ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভুল নিয়ে নয়, জীবন ফুলের অপেক্ষা করুক!

রাজু আহমেদ
ভুল নিয়ে নয়, জীবন ফুলের অপেক্ষা করুক!

জবান এবং মন একসূত্রে গাঁথা না হলে তারা মানুষের বিশ্বস্ত হতে পারে না। কেউ আপনাকে ভরসা করে, মন খুলে সব বলতে পারে, অন্ধকারেও আপনার সঙ্গে চলতে পারে কিংবা দিনশেষে আপনার কাছে নির্ভাবনায় ফিরতে পারে-এই গুণগুলো যদি কারো মধ্যে থাকে, তবে সে সত্যিকারেই অনন্য। সাধারণের মধ্যেও অনন্য সাধারণ। ঠকাতে তো অনেকেই পারে, তবে যারা জেতাতে পারে, অনুভূতি মূল্যায়নের বিবেচনা রাখে, মান-অভিমানের ভাষার খোঁজার ধৈর্য দেখায় তারা কাউকে আটকায় না এবং নিজেরাও ভুলের কাছে আটকে না।

যারা কথায় কথায় প্রতিশ্রুতি ভাঙে, সমতার প্রশ্নে স্বার্থ এগিয়ে রাখে, ভরসার প্রশ্নে নিজের পক্ষ ভারী করে তারা বন্ধু হতে পারে না। প্রয়োজন এবং প্রিয়জনের মধ্যে যে তফাৎ তা বুঝলে তবেই মানুষ মানুষের আপন হয়ে ওঠে। বাসনা এবং এষণা যাদের পিঠাপিঠি না হয়, তারা আপন হতে পেরেছে- এমন দৃষ্টান্ত কম। যারা ঘরের মানুষের আপন হয় না তার পর মানুষের জন্যও নিরাপদ নয় সুখের নেয়ামক তো নয়-ই। মুখের কথা এবং মনের আকাঙ্ক্ষা সমসূত্রের হলে শান্তি আসে, স্বস্তি মেলে। তখন জীবনের সুখ-দুঃখ কারো সঙ্গে একাকার হয়।

বেঁচে থাকার মধ্যে স্বার্থকতা প্রতিফলিত হয়। জীবনের নিগুঢ় অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। আত্মিক সুখ বাড়ে। কেউ একা ভালো থাকতে পারে না। যে মানুষগুলোর সঙ্গে নিত্যদিনের কথা, যে মানুষেরা ভরসা করে বাঁচে, দিনশেষে যাদের কাছে ফিরতে হয়, তাদের ঠকিয়ে সুখের ঠিকানা পাওয়া কঠিন। মনের মধ্যে ভিন্নতা লালন করে মুখে অনন্যতা ধরে রাখলে তা স্থায়িত্ব পায় না। মুখোশ ছিঁড়ে একদিন মুখ বেরিয়ে আসে। পোশাক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে চরিত্র। যে কথা মনের কথা সে কথাই বিশ্বাসের ভিত্তি হওয়া উচিত।

সুখের মিষ্টি কথায় মন ভেজালে সত্য প্রকাশিত হতেই তা শুষ্ক হতে শুরু করে। তখন মানুষ হেরে যায় অমানুষের কাছে এবং সম্পর্ক হারিয়ে যায় বেলাশেষে! আমরা বারবার মানুষ চিনতে ভুল করি এবং দুঃখ পাই। মানুষের মিষ্টি কথার প্রেমে পড়ে যখন কাছাকাছি আসি, তখন মনে হয় ভুল হয়ে গেছে বিলকুল। মুখ ও মুখোশের পার্থক্য ধরতে না পেরে নোনাজলের দরিয়ায় সাঁতরাই! মানুষের ওপর থেকে চিরতরে বিশ্বাস উঠে যায়।

অথচ যদি চোখ পড়তে পারতাম, অবয়বের ইশারা নিয়ে ভাবতাম তবে মানুষের আসলরূপের বহুলাংশ প্রতিভাত হতো। আড়ালে কাঁদার, মন খারাপে জিমিয়ে পড়ার, এক মানুষের আঘাত পেয়ে কিংবা বিশ্বাসের ঘরে কারো থেকে বিশ্বাসঘাতকতার আঘাত খাওয়ার কারণে ডুবতাম না। ভাগ্যকে আজকাল যতটা দোষারোপ করি, ততটা দোষ ভাগ্যের আসলেই ছিল কি-না, সেটা অনুধাবনের ক্ষমতা তখন থাকত! ভুল পথ এবং ভুল মত- দুটোই জীবনের শান্তি কেড়ে নেয়।

আমরা জেনে-বুঝে ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতেই থাকি। মনের বিশ্বাস মুখে এনে মানুষকে আশ্বস্ত করার প্রয়াসের কার্পণ্যে অন্যের জীবনটাকে বারবার পোড়াই। এই অরূপের কারসাজিতে অপরের থেকে আঘাত খেয়ে নিজের জীবনকে সীমাহীন ভোগাই। অথচ যদি বিশ্বাসের কথা অকপটে বলতাম তবে কপট ভালোবাসার ক্ষতি কমে আসত। ভালোবাসা না থাকলেও ঘৃণার ফোয়ারায় দুঃখ-বেদনা উপচে পড়তো না। তখন কেউ আপনের অভিনয় করত না বরং আপন হতো। কারো নামে পেছনে বদনাম করার রেওয়াজ সমাজ-সংসার থেকে উঠে যেত। মানুষ মানুষর জন্য ভুল নিয়ে নয়, ফুল নিয়ে অপেক্ষা করত। মন খুলে ভালোবাসা উজাড় হতো। ভালো থাকাই জীবনের পরিণাম হতো। অথচ আমরা অল্প-বিস্তর বদনাম নিয়ে ঘুরি। সত্যের অপলাপ ফেরি করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত