ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার বিক্রি

জোর দিতে হবে পরিচ্ছন্নতার ওপর
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার বিক্রি

দেখতে দেখতে পবিত্র রমজান মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেল। রোজার অবশিষ্ট দিনগুলো যত কমে আসছে, ফুটপাতে ইফতারসামগ্রীর বৈচিত্রতাও ততো বাড়ছে। রমজান মাসে ফুটপাতে বাহারি ইফতারির দোকানগুলো মানুষের মন আকর্ষণ করে। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় পড়ন্ত বিকাল থেকে বসে ইফতারসামগ্রীর পসরা। বিভিন্ন ধরনের মুখোরোচক ইফতারির পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এসব মুখোরোচক খাবার কিনতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। স্বল্প আয়ের মানুষ যে শুধু ফুটপাাত থেকে ইফতারসামগ্রী কেনে তা নয়। সম্পদশালী মানুষও ফুটপাত থেকে ইফতারি কিনে খান। তবে ফুটপাতে ইফতারসামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব ইফতারসামগ্রী স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কর্মব্যস্ত মানুষ ঘরে ইফতারসামগ্রী তৈরি না করে ফুটপাত থেকে কিনে খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে রাস্তার ধুলা-বালু, যানবাহনের ধোঁয়া ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে ইফতারসামগ্রী। সেই সঙ্গে রয়েছে বিক্রেতাদের অপরিচ্ছন্নতা এবং খাবার সংরক্ষণের অনিয়ম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, অনিরাপদ খাদ্যের দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে নজর দিতে হবে এসব খাবারের মান উন্নয়নের দিকে। রাস্তার পাশে বিক্রি করা ইফতারি অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর জেনেও মানুষ কিনছে। যারা পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন না, তারা ফুটপাতের ইফতারের ওপর নির্ভর করে থাকেন। ক্রেতারা নিজেরাও জানেন এসব খাবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। অথচ করার কিছু করার নেই।

রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ইফতারি বিক্রি বন্ধ করা বাস্তবিক অর্থে সম্ভব নয়। তরে ইফতারির মান রক্ষা করার জন্য প্রশাসন আরো বেশি তৎপর হতে পারে। উন্মুক্ত স্থানে ধুলাবালু ও নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করতে থাকেন বিক্রেতারা। ইফতারসামগ্রী ঢেকে রাখাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

অধিকাংশ রাস্তার পাশে ময়লার স্তূপ ও ড্রেনের মশা মাছি ইফতারসামগ্রী ঘিরে উড়াউড়ি করে। ইফতার ‘ঢেকে রাখলে মানুষ দেখে না তাই বিক্রি কম হয়। এ অজুহাতে নাকি ইফতারসামগ্রী খোলা রাখা হয়। বিক্রেতাদের অভিমত ‘ঢেকে রাখলে গরম ইফতারসামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় বলে বেশি ধুলাবালু পড়ে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর মতে- ‘রাস্তার পাশে যে সব ইফতারি বিক্রি হয়, সেগুলো বেশিরভাগই থাকে খোলা। বাংলাদেশের বাতাস পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস। আমাদের বাতাসে যে দূষণ থাকে, সেগুলো ওই খোলা খাবারের ওপরে পড়ে। এতে খাবারগুলো দূষিত হয়। ওই খাবার খেলে পাতলা পায়খানা, বমি যেমন হয়, তেমনই পাকস্থলীর হজমের কাজটিও বিঘ্নিত হয়।

এ সব খাবার তৈরিতে যে পানি ব্যবহার হয়, সেগুলোও নিরাপদ নয়। ওই ইফতারি খাওয়ার কারণে পানিবাহিত রোগও হতে পারে। আবার এ খাবারগুলো অতি ভাজার কারণে খাবারের গুণগত মান যেমন নষ্ট হয়, তেমনই অতি ভাজা খাবার ক্যান্সার তৈরিতে সহায়ক। ‘রাস্তার পাশের দোকানের ইফতারসামগ্রীর সাধারণত দাম কম। এই কম দাম রাখার জন্য বিক্রেতারা একই তেল বার বার ব্যবহার করেন। এতে তেলের গুণ নষ্ট হয়ে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। যেটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও রক্ত সরবারহকারী ধমনির ভেতরের নলটিকে সরু করে দেয়। একইসঙ্গে এটিও ক্যান্সার তৈরির উপাদান।’ ‘রাস্তার পাশের খাবার রোজাদারদের পরিহার করাই উত্তম। যারা বাসার ইফতার করতে পারেন না, তারা বাসায় তৈরি ইফতারি সঙ্গে বহন করতে পারেন।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যদি নজরদারি করা হয় এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার যারা তৈরি করেন, যদি তাদের আইনের আওতায় আনা যায়, তাহলে এসব খাবারের মানও কিছুটা উন্নয়ন করা যাবে। ওয়াসার পানি যেন নিরাপদ ও সুপেয় হয়, সে দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে। জনগণকে প্রতিনিয়ত বিক্রেতাদের প্রশ্ন করতে হবে খাবার খোলা কেন, পানির উৎস কী। একইসঙ্গে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষকেও জানাতে হবে। মাঝেমধ্যে কর্তৃপক্ষ যদি খাবার পরীক্ষা করে তাহলে রাস্তার পাশের খাবারের মান উন্নত হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত