ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভারতীয় উপমহাদেশে শিল্পকলার উন্নয়নে মুঘল সম্রাটদের ভূমিকা

আফতাব চৌধুরী
ভারতীয় উপমহাদেশে শিল্পকলার উন্নয়নে মুঘল সম্রাটদের ভূমিকা

বিশ্ব শিল্পের ইতিহাসে মুঘল শিল্পের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। মুঘল মিনিয়েচার বা ক্ষুদ্রচিহ্ন বিশ্বের বিস্ময়। ক্যালিগ্রাফি চিত্রের ক্ষেত্রেও সুখ্যাতি পৃথিবীজুড়ে আর এসবের মূলে রয়েছে- মুঘল সম্রাটদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং সহযোগিতা। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ বাবর স্বল্পসময় রাজত্ব করলেও এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত ততটা পাকাপোক্ত করতে না পারলেও শিল্পকলার উন্নয়ন যে তখন থেকেই শুরু হয়েছে তা বিভিন্ন চিত্রে স্পষ্ট। ভোজসভা বা ভোজ উৎসবে সম্রাট বাবর নামক চিত্র এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। মূলত মুঘল সম্রাটরা তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্য সভাসদদের কর্মকাণ্ডের চিত্র আঁকিয়ে নিতেন শিল্পীদের দিয়ে। এ জন্য শিল্পী নিয়োগ দেওয়া হতো এবং তাদের সর্বোত্তভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হতো রাষ্ট্রীয়ভাবে। মুঘল সাম্রাজ্যের বিখ্যাত পণ্ডিত বা ঐতিহাসিক আবুল ফজল তার গ্রন্থ আইন-ই-আকবরিতে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করেছেন।

তিনি লিখেছেন, সম্রাট আকবর শিল্পকর্ম নির্মাণের জন্য ১০০ চিত্রশিল্পীকে তার দরবারে নিয়োগ দিয়েছিলেন যারা পারস্যের দু’জন শিল্পী মীর সৈয়দ আলী এবং আব্দুস সামাদের অধীনে কাজ করতেন। ফলে সম্রাট আকবরের সময়কালে এসব শিল্পীর মাধ্যমে ভারতীয় এবং ইসলামিক ধারার সংমিশ্রণে বিশেষ ধরনের এক নবধারার শিল্পের সৃষ্টি হয় যাকে মুঘল ঐতিহ্যের শিল্প হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

নতুনভাবে সৃষ্ট এই মুঘল ঐতিহ্যের চিত্রকর্মে ঐশ্বরিক বা আধ্যাত্মিকতার অনুভূতি যেমন স্পষ্ট, তেমনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। সম্রাট আকবর চেয়েছেন শিল্পী অঙ্কিত চিত্রে একজন দর্শক যেন পবিত্রতা, আধ্যাত্মিকতা এবং ইসলামের নীতি আদর্শের সন্ধান লাভ করতে সক্ষম হন। সম্রাট আকবরের এই ইচ্ছার প্রতিফলন যাতে চিত্রের সর্বত্র প্রকাশিত হয় সেই চেষ্টাই করতেন দরবারের শিল্পীরা।

সম্রাট আকবরের মুক্তমনা বৈপ্লবিক চিন্তাচেতনা এবং নীতি আদর্শ গোড়া ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে উদারতা শিক্ষার প্রবর্তন করে জীবনের সব ক্ষেত্রে। ঐতিহাসিক আবুল ফজল তার গ্রন্থ আইন-ই-আকবরিতে উল্লেখ করেছেন যে, সম্রাট আকবর একদিন এক জনসমাবেশে যারা চিত্রাঙ্কনকে নিরুৎসাহিত করেন, অনুমোদনহীন বলতেন, তাদের এ বক্তব্যকে যথাযথ নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বরং বলেন যে, শিল্পীরা চিত্রকর্ম করতে গিয়ে নিজ ক্ষমতা এবং বুদ্ধির সীমাবদ্ধতার কথা স্মরণ করে লজ্জিত হন এবং মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কথা স্মরণ করেন। আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের কথা অনুভব করেন। এভাবেই শিল্পীরা আল্লাহর প্রতি অনুগত হন। সম্রাট আকবর আরো বলেন, শিল্পী যখন চিত্র চর্চা করেন, তখন তিনি কোনো কিছুর আকার, আকৃতি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিংবা কর্ম নিয়ে ভাবেন, সেভাবেই কাজ করেন, কিন্তু তার পরেও তারা মহান সৃষ্টিকর্তার মতো রূপারোপ করতে না পারার বিষয়টি মর্মে উপলব্ধি করেন এবং সেই সঙ্গে সেগুলোতে জীবন দান করার অক্ষমতার কথাও ভাবেন। এভাবেই শিল্পীরা তাদের চিত্রকর্মের মাধ্যমে আল্লাহ এবং তার অসীম ক্ষমতার কথা বারবার স্মরণ করেন।

সম্রাট আকবর চিত্রকর্মকে ভাষা হিসাবে গণ্য করতেন। তাই তিনি চিত্রের মাধ্যমে বিষয় উপস্থাপনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে বিশাল গ্রন্থে অসংখ্য কাহিনি ও বক্তব্য প্রদান চিত্তাকর্ষক চিত্রের সমাহার ঘটেছে। যেমন দস্তা-ই-আমির হামজা, আকবরনামা প্রভৃতি। বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য শিল্পী এসব হস্তলিখিত গ্রন্থ (ম্যানাস্ক্রিপ্ট) অলঙ্করণের কাজ করতেন। দাস্তান-ই-আমির হামজার চিত্রাঙ্কনের কাজসম্পন্ন করতে একদল শিল্পীর সময় লেগেছে ১৫ বছর। হস্তলিখিত এ গ্রন্থে ১৪০০ চিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। এসব চিত্রে নানা ধরনের কাহিনি বিধৃত হয়েছে। যেসব চিত্র দর্শনেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে কাহিনি বা গল্পের বক্তব্য। আকবরনামার একটি চিত্রের নাম ‘সম্রাট আকবরের হরিণ শিকার’।

কোনো এক পাহাড়ি জঙ্গলে সম্রাট আকবর তার পরিবারের সদস্য ও অসংখ্য অনুচরদের নিয়ে হরিণ শিকারে ব্যস্ত। সম্রাটসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ঘোড়ার পিঠে উপবিষ্ট। অনেকেই বন্দুক-বল্লাম হাতে হরিণকে তাড়া করেছেন। ভীত সন্ত্রস্ত হরিণ সম্মুখ পানে ছুটে চলেছে। কোথাও বা সিংহ হরিণ ভক্ষণে ব্যস্ত। সম্রাট আকবর একটি হরিণকে লক্ষ্য করে ঘোড়া ছটিয়ে চলেছেন। হরিণের সঙ্গে জঙ্গলের অন্যান্য ছোট বড় জীবজন্তুও ছুটেছে প্রাণ বাঁচাতে। সব মিলে অপূর্ব শিকার দৃশ্যের চিত্র। এ চিত্রে কে কোথায় কী ভূমিকা পালন করছেন তা স্পষ্ট। এ চিত্রের বিষয় অনুধাবন করতে গ্রন্থে লেখা কোনো কাহিনি পড়ার প্রয়োজন পড়ে না। চিত্র দেখেই বোঝা যায়, চিত্র দেখেই অনুধাবন করা যায় ঘটনার পরম্পরা। কারণ প্রতিটি চিত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এবং গুরুত্বহীন বিষয়কেও এতটাই গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে যে, যে কোনো অক্ষর জ্ঞানহীন দর্শকও চিত্রে কী ঘটেছে তা স্পষ্টরূপে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। শিল্পীরা কখনো কোনোরূপ সমস্যা অনুভব না করার কারণেই এতটা সূক্ষ্মভাবে প্রতিটি চিত্র অঙ্কন করতে সক্ষম হয়েছেন সম্রাটদের অকৃপণ উদারতার কারণে।

সম্রাট আকবর যে, শুধু ইসলামী চিত্র কলা নিয়েই ভেবেছেন তা নয় তিনি হিন্দু ধর্ম নিয়েও ভেবেছেন এবং সে বিষয়েও চিত্রঙ্কনের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থ ‘রজমণ্ডনামা’ অর্থাৎ মহাভারতের চিত্রাঙ্কনেরও ব্যবস্থা করেছেন। রজমণ্ডনামাতে ১৬৯টি দৃষ্টিনন্দন চিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। এই গ্রন্থের কাজসম্পন্ন হয় ১৫৮৯ সালে। শিল্পী দাসোয়ান্তের নেতৃত্বে একজন শিল্পী এ কাজসম্পন্ন করেন। কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে সম্রাট আকবর চার লাখ রুপি শিল্পদের প্রদান করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। সম্রাট আকবরের আর এক স্মরণীয় কীর্তির নাম ‘আকবর নামা’।

আকবর-নামা মূলত আকবরকে নিয়ে রচিত হস্তলিখিত (ম্যানস্ক্রিপ্ট) গ্রন্থ। গ্রন্থে সম্রাট আকবরের প্রশন্তি গাওয়া হয়েছে। সম্রাট আকবরের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বলা যায় সম্রাট আকবরের শাসনকালের পুরো ঘটনা এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। আর এসব ঘটনার বর্ণনা করতে অসংখ্য শিল্পী অপূর্ব সুন্দর চিত্র এঁকেছেন। এ গ্রন্থে মুঘল সাম্রাজ্যের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সম্রাট আকবর ১৫৭৪ এ এক রেকর্ড অফিস স্থাপন করেন এবং তার দরবারের অভিজ্ঞতা প্রবীণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করেন। ঐতিহাসিক পণ্ডিত আবুল ফজল গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তিনি এ গ্রন্থের প্রথম অংশ সম্পন্ন করে সম্রাট আকবরের হাতে অর্পণ করেন। সম্রাট আকবর এ গ্রন্থে রচনার সময় নিজেও খোঁজখবর রাখতেন। গ্রন্থের চিত্রগুলো কতটা সম্পন্ন হলো, চিত্রগুলো কেমন হলো কী হওয়া উচিত, ইত্যাকার বিষয়ে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে দিকনির্দেশনাও দিতেন। পণ্ডিত আবুল ফজল সম্রাট আকবরের পরামর্শ কিংবা দিকনির্দেশনার কতটা বাস্তবায়ন হলো যে বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে সম্রাট আকবরকে জানাতেন এবং গ্রন্থের অংশগুলো উপস্থাপন করতেন। প্রবীণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করে রচনার সময় নিজেও খোঁজখবর রাখতেন। গ্রন্থের চিত্রগুলো কতটা সম্পন্ন হলো, চিত্রগুলো কেমন হলো কী, হওয়া উচিত, ইত্যাকার বিষয়ে শিল্পীদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিতেন। পন্ডিত আবুল ফজল সম্রাট আকবরের পরামর্শ কিংবা দিকনির্দেশনার কতটা বাস্তবায়ন হলো সে বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে সম্রাট আকবরকে জানাতেন এবং গ্রন্থের অংশগুলো উপস্থাপন করতেন। এসব তথ্য লাভের পর সম্রাট নিজে এসব বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন এবং চিত্রের নান্দনিক বিষয়ে এবং রঙ প্রয়োগের যৌক্তিকতার বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। ফলে কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পীসহ সবাই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সব কাজ সম্পন্ন করতেন। সম্রাট আকবর তার সময়কালে ২৪ হাজার ম্যানস্ক্রিপ্ট সংগ্রহ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন। এসব ম্যানাস্ক্রিপ্টের প্রতিটি সুন্দরভাবে লিখিত এবং অলঙ্কৃত ছিল, ম্যানাস্ক্রিপ্টের মধ্যে ছিল সম্রাট পরিবারের সদস্য আত্মীয়স্বজন এবং সভাসদদের যৌবনদীপ্ত অভিব্যক্তি এবং নান্দনিক বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হতো। চিত্রে ব্যক্তির শরীরী সৌন্দর্য, উচ্চতা এবং অনুপাতকে গুরুত্ব দিয়ে অঙ্কন করা হত। মাথার চুল এবং দাড়িও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিত্রিত হত।

যাতে কোনো রূপ অস্বাভাবিকতার কারণে ব্যক্তিবিশেষের চেহারার বিকৃতি না ঘটে। ফলে চিত্রগুলো জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। হয়েছে যথাযথ এবং রসসিক্ত। সম্রাট আকবর স্বর্ণমুদ্রা প্রবর্তন এবং মুদ্রায় ক্যালিগ্রাফ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। সম্রাট আকবর চিত্রকর্মের ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন, তেমনি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বর্ণমুদ্রার ক্ষেত্রেও। এসব মুদ্রা বিভিন্ন আকৃতির হতো। গোলাকার, বর্গাকার, আয়তাকার। এছাড়াও এক ধরনের মুদ্রা হতো যাকে মেহরাবি মুদ্রা বলা হত। মুদ্রা প্রচলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সম্রাটদের নাম অমর করে রাখা। এ জন্য মুদ্রায় সম্রাটদের নাম খোদাই করা থাকত। এছাড়া চার খলিফা আবু বকর, ওমর, ওসমান এবং আলীর নাম সংবলিত মুদ্রার প্রচলনও ছিল সে সময়। পবিত্র কুরআনের আয়াত অর্থাৎ কালেমার সাহায্যেও সুন্দর ক্যালিগ্রাফি সৃষ্টি করা হত, কোনো রাজ্য কিংবা দেশ, শহর কিংবা দুর্গ দখল করলেও সেই বিজয় উপলক্ষেও নতুন নতুন মুদ্রার প্রচলন করা হতো। যাতে লতাপাতাণ্ডফুল এবং পাখির চিত্র থাকত। অপর প্রান্তে থাকত সন, তারিখ এবং টাঁকশালের নাম। অপূর্ব সুন্দর হতো এসব মুদ্রা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণকারী সম্রাট আকবর সর্বক্ষেত্রে মুঘল সা¤্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠা করার কারণে তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীরকে মুঘল সা¤্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনোরূপ বেগ পেতে হয়নি। ফলে তিনি শিল্প সংস্কৃতির উন্নয়নে মনোনিবেশ করার যথেষ্ট সময় এবং সুযোগ পেয়েছিলেন। বাবার মতো তিনিও অত্যন্ত শিল্পানুরাগী সম্রাট ছিলেন। ফলে চিত্রকলার উন্নয়নে শিল্পীদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চিত্রকর্ম ইরানের প্রভাবমুক্ত হয়ে পুরোমাত্রায় মুঘল ধারায় রূপান্তরিত হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর ক্যালিগ্রাফি চিত্রের ব্যাপক প্রচলন করেন এবং ইসলামি শিল্পকলার উন্নয়ন ঘটান।

ম্যানাস্ক্রিপ্ট এবং প্রতিকৃতি চিত্রে যেমন উন্নয়ন সাধন করেন, তেমনি দেওয়াল চিত্রেরও প্রচলন করেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রসাদের দেওয়ালে শিল্পীদের দ্বারা চিত্রাঙ্কন করিয়েছিলেন। রাজপুত্র হিসাবে জাহাঙ্গীর তার বাবা সম্রাট আকবরের শিল্পীদের ওয়ার্কশপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে বাবার আদর্শে যেমন নিজেকে গড়ে তুলছেন, তেমনি শিল্পীদের প্রতিও অধিক শ্রদ্ধাশীল হতে পেরেছিলেন। শ্রদ্ধার সঙ্গে তিনি শিল্পীদের মূল্যায়ন করেছেন। তিনি তার ব্যক্তিগত শিল্পী হিসাবে ইরানের শিল্পী আগা রেজাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি দক্ষ শিল্পীদের পুরস্কৃত বা সম্মানিত করতেন। তুজুক-ই-জাহাঙ্গীর স্বার্থকভাবে অলঙ্কৃত করার জন্য তিনি শিল্পী আবুল হাসানকে সম্মানিত করেছেন। বাজপাথি মুঘল সম্রাটদের অতি প্রিয় পাখি। সম্রাট জাহাঙ্গীর এই পাখি খুব পছন্দ করতেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর পারস্য দেশ থেকে একটি বাজপাখি সংগ্রহ করেছিলেন। এই বাজপাখির সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, এই পাখির রঙ এতই মনোমুগ্ধকর, এতই সুন্দর যে, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বাজপাখির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রিয় শিল্পী মনসুরকে সেই বাজপাখির চিত্র আঁকতে বলেন। সম্রাটের নির্দেশ পেয়ে তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে বাজপাখির চিত্র এঁকেছিলেন। অপূর্ব সুন্দর হয়েছিল। পাখির চিত্রটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে। শিল্পী মনসুর অসংখ্য পাখির চিত্র এঁকেছেন। কারণ সম্রাট জাহাঙ্গীর পশুপাখি খুব পছন্দ করতেন। তিনি পছন্দ করতেন বলেই শিল্পী মনসুরকে দিয়ে সেগুলোর চিত্র আঁকিয়ে নিতেন। সাদা বক, তুর্কি মোরগ, হরিণসহ বহু চিত্র এঁকেছেন মনসুর এবং এসব চিত্র এঁকে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে তার প্রচেষ্টায় মুঘল শিল্পকলার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়ে মুঘল শিল্পের সুখ্যাতি। মুঘল সম্রাটদের প্রায় সবাই শিল্পকলার উন্নয়নে কমবেশি সহযোগিতা করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত