখী হওয়া প্রয়োজন। তবে পণ্যের মানের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্রান্তিক ও নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ঋণের ক্ষেত্রে বর্তমানে গ্রুপ গ্যারান্টির মতো অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে না জানার কারণে উদ্যোক্তারা এসব সুবিধা নিতে পারেন না। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাবে নারী উদ্যোক্তারা সঠিক সময়ে ঋণ নিতে পারেন না। গ্রামভিত্তিক শিল্প উন্নয়নে জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হলো কৃষি। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ এবং শ্রমশক্তির ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। গ্রামের উন্নয়নের কথা বলতে গেলে প্রথমে আসে কৃষি উন্নয়ন- কৃষি ভিত্তিক শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের উন্নয়ন। কৃষি এখনো দেশের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা এবং অধিকাংশ জনগণই জীবন জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কাজেই কৃষিভিক্তিক শিল্পে স্বল্পমাত্রার সঞ্চালনা ও প্রেষণাই আমাদের গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক বিস্ফোরণ সৃষ্টি করতে এবং গ্রামীণ জনগণের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষিশিল্পের উন্নয়ন জরুরি। এ খাতকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করার জন্যই কৃষি সেক্টরের উন্নয়ন স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার অর্জন করেছে। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে টেকসই খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। পরিবর্তিত পরিবেশে কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন ও টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিষয়গুলো হলো- কৃষকের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ অথবা বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক এবং জমি চাষের, ফসল কাটার ও ফসল মাড়াই কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ এবং সরবরাহ নিশ্চিত করা। সেচের অভাবে যাতে কোনো জমির ফসল নষ্ট না হয় সে জন্য সেচসুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দেশের সব পতিত জমি কৃষিযোগ্য জমিতে পরিণত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ এক জমিতে চার ফসল উৎপাদন, দানাদার বিভিন্ন ফসল ছাড়াও ফলমূল, বাদাম, ডাল ও তেলজাতীয় শস্য, সবজি চাষ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও মাছ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলা। নগর কৃষি ও ছাদ বাগানে ফল ও সবজি চাষের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে বাগান পরিকল্পনা ও সৃজন করা প্রয়োজন। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের আগাম তথ্য প্রদানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কৃষিকাজে ব্যবহৃত কৃষি উপকরণের দাম বাজারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা। কারণ উচ্চমূল্যে কৃষি উপকরণ কিনলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে যাবে। কৃষকের উৎপাদিত ফসল যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে উৎপাদিত ফসলের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। কৃষককে কৃষিকাজে খাদ্যশস্য উৎপাদনে উৎসাহিত করার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে তাকে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকারিভাবে বেশির ভাগ ফসল ক্রয়, গুদামজাত ও বিক্রির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তা ছাড়া অনলাইন পোর্টাল করে অথবা ফেসবুক গ্রুপ করে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এ ছাড়া কৃষি খাতে আধুনিকায়নে খরচ কমাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। কৃষি খাতে আরো বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন প্রয়োজন। স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশের পথে মূলধারার কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নে ও তৃণমূল উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামভিত্তিক পণ্য ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত