ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করাই জীবন

এসএম মুকুল
সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করাই জীবন

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের গুরুত্ব রয়েছে। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য না ঝাঁপালে জীবন সাদামাটাই থেকে যাবে। তবে এর জন্য বিপর্যয়ের ঝাঁপটাও পোহাতে হয়। আমার মতে, সৃজনশীলতা ‘ম্যানেজেরিয়াল’ নয়, বরং ‘ইম্যাজিনেরিয়াল’ কনসেপ্ট। কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়ার অর্থ প্রেরণা জোগানো। স্ট্যাটিসটিক্স আর সংখ্যা দিয়ে শুধু ব্যাংকার আর স্টক ব্রোকারদেরই অনুপ্রাণিত করা যায়। কারণ প্রেরণার সঙ্গে আবেগের যোগ রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা অর্জন করতে হলে চিন্তাশক্তির জোর থাকতে হবে। ভাবনা আবদ্ধ থাকলে সৃজনশীলতা বাধা পায়। জীবনের চড়াই-উতরাই আপনি তখনই উপভোগ করবেন, যখন দুই চোখ খোলা রেখে সব চ্যালেঞ্জকে আহ্বান জানাবেন। সৃজনশীলতায় ভর করে প্রকৃত সাফল্য পেতে গেলে ‘পজিটিভ ভাইবস’ খুব জরুরি। আর তা তখনই সম্ভব, যখন অন্যদের জন্য ভালো কিছু করার জিগির থাকবে আপনার মধ্যে। সেটিই যে কোনো সৃজনশীল নেতার মূল ভিত্তি। একথাগুলো নন্দিত অভিনেতা নায়ক শাহরুখ খানের। বলিউডে অন্যতম এ অভিনেতা ভারতের বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএমবি) আয়োজিত আইআইএমবি লিডারশিপ সামিটে এই বক্তব্য দেন যা টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়।

তার মতে জীবনের সারসত্য হলো কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রম ছাড়াই স্বপ্নের উড়ান গতি পাবে, এটি ভাববার অর্থ মূর্খের স্বর্গে বাস করা। তিনি বলেন, আমি কোনো দিন নিজের লক্ষ্য স্থির করি না। বক্স অফিসে কয়েকশ’ কোটি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যেও ঝাঁপাই না। কারণ এ ধরনের লক্ষ্য স্থির করার অর্থ নিজেকে বিভ্রান্ত করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের গুরুত্ব রয়েছে। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য না ঝাঁপালে জীবন সাদামাটাই থেকে যাবে। তবে এর জন্য বিপর্যয়ের ঝাঁপটাও পোহাতে হয় লিডারদের। তিনি আরো বলেছেন, ব্যর্থতায় পিছিয়ে এলে চলবে না। বরং ক্রিজে টিকে থেকে মোকাবিলা করতে হবে। আমি বিশ্বের অনেক সফল করপোরেটের সংস্পর্শে এসেছি। আমি বিশ্বের অনেক সফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি, কাছ থেকে দেখেছি, তাদের কখনো জটিল মনে হয়নি। তাদের আইডিয়া পরিষ্কার এবং তারা সোজাসাপ্টা কথা বলেন। আইনস্টাইন বলতেন, ‘আমার কোনো বিশেষ প্রতিভা নেই। আমি শুধু মনেপ্রাণে কৌতুহলী।’ তার কথাটিও দারুন। মিউনিখ শহরের নেতৃস্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মিউনিখ জিমনেসিয়ামের এক শিক্ষক তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি কখনোই কোনো কিছুকে পূর্ণতা দিতে পারবে না, আইনস্টাইন।’ যে মানুষটি শৈশবে দেরিতে কথা বলতে শিখেছিলেন, যার একাডেমিক ফলাফল দেখে কোনো শিক্ষক আশান্বিত হতে পারেননি, যিনি প্রথাগত শিক্ষায় বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন, সেই মানুষটি এক বছরে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। আইনস্টাইনের বয়স যখন ১৫ বছর তখন এক শিক্ষক তাকে স্কুল ছাড়ার জন্য জোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই শিক্ষক মন্তব্য করেছিলেন, ‘তোমার উপস্থিতি আমার প্রতি ক্লাসের সম্মানকে নষ্ট করে দেয়।’ আইনস্টাইন এই পরামর্শকে সাগ্রহে গ্রহণ করে ইতালির উত্তরাঞ্চলে কয়েক মাস উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। আইনস্টাইন সবসময় মহাবিশ্বের রহস্যময় সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন, তিনি এই আপাত অভেদ্য রহস্যকে ভেদ করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়েকজন মানুষ তাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের চারপাশের জগতকে পুনর্নিমাণ করেছেন তাদের মধ্যে আইনস্টাইনের নাম প্রণিধানযোগ্য। তিনি যেমন একজন বৈজ্ঞানিক রোল মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তেমনি সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতির বিষয়ে ছিলেন সচেতন। আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য তিনি চিরস্মরণীয় আছেন। বিশিষ্ট বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারক কার্ল সেগানের মতে, আইনস্টাইন না থাকলে ১৯২০-এর দশকের পরবর্তী সময়ের নবীন বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক কর্মোদ্যোগের কথা জানতেই পারতেন না। আইনস্টাইন যে সর্বকালের অন্যতম সেরা পদার্থবিজ্ঞানী হতে পারেন এমন সম্ভাবনার কথা কয়েকজন ইউরোপীয় পদার্থবিজ্ঞানী ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলেন। এরপরও আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে তার কাজ বিতর্কিত ছিলো। একজন নেতৃস্থানীয় জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী একটি চিঠিতে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পদে আইনস্টাইনের জন্য সুপারিশ করতে গিয়ে তাকে সত্যিকারের একজন উৎকৃষ্ট চিন্তাবিদ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন, যদিও তিনি আপেক্ষিকতাবাদকে একটি প্রকল্পিত প্রমোদ ও ক্ষণিকের বিকার হিসেবে ইঙ্গিত করেছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত