শিক্ষাঙ্গনে কাউন্সেলিং সেন্টার

বাড়াতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষার্থীদের মানসিক অবসাদ দূর করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সেন্টারের কোনো বিকল্প নেই। নানা কারণে মানুষের শরীর ও মনের ওপর চাপ বাড়ায় মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কখনো কখনো মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। তবে এই অবসাদ কিংবা হতাশা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য হতাশা কিংবা অবসাদকে দূরে রাখতে হবে। তবে মানুষ ইচ্ছা করলেও অবসাদকে দূরে রাখতে পারছে না। অবসাদ বা হতাশা বাড়তে বাড়তে একসময় আসে যখন মানুষ তার শরীর ও মনের ওপর আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে একসময় আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আমাদের দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে কাউন্সেলিং সেন্টার থাকলেও শিক্ষার্থীরা যেখানে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করে না। কোনো মনোবিজ্ঞানীর কাছে গেলে মানুষ স্বাভাবিকভাবে মনে করে হয়তো মানসিক সমস্য। মানসিক সমস্যা কিংবা মনোরোগের সঙ্গে হতাশা কিংবা অবসাদের অনেক মিল রয়েছে। তাই অবহেলা না করে কাউন্সেলিংয়ের আশ্রয় নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে সুফল পাওয়া সম্ভব। তবে নানামুখী সীমাবদ্ধতা আর সংকটে মৌলিক লক্ষ্যে পৌঁছান সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা রোধ, বিষণ্ণতা, পরীক্ষা ভীতি দূর করতে সাধারণত প্রতিষ্ঠা করা হয় কাউন্সেলিং সেন্টার। ছুটির দিন ছাড়া দিনের একটা সময় বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি থেকে শিক্ষার্থীরা রক্ষা পাবে। তবে হতাশার কথা হচ্ছে কাউন্সেলিং সেন্টার পরিচালনায় যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হয় না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য যে পরিমাণ চিকিৎসক নিয়োগ করা দরকার তা থাকে না। সাধারণত উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের মনোবিজ্ঞান বিভাগ কাউন্সেলিং সেন্টারটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকে। এই বিভাগের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ফিল্ড ওয়ার্কের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করে থাকে। এছাড়া মনোবিজ্ঞানের শিক্ষকরা এ সেন্টারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। সেবাগ্রহীতা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে উৎকণ্ঠা, প্রেমে ব্যর্থ, দুশ্চিন্তা, পরীক্ষাভীতি, বিষন্নতা, হতাশাগ্রস্তসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। সমস্যার ধরন চিহ্নিত করে একাধিক সেশনে কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। যুগের পরিবর্তনে মানসিক সমস্যার নতুন নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক লাইফ ও ক্যারিয়ার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে সংকট প্রকট হওয়ার আগে কেউ কাউন্সেলিং সেন্টারের শরণাপন্ন হয় না। কাউন্সেলিং সেন্টারে আসার আগে হয়তো দুই-একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতাল ছাড়া কাউন্সেলিং সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য চিকিৎসা দেয়া সম্ভবন হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে মেডিসিনসহ উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। কাউন্সেলিং সেন্টারের চিকিৎসা নিয়ে সবাই যে উপকৃত হবে, তা নয়। কারো কারো বক্তব্যে নেতিবাচক মনোভাব ফুটে উঠে। তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকলে সহজেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজে কিংবা অপনজনের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ফাইল আটকে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব, কেন ফাইলটি ছাড়া হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করব। আর যে যে সমস্যা আছে, সমাধান করা হবে।’