ঢাকা ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইফতারি প্রদর্শনের সামগ্রী নয়!

রাজু আহমেদ
ইফতারি প্রদর্শনের সামগ্রী নয়!

॥ এক ॥

বোধহয় ভুলে গেছেন, রোজাদারকে ইফতারি করানোর মধ্যে পুণ্য! তবে দেখানোর মধ্যে কী পাপ? জানি না। আপনার বাসায় কী কী খাবার তৈরি করলেন, সেটা দেখানো অনেকটাই অরুচিকর ব্যাপার! কাউকে দেখাতে মন চাইলে তাকে পার্সোনালি দেখাতে পারেন। যেহেতু সুযোগ আছে! আপনি যা যা তৈরি করেছেন, তা যদি আমার ইফতারির মেন্যুতে না থাকে, আমার সামর্থ্যে না কুলোয় এবং তাতে আমার যদি মন খারাপ হয়, যদি লোভ জন্মে, যদি নিজের ওপর ধিক্কার আসে, তবে সেই দায় আপনার ওপরে বর্তাবে! শুধু রমজানেই নয় বরং কখনোই খাবারের ছবি-ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করা কিছুটা আপত্তিকর ব্যাপার! তাও দু’একবার বিশেষ অকেশনে এটা করা যেতে পারে; কিন্তু কেউ যদি খাদ্য বিক্রেতা না হয়, তবে রোজ রোজ খাবারে ছবি পাবলিক পরিসরে প্রদর্শন না করাতেই কল্যাণ। নিশ্চয়ই যারা শাকপাতা দিয়ে খেতে বাধ্য হয়, তারা তাদের অক্ষমতার হালতকে দেখিয়ে বেড়ায় না! যারা নিজের রান্না করা খাবার দেখায়, তারা এই সমাজের বিত্তশালী! কখনো কখনো স্বাভাবিক প্রদর্শও অহংকারের পর্যায়ে উপনীত হয়। হয়তো অজ্ঞাতেই হয়। মনের মধ্যে জটিলতা নেই, তারপরেও এটা হতে পারে! সুতরাং সতর্কতাই তো বিবেকের সৌন্দর্য! সিয়াম মানে সব ইন্দ্রিয়ের পানাহার থেকে বিরত থাকা। আমার লোভের সঙ্গে যেসব ইন্দ্রিয় সরাসরি জড়িত, সেগুলো যদি আপনার প্রদর্শনীকৃত খাবারের লোভে জাগ্রত হয় তবে সে দায় আপনার। কারো মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের সভ্যতা থাকলেও সে খাদ্যের প্রদর্শনীতে বাহাদুরি করতে পারে না।

যেখানে ভূখা মানুষের দেখা মেলে, যেখানে আমিষহীন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এবং যেখানে সামর্থ্যহীন মানুষ খাদ্যের জন্য লড়াই করছে, সেখানে আভিজাত্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য তো দূরের কথা, ইফতারির আগে-পরে শরবত কিংবা বেগুনির ছবি দেখানোও বিবেকহীনতার পরিচয়! সিয়াম মানে শুধু প্রচলিত খাদ্যাভ্যাস থেকে বিরত থাকা নয় বরং পাপাচার এবং কামাচার থেকেও নিজেকে দূরে রাখা। অথচ যদি ঘুষ-দুর্নীতির অর্থে রিজিকের বন্দোবস্ত হয় এবং সেসব ভক্ষণ করে রোজা রাখা হয়, তবে তা কুকুরের উপোষ থেকেও নিকৃষ্ট! এমন উপোষের ফুটো পয়সাও মূল্য নেই। অহংকার-দম্ভমুক্ত, লোভ-ঈর্ষামুক্ত জীবন-যাপন করতে না পারলে, সে রোজা আবার কাজা-কাফফারাসহ আদায় করতে হবে। ভোগের অহমিকা থেকে মুক্ত হয়ে ত্যাগের শৌর্যে জীবনের নতুনভাবে সাজানোর রমজানই তো মোক্ষম সময়। কাউকে ইফতারি করাতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই! তবে সামর্থ্যের মধ্যে ইফতারি করাতে পারলে পুণ্যের অন্ত নেই। আপনার আচরণে অন্যকোনো রোজাদারদের ক্ষতি হয় কি না, শুদ্ধতাণ্ডপবিত্রতা নষ্ট হয় কি না, সেসব ব্যাপারে একটু-আধটু নজর রাখতে হবে। কথা ও কাজ এমন হবে যা কল্যাণের পথে ধাবিত হয়। অশ্লীলতার পরিত্যাজ্য না হলে, অন্যায়-দুর্নীতি বন্ধ না করলে সেই উপোষ অনেকটাই বেহুদা! সিয়ামের পবিত্রতার অন্যতম অনুষঙ্গ হালাল রিজিক! লোভ থেকে বিরত থেকে ভোগ কমিয়ে দেওয়া।

॥ দই ॥

এই রমজানে মোটামুটিভাবে খেজুর বর্জন করেছি! বাজারে গিয়ে বুঝলাম যা যা বর্জন করা দরকার সেসবের সবগুলো বর্জন করলে আমি একা হয়ে যাবে! রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসিত। তবে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অসাধু ব্যবসায়ীদের লম্বা হাতের ক্ষমতা এবং এক মাসেই পুরো বছরের লাভ ভাগিয়ে নেওয়ার মানসিকতায় সাধারণ মানুষ অনেকটাই জিম্মি! ধরপাকড় হলে বুঝতে পারি, এলাচিতে ডবল ব্যবসা করছে, আগুন লাগলে জানতে পারি এক কারখানায় কী পরিমাণ চিনি মজুত ছিল! উৎপাদক উৎপাদন খরচ জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে এবং ভোক্তার বাজারের ব্যাগ হাতে দেহ-দিল কাঁপছে। মুনাফা মধ্যস্বত্বভোগী এবং চাঁদাবাজদের পকেটে! ফলাফলে, সরকারের অনেক আশ্বাস ভঙ্গের বাস্তবতায় জনগণ আস্থাহীনতার মধ্যেই সাহরি খাচ্ছে!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত