ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খলিল পারলে অন্যরা কেন নয়

গড়ে তুলতে হবে কম লাভ করার মানসিকতা
খলিল পারলে অন্যরা কেন নয়

দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান আশার আলো ছড়াচ্ছেন। তিনি ৫৯৫ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। মানুষ দূরের পথ পাড়ি দিয়ে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আলোচিত ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের দোকান থেকে মাংস কিনছেন। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মাংসের দাম কমপক্ষে ৭৫০ টাকার কম নয়। সে ক্ষেত্রে খলিল যে দামে মাংস বিক্রি করেন তাতে কেজিতে ১৫৫ টাকার সাশ্রয় হয়। এই ব্যবসায়ী প্রতি দিন ২০টি গরু জবাই করেন এবং ২০টি গরুর মাংস বিক্রি হওয়ার পর তিনি আর নতুন করে কোনো গরু জবাই করেন না। খলিল কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তা সহজে বোধগম্য নয়। তবে তার এই মহতি কর্মকাণ্ডে রাজধানীর মাংস বিক্রেতারা বেজায় চটে গেছেন। তারা যে মানুষের কাছ থেকে গলাকাটা দাম নিচ্ছেন সেটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ কারণে অন্য ব্যবসায়ীরা ক্রেতা ও প্রশাসনের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। খলিল যাতে এমন কম দামে মাংস বিক্রি না করেন সে জন্য তাকে নাকি প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে ২০ রমজানের পর তিনি আর মাংস বিক্রি করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কেন তিনি মাংস বিক্রি করবেন না সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। প্রশ্ন হচ্ছে খলিল পারলে অন্যরা কেন পারবেন না। আর খলিল মাংসের ব্যবসা কেন বাদ দেবেন তার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করতে হবে সাধারণ ক্রেতাদের স্বার্থে। প্রতিদিন সাশ্রয়ী মূল্যে মাংস কিনতে সকাল থেকে তার দোকানে শত শত মানুষের লাইন ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। কম দামে গরুর মাংস কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খলিলের দোকানে ছুটে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গত নভেম্বরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা বা তারও বেশি ছিল। এমন বাজারেই ‘খলিল গোস্ত বিতান’ ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বেচতে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে কমতে থাকে গরুর মাংসের দাম। এরপর ৭ ডিসেম্বর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। তবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢালাওভাবে গরুর মাংস ৭০০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতেও খলিলের দোকানে গরুর মাংসের কেজি ৫৯৫ টাকা ছিল। তবে কয়েকদিন পর দাম কেজিতে ৫৫ টাকা দাম বাড়িয়ে রোজার আগ পর্যন্ত ৬৫০ টাকা করে মাংস বিক্রি করেন খলিল। আর রোজার শুরুতে দাম আবার ৫৯৫ টাকায় নামিয়ে আনেন তিনি। তার এ সিদ্ধান্ত রীতিমতো ঝড় তোলে মাংসের বাজারে। কম দামে মাংস কিনতে প্রতিদিন খলিলের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। রমজান মাসজুড়েই ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিলেও হুট করে ১০ রোজা থেকে গরুর মাংসের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে কেজি ৬৯৫ টাকা করেন। এতে সমালোচনার মুখে পড়েন আলোচিত এই মাংস ব্যবসায়ী। এ পরিস্থিতিতে ২৪ মার্চ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে বর্ধিত দাম কমিয়ে আবারও আগের ৫৯৫ টাকা দামে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত জানান খলিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের দামে অর্থাৎ ৫৯৫ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন এই ব্যবসায়ী। খলিল যদি এই দামে মাংস বিক্রি করতে পারেন তবে অন্য ব্যবসায়ীরা কেন পারবেন না সেটা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। খলিলের মাংসের গুণগত মান ভালো না হলে মানুষ কম দামেও এই মাংস কিনত না। মানুষের সামনে গরু জবাই করে বিক্রি করার মধ্যে কোনো ছলছাতুরি নেই। খলিল মাংস বিক্রি করে অবশ্যই লাভ করেন। কেননা তার দোকানে অনেক কর্মচারী রয়েছেন। আবার গরু কেনার জন্য হাটে যাওয়া গরু রাখা এবং গরুর যত্ন নেয়ার জন্যও তো মানুষের প্রয়োজন। সে কারণে লাভের টাকা দিয়ে তিনি তার কর্মচারী পোষেন। তাহলে রাজধানী শহরের অন্য মাংস ব্যবসায়ীরা কেন খলিলকে অনুসরণ করতে পারেন না। খলিল যদি তার এই মহতি কর্ম ছেড়ে দেন তাহলে সাধারণ মানুষ সংকটে পড়বে। এ কারণে খলিলের এই কাজটি যাতে অব্যাহত থাকে সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত