ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বনায়নের ভূমিকা

আফতাব চৌধুরী
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বনায়নের ভূমিকা

এ নিবন্ধটি আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে লিখছি। তবে এটি তার হস্তগত হবে কি না জানি না। এ কাজে নিয়োজিত যে সমস্ত কর্মকর্তা আছেন তারা যদি চান তাহলে প্রধানমন্ত্রী এটি পড়ে বিহীত ব্যবস্থা নিবেন এ বিশ্বাস আমার আছে। আমি এও জানি প্রধানমন্ত্রী নিজেও ব্যস্ততার মাঝে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা পাঠ করে নানা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। আমি দীর্ঘদিন থেকে বনাঞ্চল সৃষ্টিতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে আসছি। অসংখ্য রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও আমি পেয়েছি। ১৯৯৮ সালে বৃক্ষরোপণে আমাকে ব্যক্তিপর্যায়ে জাতীয় পুরস্কার (স্বর্ণপদক) প্রদান করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজের হাতে। আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে আমি প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে আসছি। লেখালেখি করে আসছি এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে। সামাজিক বিষয় আসয়, পরিবেশ, গাছপালা এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে লিখে আসছি বেশ ক’টি জাতীয় পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই।

আমি এশিয়া মহাদেশের উন্নয়নগামী বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক। থাকি সিলেট শহরের শাহজালাল উপশহরে। দেশের একজন সাধারণ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য দুই-চারটি কথা বলব।

অ্যান্টার্কটিকার জনমানবহীন মহাদেশ ছাড়া বাকি যে ক’টি মহাদেশ আছে তার প্রায় সবগুলো স্পর্শ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। প্রায় ২০টি দেশে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করার সুযোগ আমি পেয়েছি আমার জীবনে। এ সুযোগ অনেকেরই হয়, তবে আমার ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। নানা প্রয়োজনে বহু লোক নানা দেশে ভ্রমণ করে। তারা সাধারণত বড় বড় শহরে বেশি সময় কাটান, সভা-সমিতি করেন। বন্যপ্রাণী বনভূমি ও পরিবেশবিষয়ক নানা সেমিনার, সিম্পোসিয়াম, সম্মেলনে যারা যান বড় শহরে বিলাসবহুল হোটেলে উদ্বোধন অনুষ্ঠান করে। আমরা ছোট-বড় মফস্বল শহরে যেতাম। যেসব দেশে গিয়েছি সেগুলোর শহর তো বটেই গ্রামাঞ্চলও দেখার সুযোগ আমি পেয়েছি। ব্রিটেনসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের বনজঙ্গল, আমেরিকা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের অনেক গভীরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আফ্রিকার কিছু অংশও দেখেছি। আমরা সাধ্যমতো নানা জায়গায় গিয়েছি। সুতরাং আমার সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে এবং অন্যদের কাছে যা শুনেছি তার ভিত্তিতে কিছু অভিমত ব্যক্ত করতে পারি। প্রাকৃতিক পরিবেশের কথাই বলতে যাচ্ছি। অনেক বক্তৃতা শুনি বা পোস্টার দেখি যাতে লেখা থাকে- ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’। শুনতে ভালোই লাগে। যে কোনো গাছ লাগালেই পরিবেশ বাঁচে না। আমাদের বলতে হবে, দেশি গাছ লাগান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচান। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে গেলে অপ্রাকৃতিক পরিবেশের কথা এসে যায়। পার্থক্য আমাদের গভীরভাবে বুঝতে হবে। যে কোনো গাছ লাগালে যদি প্রাকৃতিক পরিবেশ বেঁচে যেত তা হলে কথা ছিল না। কিন্তু বাস্তবে তা নয়।

ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়ার প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের। কোনো একটি স্থানের বায়ু, পানি, তাপ, মাটির ধরন ও গুণাগুণের ভিত্তিতে সে স্থানে উদ্ভিদ জন্মে। এটিই প্রাকৃতিক নিয়ম। একইভাবে উদ্ভিদের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সেখানে প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। আলো, বায়ু, আবহাওয়া, পানি ও মাটির সমন্বয়ে সে স্থানে অজৈব পরিবেশ গড়ে ওঠে, তার ওপর নির্ভর করে যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবির্ভাব হয় তাকে বলা হয় জৈব পরিবেশ। জৈব ও অজৈব পরিবেশ মুক্তভাবে সে স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলে। পরিবেশ বিদ্যায় পরিবেশগত পরামর্শ বলে একটি কথা আছে। সংক্ষেপে বলা যায়, উদ্ভিদহীন একটি স্থানে যখন কোনো উদ্ভিদ জন্মায়, তখন সেখানেও পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ ওই গাছের কারণে পরিবেশ ভিন্ন রূপ নেয়, যেখানে আগের গাছ টিকতে পারে না এবং ভিন্ন গাছ জন্মায়। একইভাবে ভিন্ন এক প্রাণীর উদ্ভব হয়। এ ধরনের পরিবর্তন কয়েকবার ঘটার পর শেষ পর্যায়ে যে উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখা যায় তাকে বলা হয় ‘ক্লাইমেটিক ক্লাইমেক্স’ বা চূড়ান্ত পর্যায়। অজৈব পরিবেশগত কোনো বিপর্যয় দেখা না দিলে একটি স্থানের জৈব পরিবেশ সঠিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে সে স্থানে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃত্রিম উপায়ে অজৈব পরিবেশগত কোনো বিপর্যয় দেখা না দিলে একটি স্থানের জৈব পরিবেশ সঠিকভাবে পরিবর্তন না ঘটিয়ে সেখানে কৃত্রিমভাবে যদি অজৈব পরিবেশের পরিবর্তন করে ফেলা হয়, তবে সব ওলটপালট এবং বিলীন হয়ে যায়।

মজার কথা, বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোসিয়াম উপলক্ষ্যে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে যেতে চান। এটি স্বাভাবিক। এবার একটু প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেকার কথা বলছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি না হতো তবে তৃতীয় বিশ্বের তথা আফ্রো-এশিয়ার এবং দক্ষিণ আমেরিকার কোটি কোটি মানুষকে আজ হয়তো পরাধীনতার শৃঙ্খলে জীবন কাটাতে হতো। তবে এ দেশগুলো স্বাধীনতা ঔপনিবেশিক দেশগুলোর দয়ার দান নয়। আবার এটা শুধু স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল, এটিও পুরোপুরি মানতে রাজি নই। যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিছুটা হলেও স্বচক্ষে দেখেছেন, তারা স্বীকার করবেন পরাধীন দেশগুলোর স্বাধীনতা এসেছে ওই দুটি কারণের সফল সমন্বয় হিসাবে। এ মহাযুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্বের পানিতে-স্থলে যে ভয়ংকর দুর্যোগ নেমে এসেছিল তার ফলে এসব দেশকে শাসন করার ক্ষমতা ঔপনিবেশিক দেশগুলো হারিয়ে ফেলেছিল। জাপানের বাইরে এ যুদ্ধ আরো কয়েক বছর চলছিল, কিন্তু জার্মানিতে অ্যাটম বোমা ফেলার সাহস মিত্রশক্তির হলো না, জার্মানিতে বোমাটি ফাটলে যুদ্ধ দুই বছর আগেই থেমে যেত।

যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আসলে দুনিয়ার সর্বত্র এত ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে লাখ লাখ মানুষ বোমার আঘাতে ও আগুনে পুড়ে এবং ক্ষুধার জ্বালায় মরেছে এতে ইউরোপ-ব্রিটেন-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার জোট শক্তির কোমর ভেঙে গিয়েছিল। সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ানোর জন্য হাতের কাছে এমন কিছু ছিল না, যাকে তারা লাঠি হিসাবে ব্যবহার করবে। তবে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে, সে যুদ্ধ ছিল সেয়ানে সেয়ানে। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো দুই দলে ভাগ হয়ে সে যুদ্ধ করেছিল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, এসব যুদ্ধবাজ দেশের মানুষ মরেছে শুধু বোমার আঘাতে। আর যুদ্ধে যাদের অংশগ্রহণ ছিল না তারা মরেছে একই সাথে বোমার আঘাতে এবং ব্যাপক দুর্ভিক্ষে। পণ্ডিত নেহরুর কথাটি নিশ্চই অনেকেরই মনে থাকার কথা। তিনি বলেছিলেন, দুর্ভিক্ষের কারণে বাংলায় যত মানুষ মরেছে, ব্রিটেনে যদি তার অর্ধেক মাছিও মারা যেত তবে চার্চিলের মন্ত্রীসভার পতন ঘটত। ভেবে দেখুন, যুদ্ধ করল কারা আর দুর্ভিক্ষে মরল কারা। দুর্ভিক্ষে ব্রিটেনে একটি মানুষও মারা গেছে এমন কথা ইতিহাসে আছে কি?

উপমহাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। আমি তাদের শ্রদ্ধা করি ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু শুধু তাদের আন্দোলনের ফলে যে কিছুটা দ্রুত এ উপমহাদেশ বা অন্য দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়ে থাকেন তেমনটি ভাবা ঠিক হবে না। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর কোমর ভেঙে গিয়েছিল বলে শেষ পর্যন্ত ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’- বলতে বলতে উপনিবেশগুলো ছেড়ে পালিয়েছে ওরা, এটা সত্য।

কোনো কোনো দেশের ঔপনিবেশিক শক্তি শত শত বছর ধরে তৃতীয় বিশ্বের কোন কোন দেশের রক্ত কীভাবে শোষণ করে খেয়েছে তার ইতিহাস আছে। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো উপনিবেশের অশ্বেতাঙ্গ মানুষকে সাধারণভাবে কীটপতঙ্গ ছাড়া বেশি কিছু মনে করত না। আফ্রিকা, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার আদি মানুষকে কি নিষ্ঠুরভাবে ঘরছাড়া হতে বাধ্য করেছিল সেসব কাহিনী এসব মহাদেশ সংক্রান্ত বই পড়লে জানা যাবে।

ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো আমাদের উপমহাদেশের মানুষকে কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখত। দেখবেই না কেন? অন্যরা সব মহাদেশে গিয়ে তাজমহলের মতো কিছু দেখতে পায়নি। আমাদের প্রাণী জগত ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ব্রিটেন কীভাবে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে তা নিয়ে কাউকে কথা বলতে শুনি না। আসলে ব্যাপারটি কি? উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের অনেকে বোধ করি এ নিয়ে মাথা ঘামান না। অনেক উদ্ভিদবিজ্ঞানী অর্থকরী যে কোনো গাছ হলে তাকে মেনে নিতে পারেন। কিন্তু আমরা তা পারি না। সবাই জানি, যে কোনো এক স্থানের প্রাণী স্থানীয় উদ্ভিদের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু স্থানীয় প্রাণী স্থানীয় উদ্ভিদের সাথে হাজার হাজার বছর ধরে বিবর্তনের ফলে উদ্ভিদের ওপর একান্তই নির্ভরশীল। তাই যে উদ্ভিদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যেসব প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছে, সে উদ্ভিদ না হলে সেসব প্রাণী টিকে থাকতে পারে না। সুতরাং আমগাছটি কেটে ফেলে সেখানে বহু মূল্যবান মেহগনি গাছ লাগালে চমৎকার কাঠ হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু সে আম গাছকে আশ্রয় করে যেসব কীটপতঙ্গ পাখি ও পশু বেঁচেছিল এতদিন সেগুলো ওই অচেনা গাছ থেকে খেয়ে বাঁচার জন্য কোনো সাহায্য বা খাদ্য পাবে না। যদি বাড়িতে দু’চারটি মেহগনি ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি বিদেশি গাছ লাগান এবং সারা দেশে যদি এসব গাছ দিয়ে চমৎকার বনাঞ্চল গড়ে তোলেন, তবে সুন্দর বাগান পাবেন। কিন্তু প্রাণীরা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। এখন সেটি হচ্ছেও অনেক গাছ আছে, যার পরাগায়ন কীটপতঙ্গ ও পশুপাখি দিয়ে হয়; সেসব গাছ উৎপাদন করলে আপনার বাগানটি কেমন দেখাবে?

আম-জাম-কাঁঠালের মতো বহু গাছ আছে যেগুলো ফল দেয়, কাঠ ও ছায়া দেয় এবং প্রাণীজগতকে বাঁচায়। মেহগনি লাগালে একের ভিতর এক অর্থাৎ শুধু কাঠ পাবেন আর আম-কাঁঠাল লাগালে ফল, কাঠ পাবেন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা পাবে। অর্থাৎ একের ভিতর তিন। কিন্তু বলে লাভ নেই। ১৭৮১ সালের ইম্পেরিয়াল ফরেস্ট সার্ভিসের অধীনে সমগ্র উপমহাদেশের প্রাকৃতিক বন উজাড় করে সে জায়গায় মেহগনি ইউক্যালিপটাস, অ্যাকাশিয়া, মিনজিটি, রেইন ট্রি ইত্যাদি কত না বিদেশি গাছ এনে কৃত্রিম বনায়ন শুরু হয়েছিল। বনায়নে কিছু দেশি গাছ ব্যবহার করা হয় যেমন শাল, গর্জন ইত্যাদি। চিন্তা করেন, একটি দেশীয় গাছ হোক বা তৃণলতা হোক, তার লতাপাতা-ফুল-ফল খেয়ে কত প্রাণীর প্রজাতি বাস করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি স্থানে ছোটো-বড় যদি ১০ প্রজাতির গাছ থাকে এবং প্রতিটি গাছকে কেন্দ্র করে যদি ১০ প্রজাতির প্রাণী বাঁচে, তাহলে সেখানে অন্তত ১০০ প্রজাতির প্রাণী পাওয়া যাবে। বনে যদি দেশি গাছ থাকে তবে অন্তত ১০-১২ প্রজাতির প্রাণী পাওয়া যাবে। বিদেশি প্রজাতির গাছ হলে একটি প্রাণী দেখা যাবে কি না সন্দেহ। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক শক্তি তাদের স্বার্থে কোনো চিন্তা না করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করতে শুরু করেছিল। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, উপনিবেশবাদীরা আমাদের মঙ্গলের জন্য বনায়ন করেনি। তাদের লক্ষ্য ছিল এদেশে গাছ লাগাবে আর সে গাছ কেটে কাঠ নিয়ে যাবে নিজেদের দেশে।

আজ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য পশ্চিমা দেশের এসব মানুষ বেশি চিৎকার করছে। শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু যে পর্যন্ত আমাদের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও পরিবেশ ধ্বংস করার অপরাধ স্বীকার করে তারা তৃতীয় বিশ্বের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইবে, সে পর্যন্ত তাদের গলাবাজি অন্তত আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হবে।

তৃতীয় বিশ্বের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণী নিধনের ৮০ শতাংশ দায় যে তাদের, তা তারা বুঝলেও প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চাইবে না। কারণ তৃতীয় বিশ্বকে তারা থোড়াই পরোয়া করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৃতীয় বিশ্বের যে ক্ষতি হয়েছে, দেরিতে হলেও জাপানের সম্রাট এবং জাপান সরকার সে জন্য বারবার ক্ষমা চেয়েছেন। যুদ্ধবাজ পশ্চিমা দেশগুলোর হাতে অসহায় লাখ লাখ মানুষ বোমার আঘাতে এবং দুর্ভিক্ষের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর কাউকে সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করতে আজ পর্যন্ত শুনিনি। ক্ষমা-দুঃখ ইত্যাদি তাদের অভিধানে মনে হয় নেই! সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বৃক্ষ রোপণে জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদক (১ম) প্রাপ্ত। সদস্য বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সিলেট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত