ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার বিপথে নিচ্ছে তরুণ সমাজকে

নীলকণ্ঠ আইচ মজুমদার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার বিপথে নিচ্ছে তরুণ সমাজকে

বর্তমান প্রেক্ষাপটের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি বিষয় হলো- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এইসব যোগাযোগমাধ্যমের সব প্রক্রিয়াই সবস্তরের মানুষের মধ্যে এমনভাবে চেপে বসেছে, যেন একদিনও একে বাইরে রেখে বেঁচে থাকা সম্ভব না। প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তন হচ্ছে, এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এইসব সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারের রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপস। এই অ্যাপসগুলোর নাম এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে যে তা একেবারে আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে মিশে গেছে। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে আমরা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করে আসছি। বিভিন্ন রকমের কার্য সম্পাদনের জন্য এই সব যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তবে এর ব্যবহারের ধরন যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। প্রত্যেকটি জিনিষের ভালো মন্দ দুটো দিক থাকতে পারে। মূলত এর ব্যবহারের উপর নির্ভর করে এর ভালো মন্দ দিক। সম্প্রতি এর ব্যবহার যে হারে বাড়ছে, তা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের সেটা ভাবার সময় হয়েছে। ভাবনা যদি সঠিক সময়ে জন্ম না নেয়, তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ এ কথা বলা চলে। আমাদের সমাজের মানুষ এতটা হুজুগে কাজ করে যে, কাজ করার আগে সামান্যটুকু ভাবনাও থাকে মনে। যবু সমাজ যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে; কিন্তু সেই যুব সমাজই যখন হয়ে যাচ্ছে, অস্থির প্রবণ সেখানে তাদের কাছে ভালো কিছু চাওয়াটা অস্বাভাবিক হবে বলেই মনে হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে পরিচিত শব্দ ফেসবুক। একবারে বলা চলে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের কাছে নামটি অত্যন্ত পরিচিত। কিছু কিছু মানুষের কাছে কিছুটা বিরিক্তকর হলেও যুব সমাজের কাছে তা অ্যতন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠেছে। এর ব্যবহার দিনদিন এতই বাড়ছে যে এর ব্যবহার ছাড়া যেন সময় কাটানো কল্পনা করা সম্ভব না। একসময় বিদ্যালয়ের মাঠ যখন বিকেলে কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকত, খেলোয়াড়দের নিয়ে এখন সে চিত্র আর লক্ষ্য করা যায় না। মাঠ আছে খেলোয়াড় নেই। মাঝেমধ্যে বিকালে মাঠের উপর বসে থেকে দলবেঁধে চলে ফেসবুক দেখা। শুধু ফেসবুক দেখার মাধ্যইে সীমাবদ্ধ নয় যুব সমাজ। এইসব অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। সরে যাচ্ছে লেখাপড়ার টেবিল থেকে। শ্রম মেধা ব্যবহার না করে হয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর। বই পড়া শব্দটি এখন নির্বাসিত। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে, এমনকি দূরে চলে যাওয়া মানুষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপতি হয়েছে, পুনরায় এটি একটি খুব ভালো দিক। কম খরচে সবসময় আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর রাখা সহজসাধ্য হয়েছে। মোবাইল ফোনে কথা হলেও সরাসরি ছবি দেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপস-এর মাধ্যমে। যারা ফলে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে আরো বেশি। নিঃসন্দেহে এ বিষয়টি যথেষ্ট আনন্দ দেয়।

তাই এ কথা বলা চলে যে এইসব সামাজিক যোগাযোগের ফলে কম খরচে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু এসব জায়গা থেকে আমাদের গ্রহণের জায়গায় যদি মন্দ দিকটিই প্রাধান্য পায়, তাহলে জটিলতা বাড়ে। সম্প্রতি তাই ঘটছে আমাদের দেশে তা না মেনে উপায় নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো তথ্য অতি দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে সব জায়গায়। যার ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা। সম্প্রতি সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেকে কেন্দ্র করে সমাজের ভালো কাজের জন্য অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যা আমাদের আশার বাণী শোনায়। এ থেকে সমাজের অনেক ভালো ভালো কাজের সূত্রপাত হচ্ছে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের মধ্যে জেগে উঠছে মানবতা। মানুষ হচ্ছে সামাজিক। একজনের সহায়তায় অন্য জন বাড়াচ্ছে সহায়তার হাত এ থেকে আগামী প্রজন্ম আরো উৎসাহিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আবার অন্যদিকে এইসব যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তরুণ সমাজের মধ্যে প্রতারণা করার নেশা জেগে বসেছে। বিশেষ করে তরুণ তরুণীদের মাঝে অসামাজিক কার্যকলাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার জন্য তৈরি হচ্ছে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা। এছাড়া বিশেষ সুবিধাভোগীরা বিভিন্ন অপকর্মের জন্য ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে তৈরি করছে অপরাধের রাজত্ব। এর মূল কারণ হলো অতিমাত্রায় এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার। একটা সময় যখন তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন খেলাধুলা কিংবা সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকত, তখনকার সময়ে এত অপরাধপ্রবণতা লক্ষ্য করা যেত না। যার ফলে পারিবারিক শক্তি ও সামাজিক শক্তিটা অনেক বেশি থাকত।

সরকার এই বিষয়টা নিয়ে সময় না দিলেও যারা সমাজকে নিয়ে চিন্তা করে তাদের ভাবনায় এ বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। এটা যে শুধু নতুন প্রজন্মের সাথী এ হিসেবে শুধু চিন্তার বিষয় তা নয়, এটা সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে, বিধায় কপালে ভাঁজ পড়েছে বেশি।

কিছু দিন আগেও সামাজিক কারণে মেয়েদের মধ্যে এ প্রবণতা কম থাকলেও বর্তমানে পাল্লা দিয়ে চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার। শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রভাব যে কতটা শুধু মাত্র সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করতে পারে শিক্ষকরা। ক্লাস কিংবা পরীক্ষার হলেও মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তা ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। শিক্ষকরা চাকরি যাওয়া কিংবা পাল্টা মার খাওয়া কিংবা অপমাণিত হওয়ার ভয়ে শাসন থেকেও বিরত রয়েছেন। তারচেয়ে আরো কঠিন অবস্থানে রয়েছেন পরিবার। ঠিক সময়ে সন্তানের জীবনের কথা চিন্তা এইসব মোবাাইল ব্যবহার থেকেও বাঁধা দিতে পারছেন না। এ যেন এক কঠিন বাস্তবতায় পরিবার এবং শিক্ষক সমাজ।

যে যার মতো তার ইচ্ছে হচ্ছে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্রীয় কোনো নিয়ম নেই, এইসব ব্যবহারের বেলায়। নেই কোনো বয়সের বাধ্যবাধকতা এবং অ্যাপস ব্যবহারের বিধান। এইসব বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজেই এসব ব্যবহারের ফলে কম বয়সের ছেলেরা বিপথে যাচ্ছে, ফলে ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র বিপরীত দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে এর লাগাম টানতে না পারলে চরম খেসারত দিতে হবে জাতিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেহেতু বন্ধ করা সম্ভব না, তাই সরকারের পক্ষ থেকে এর নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে, এইসব অপকর্ম থেকে কিছুটা হলেও সরে আসবে তরুণ সমাজ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত