ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নগর বাসযোগ্য করতে জেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান দরকার

মোতাহার হোসেন
নগর বাসযোগ্য করতে জেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান দরকার

রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল নগরীর অন্যতম। আধুনিক নগর ব্যবস্থায় যে সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার তার অনেকটাই অনুপস্থিত এখানে। মূলত; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অধিকাংশ অফিস-আদালত, কর্মসংস্থানসহ মানুষের অপরিহার্য প্রায় সব সেবা ও সুযোগের ব্যবস্থা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত রাজধানীমুখী হচ্ছে। তা ছাড়া অনুরূপ সেবা ও সুযোগের আশায় মানুষ ঠাঁই নিচ্ছে শহর ছেড়ে নিকটস্থ বিভাগীয় ও জেলা শহরেও। একই সঙ্গে নগরায়নের ফলে দেশের অন্যান্য নগরগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। নগরায়নও হচ্ছে দ্রুতগতিতে। সেই সঙ্গে নগরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিবিধ সমস্যা। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, যানবাহন সংকট, জলাবদ্ধতা, দূষণ ও যানজট, জলজট, মানব জটের পাশাপাশি নতুন নতুন অসংখ্য সংকট নগরবাসীর ঘাড়ে চেপে বসছে। এর বিপরীতে নগরীর বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্য যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তা সময় উপযোগী নয়, আবার তা বাস্তবায়নেও রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। ফলে নগরগুলো দিন দিন আরো বাসযোগ্যহীন হয়ে পড়ছে। নগরীর এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা নিরসনে ঢাকাকে বৃত্তাকার সড়ক, নৌ, রেল যোগাযোগের আওতায় আনা, রাজধানীর নিকটস্থ জেলা, উপজেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অফিস-আদালত স্থানান্তর ও নতুন করে গড়ে তোলা, দেশের জেলা শহরগুলোকে হাব হিসেবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জেলা পর্যায়েই তৈরি করতে হবে কর্মসংস্থান। জেলার সঙ্গে গ্রামকে যুক্ত করে সুষম উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। টেকসই ও বাসযোগ্য নগরায়নে এ সবের বিকল্প নেই। নগরীকে বাসযোগ্য করার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা প্রায়শই নানা উদ্যোগ আয়োজন করে থাকে। ঠিক এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ: সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক এক বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতেও প্রায় অভিন্ন এমন অভিমত উঠে এসেছে। ওই অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের পরামর্শ, অতি নগরায়নের ফলে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নগরায়নের ঝুঁকি বাড়ছে। সমন্বয়হীনতার কারণে দ্রুত নগরায়ন সম্প্রসারিত হচ্ছে। আবাসন কোম্পানিগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনের ফলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সেখানেও নাগরিক সুবিধার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বিএনপির আব্দুস সালাম তালুকদার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী থাকার সময় সিপিডির পক্ষ থেকে দেশের চারটি শহরের মেয়রকে নিয়ে বসা হয়। উদ্দেশ্য ছিল দেশের মিউনিসিপ্যালিটিগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়। তখন আমলাতন্ত্র বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে মেয়রের হাতে পুলিশ থেকে শুরু করে শহরের সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ঢাকায় তা নেই। বঙ্গবন্ধুর আমলে একটি পরিকল্পনা কমিশন ছিল। আমলাতন্ত্রের কারণে সেটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৩০০ সিসির টয়োটা গাড়ি ব্যবহার করতেন। এখন ঢাকা শহরে মানুষ মার্সিডিজ বেঞ্জ-বিএমডব্লিউতে চড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু শহরটা ন্যাস্টি (নোংরা) হয়ে গেছে।’ নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের অভিমত, শহরে দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু নগর উন্নয়নের দায়িত্বে কোনো একজন সুনির্দিষ্ট মন্ত্রী নেই। যে দেশের ৩৬ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে সেখানে একজন নগর বিষয়কমন্ত্রী থাকা প্রয়োজন। আগামী ডেল্টা প্ল্যানে শহরের লোকসংখ্যা আরো বাড়বে। তিনি বলেন, দেশে নগরায়ন বাড়ছে। ১৯৭৪ সালে দেশে নগরায়ণের হার ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ১৯৮১ সালে হয় ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০০১ সালে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ৩১ শতাংশ এবং ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশে। নগরায়নের ক্ষেত্রে ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত