রমজানে রাজধানীতে যানজট

দরকার যুগোপযোগী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রমজান মাসের এক-তৃতীয়াংশ শেষ হয়ে গেছে। মানুষ অফিস শেষ করার পর বাসায় গিয়ে ইফতার করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কর্মস্থল থেকে বের হলেও যানজটের বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে অনেক সময় পথেই ইফতার করতে হচ্ছে। রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরই কর্মস্থল থেকে ঘরমুখী হয় মানুষ। তবে রাস্তায় নামার পরই তাদেরকে পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের মধ্যে। ঘরমুখী মানুষকে মুখোমুখি হতে হয় নানা ভোগান্তির। চিরচেনা যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর রাজপথ। বিকাল নাগাদ সড়ক মহাসড়ক ও অলিগলিতেও গাড়ির জট লেগে যায়। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা ও সরকারি কার্যালয়ের গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে আটকা পড়ে থাকে। রাজধানীতে একাধিক পয়েন্টে ফ্লাইওভারেও গাড়ির দীর্ঘ লাইন পরিলক্ষিত হচ্ছে। পুরান ঢাকার চকবাজারের শাহী মসজিদ এলাকায় দুপুরের পর থেকে বসে ঐতিহ্যবাহী ইফতারের পসরা। ফলে উর্দু রোড, চকবাজার সার্কুলার রোড, ছোট কাটরা ও বড় কাটরায় অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ পুরান ঢাকার ইফতার কেনার জন্য সেখানে ভিড় করায় স্বাভাবিক কারণে যানজট বাড়ে। যানজটের মধ্যে পড়ে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। তবে আবহাওয়ায় শীতল ভাব থাকায় যানজটে আটকা পড়ে মানুষ গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পাচ্ছেন। তবে তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। রোজার প্রথম দিন থেকেই রাজধানীতে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে অফিস ছুটির পর। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যানজট আরো তীব্রতর হতে থাকে। রাজধানীর যানজট যেন নগরবাসীর জন্য নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখনো ঈদের কোনাকাটা শুরু করেনি। ১৫ রোজার পর কেনাকাটা শুরু করলে মার্কেটগুলো জমে উঠবে। ২০ রমজানের পর কোনাকাটা পুরো মাত্রায় শুরু হলে যানজট পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করবে। তখন রাস্তায় যানবাহন ও রিকশার সংখ্যা আরো বাড়বে। ফলে রাজধানীর যানজট পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। যানজটের কারণে রমজানে মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। প্রতি বছর পুলিশের পক্ষ থেকে রমজানের যানজট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হলেও কার্যত তার কোনো প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় না। রাজধানীতে একটি যুগোপযোগী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা না হলে এই দুর্ভোগ কমানো সম্ভব নয়। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আরো বেশি আনসার সদস্য মোতায়েন করা যেতে পারে। যেভাবেই হোক রাজধানীকে যানজট মুক্ত করার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেবল যে রাজধানীতেই যানজটের সৃষ্টি হয়, তা নয়। বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরগুলোতেও যানজট তৈরি হয় রমজান মাসে। কিভাবে এই সামাজিক সংকট থেকে মানুষ রেহাই পেতে পারে, সেটা নিয়ে নগরবিদ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আলোচনায় বসতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যানজটের কারণে কী পরিমাণ শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, তা নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। মানুষের কাজ করার মতো সময় দিনে দিনে কমে আসছে। কাজ করার সময় কমে আসার অর্থ হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি স্লথ হয়ে যাওয়া। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি রুব্ধ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সার্বিক অর্থে দেশের অর্থনীতির চাকার গতিও কমে যাবে। মোট কথা, জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হলে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ব্যহত হবে। সেই জন্য দেশে একটি যুগোপযোগী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দরকার।