ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা- একই সূত্রে গাথা

কমল চৌধুরী
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা- একই সূত্রে গাথা

বিশ্বের মানচিত্রে কোনো জাতি একদিনে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভ করেনি। বাংলাদেশ ও একদিনে স্বাধীনতা লাভ করেনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হলেও মূলত : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীতনার উদ্ভব হয়েছে। প্রতিটি জাতির একজন জনক থাকে। বাংলাদেশের তথা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলনের আগে ১৯৪৬ সালেই বঙ্গবন্ধু প্রথম স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেন। তারপর ভাষা আন্দোলন, বিভিন্ন ৬ দফা, ৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু প্রতিটি আন্দোলনের সঙ্গেই সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তাই বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রপাধ্যায় সখেদে বলেছিলেন- বাঙালির কোনো ইতিহাস নেই। এই খেদ মনস্তাপ ও বেদনা শুধু বঙ্কিম চন্দ্রের একারই ছিল না, ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের, নেতাজী সুভাষ বসুর, ছিল কোটি বাঙালির। বাঙালির শত শত বর্ষের পুঞ্জিভূত কালিমা, গ্লানি ও অপবাদের অপনোদন করতে আবির্ভূত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি বাংলাভাষীদের জন্য তিনি সৃষ্টি করলেন ইতিহাস। সে ইতিহাস একধারে অনুপন ও বীরত্বব্যঞ্জক। উপহার দিলেন স্বতন্ত্র ও স্বাধীন আবাসভূমি। সবুজের প্রেক্ষাপটে উদীয়মান রক্তিম সূর্য খচিত পতাকা। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। বিশ্ব সভায় পরিচিতি। বাঙালি, বাংলাদেশ একই সূত্রে গ্রথিত। অবিচ্ছেদ্য ও অবিভাজ্য। শ্রেষ্ঠতম বিশ্বনেতৃত্বের পংক্তিভুক্ত হলো তার নাম। উচ্চারিত হলো জর্জ ওয়াশিংটন, লেলিন, মহাত্মা গান্ধী, মা ও সেতুং, হোটিমিন, নেলসল ম্যান্ডোলা প্রমুখের নামের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু আমাদের গৌরব, আমাদের অহঙ্কার। প্রতিবিল্পবী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে তারা নিচিহ্ন করতে উদ্যত হয়েছিল দৈহিকভাবে। মুছে ফেলতে চেয়েছিল কোটি কোটি মানুষের হৃদয় থেকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব ও অমর। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন ৫৫ হাজার বর্গমাইলের সবুজ শ্যামল এই গাঙ্গের বদ্বীপে। বাংলাদেশের মতই শ্বাশত চিরায়ত ও দেদীপ্য বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব। বাংলাদেশকে মুছে ফেলতে পারলেও বঙ্গবন্ধকে মুছে ফেলা কিছুতেই সম্ভব নয়। এই সত্য বিস্মৃত হয়ে অপগান্ডের মতো যারা ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টায় লিপ্ত, তারা বাস্তবিকই করুণার পাত্র। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন প্রথম দেখেন ১৯৪৬ সালে। পাকিস্তান যে বাঙালিদের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন উপনিবেশবাদী শাসন হবে- সেটা তিনি পাকিস্তান হওয়ার আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। পাকিস্তান হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। আর ১৯৪৬ সালে কলিকাতায় অবস্থানকালে কয়েকজন সমমনা বন্ধু মিলে বঙ্গবন্ধু একদিন সিনেমা দেখতে ঢুকেন শ্যাম বাজারের একটি প্রেক্ষাগৃহে। উদ্দেশ্য সিনেমা দেখা নয়। সিনেমা হলের অন্ধকারে বসে বাঙালি জাতির চেতনার অস্তিত্ব রক্ষার পন্থা হিসেবে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি, যা পরিণামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সহায়ক হবে। পাকিস্তান হওয়ার পর কলিকাতা থেকে ঢাকায় এসে ১৯৪৭ সালের ৬ ও৭ অর্থাৎ পাকিস্তানের জন্মের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠন করেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন মুসলিম ছাত্রলীগ, আজ যা ছাত্রলীগ নামে পরিচিত। এই ছাত্রলীগ স্বাধীতনা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৪৯ সালের ২৪ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল আওয়ামী লীগ। তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এসবই ঐতিহাসিক সত্য। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও নেতৃত্বে অনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপসমূহঃ মার্চ ১ থেকে মার্চ ২৬, ১৯৭০-এ প্রধান প্রধান ঘটনাপঞ্জি। মার্চ ১, ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধুর পরামর্শক্রমে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষধ গঠন হয়।

২ মার্চ, ১৯৭১ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেক্রমে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

৩ মার্চ, ১৯৭১ : পল্টন ময়দানে ছাত্র সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলণ এবং স্বাধীনতার স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়।

৭ মার্চ, ১৯৭১ : রমনা ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, যা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা। লক্ষণীয় বঙ্গবন্ধুর উক্তি : ‘রক্ত যখন দিয়েছি-রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ’ আশু মুক্তিযুদ্ধের ইঙ্গিতবহ।

১৫ মার্চ, ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধুর প্যারালাল সরকর গঠন। ৩৫ দফা রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত নির্দেশ। সেনা ছাউনিতে যাতে রসদ যেতে না পারে, সোন চলাচল যাতে না হয় সে জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছাত্র ও দলীয় কর্মীদের নিয়ে চেক পয়েন্ট স্থাপন। জেনারেল ওসমানীকে বাঙালি সেনা অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং ছাত্র ও আনসারদের ট্রেনিং শুরু হয়।

১৯ মার্চ, ১৯৭১ : ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াসের নেতৃবৃন্দদের ভারতে গিয়ে স্বাধীনতার প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।

২৩ মার্চ, ১৯৭১ : সারাদেশে ‘পাকিস্তান দিবস’ উপলক্ষ্যে পাকিস্তানি পতাকার বদলে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলণ করা হয়। এমনকি বিদেশি দুতাাবসগুলোও বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করে।

২৫ মার্চ, ১৯৭১ : সন্ধ্যায় সম্ভাব্য পাক সামরিক অভিযানের আভাস পেয়ে দলীয় কর্মীদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার নির্দেশ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিববাদের-লেখক খোন্দকার মুহম্মদ ইলিয়াসকে বঙ্গবন্ধুরর উক্তি ‘আপনারা আশ্রয় পাবেন অস্ত্র পাবেন।

সে ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। সে রাতে সর্বশেষ যিনি অবস্থান করেন সেই ওসমানীকে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক একটি গোপন দলিল প্রদান করা হয়। যেভাবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন: হাজী গোলাম মোর্শেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ট সহচর। বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন এবং তাকে ও পাকবাহিনী বঙ্গবন্ধুর সাথে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে তিনি বর্ণনা করেছেন, কীভাবে বঙ্গবন্ধু পাকবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১২টা পার হয়ে গেলে অর্থাৎ ২৬ মার্চ ‘৭১-এর প্রায় প্রহরে বঙ্গবন্ধ সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফের এক বন্ধুর মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা ইথার তরঙ্গে ছেড়ে দেন। এর পরপরই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে টেলিফোন বেজে ওঠে। মোর্শেদ টেলিফোন ধরেন। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় ‘বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা বাণী যথারীতি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখন বেতার সেট নিয়ে কি করব- তা বঙ্গবন্ধুর কাছে জানা দরকার। মোর্শেদ বঙ্গবন্ধুকে একথা জানালে তিনি টেলিফোনকারীদের বেতার সেট নষ্ট করে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তার কিছু পরেই রাত একটার দিকে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। সেরাতেই ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী পৌঁছানো হয়, চট্টগ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট জুহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে। তিনি ওই ঘোষণার সাইক্লোস্টার করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করেন।

তখন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এ হান্নানই কালুর ঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেন ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় এম.এ হান্নান সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণা বাণী কালুরঘাটস্থ ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ থেকে ৩ বার পাঠ করেন। ঘোষণাটি ইংরেজিতে থাকায় অধ্যাপক আবুল কাশেম সন্ধীপ ঘোষণাটি বাংলায় অনুবাদ করেন। পরদিন ২৭ মার্চ একই বেতার কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে দ্বিতীয় দফায় স্বাধীতনার বাণী পাঠ করেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। [বঙ্গানুবাদ : আমাদের মহান নেতা বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীতনার লাভ করলাম। এরইমধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সরকার গঠন করা হয়েছে। এ মর্মে আরো ঘোষণা করা হচ্ছে যে, শেখ মুজিবুর রহমানই হচ্ছেন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগোষ্ঠীর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা এবং তারই নেতত্বে গঠিত সরকার হচ্ছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র আইনসম্মত সরকার।]

১৯৭২ সালের ২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকবাহিনী অতর্কিতে বাংলার জনগণের ওপর মরণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, ছাত্র ও যুবকরা তাদের হাতিয়ার কেড়ে নিয়ে হানাদারদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। সারা বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীকে নির্মূল করার জন্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে। সে সময় বঙ্গবন্ধুকে আটকের গোটা সময় একটি প্রশ্নই ইয়াহিয়া খানকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে পাক সরকারকে। যুদ্ধরত বাংলাদেশে তখন বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার জন্য মানুষ রোজা রেখেছে। নফল নামাজ আদায় করেছে। মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে। শত্রু-মিত্র সবাই আজ এক বাক্যে স্বীকার করেন, সেদিন বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে।

তখনও মানুষ জিয়ার নাম তেমন শোনেননি। বঙ্গবন্ধু দিব্য দৃষ্টিতে এটা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন বলেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। তাছাড়া, পালাবার মতো নেতা বঙ্গবন্ধু কোনোকালেই ছিলেন না। দেশ ও জনগণের জন্য হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করার মতো মনোবল তিনি সবসময় পোষণ করতেন। অতিবড় শত্রু ও তাঁর অসীম সাহসের প্রশংসা করেন। মৃত্যুর সময়ে ও তিনি তাঁর হত্যাকারীদের তর্জনী তুলে ধমক দিয়েছেন বলে হত্যাকারীরা স্বীকার করেছে।

প্রয়াত প্রখ্যাত অ্যান্থনী ম্যাসকারেন হাস- তার “দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ” এর এক জায়গায় লিখেছেন “পাঞ্জাবী রাজনীতিবিদদের শঠতায় অতিষ্ঠ হয়ে আওয়ামী লীগ ফিরোজ খান নুনের পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে ভিন্ন পথে চলার সিদ্ধান্ত নেন। শেখ মুজিব সেদিন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বলে ফেলেন- ‘আমাদের স্বাধীনতা পেতে হবে’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও থাকতে হবে।

আমি অবশ্যই এসব দেখাব।’ ওই উক্তি বঙ্গবন্ধু করেন তখন ১৯৫৮ সাল। ফিরোজ মন্ত্রিসভার পতন হয়েছে এবং চুন্ডিগড় সরকার তার স্থলাভিষিক হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন, ‘ওই ব্যক্তি (মুজিব) ও তার দল পাকিস্তানের দৃশ্যমান। তারা পূর্ব পাকিস্তানকে সার্বিকভাবে পৃথক করতে চায়।’ এবার তাকে শাস্তি পেতেই হবে। ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসি দেবার সব ব্যবস্থার সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু সময়াভাবে অর্থাৎ তার আগেই পদত্যাগে বাধ্য হওয়ায় সেটা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ইয়াহিয়া খান কথিত ‘সার্বিকভাবে পৃথকভাবে (টোটাল সিসেসন) কি স্বাধীনতা নয়?

সফিকুর রহমান সম্পাদিত ‘স্বাধীনতার স্বপ্ন ও আজকের প্রেক্ষাপট’ যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল শীর্ষক জিয়াউর রহমানের একটি লেখা সংকলিত হয়েছে। এটি ১৯৯২ সালে লেখা এবং তা প্রথম সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। এতে তিনি লিখেছেন- ‘৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রিন সিগন্যাল বলে মনে হলো। আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দিলাম।’ এই গ্রিন সিগন্যাল ও চূড়ান্তরূপ জিয়া যে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছেন- তা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। জিয়া বেঁচে থাকাকালীন কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেননি।

বঙ্গবন্ধু হলেন শতাব্দীর মহানায়ক। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। জাতির পিতা এবং বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। তিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বঙ্গবন্ধুর কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র পেয়েছি। তাই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা একই সূত্রে গাথা।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও কবি, ঢাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত