ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিবেশ দূষণে অকাল মৃত্যু

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় চাই নির্মল প্রকৃতি
পরিবেশ দূষণে অকাল মৃত্যু

বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। আর এতে তুলনামূলক বেশি ক্ষতি হচ্ছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু, বয়স্ক এবং নারীদের। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশ দূষণে দুই লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণের কারণে। এছাড়া দূষণের কারণে সে বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি অ্যানভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সিসা দূষণই অকাল মৃত্যুর প্রধানতম কারণ। ফলে বছরে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন দিন (৫২২ কোটি দিন) অসুস্থতায় অতিবাহিত হয়। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ। গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংসাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে, পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না। তিনি বলেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চণ্ডমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষা অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশ দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্য উৎসগুলো থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো এবং জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসা দূষণ প্রতিরোধ করা গেলে বছরে এক লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকাতে পারে। সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় সবুজ জ্বালানির ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানা থেকে দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বায়ুদূষণ কমাতে পারে। সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা, সবুজ অর্থায়ন বাড়ানো, কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং সচেতনতা বাড়ানো দূষণ কমাতে পারে এবং এর ফলে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জন হতে পারে। পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার জন্য সুশাসন জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে এই প্রতিবেদনে পরিবেশগত অগ্রাধিকারগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ, পরিবেশ নীতি পদ্ধতিগুলোর বৈচিত্র্যকরণ ও জোরদারকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদারকরণ এবং সবুজ অর্থায়নের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই পরিবেশ এবং প্রকৃতি নিয়ে যে পরিবেশ তাই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ। বর্তমান বিশ্বে প্রকৃতিকে মানুষ যেভাবে ব্যবহার করছে তার প্রভাবে পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বর্তমানকালে পরিবেশ যেভাবে বিপন্ন হওয়ার মুখে তা পূর্বে এতটা আলোচিত হয়নি। পরিবেশে জীবের স্বাভাবিক অবস্থা বা জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টিতে সক্ষম ক্ষতিকর অবস্থার নাম দূষণ। অন্যদিকে পানি, বাতাস, মৃত্তিকা বা পরিবেশের কোনো উপাদানের ভৌত, রাসায়নিক বা জৈবিক যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিবর্তনই প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণ। যেসব উপাদানের কারণে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয় পরিবেশের সেই সকল উপাদানকে পরিবেশ দূষক বলে। মানুষের বহুমুখী কর্মকাণ্ডই পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের কারণসমূহকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ এবং অপরটি হচ্ছে মানবসৃষ্ট কারণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে, বন্যা ও খরা, ভূমিকম্প ঘূর্ণিঝড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত; আর প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে গাছপালা নিধন, পাহাড় কর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন কীটনাশক ব্যবহার, ভূ-গর্ভস্থ পানি আহরণ, শিল্প বর্জ্য ও জ্বালানি দহনের নির্গত ধোঁয়া। পরিবেশ দূষিত হলে সার্বিকভাবে প্রাণি ও উদ্ভিদজগতের উপর প্রভাব পড়বে। এরইমধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন- বায়ু, পানি, মৃত্তিকা দূষণমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের চারপাশের দূষিত পরিবেশ জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে। কল-কারখানা, যানবাহন বা ইটভাটার কালো ধোঁয়া বায়ুকে দূষিত করে। আর এই দূষিত বায়ু শ্বাস গ্রহণের সময় শরীরে প্রবেশ করে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। সর্দি কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, শ্বাস গ্রহণে বিঘ্ন ঘটে এবং বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার চামড়া শিল্পে কাঁচা চামড়া পচন রোধ করার জন্য চামড়ার ভিতরে ভাঁজে ভাঁজে লবণ দেয়া হয়। যখন এই চামড়া ধোঁয়া হয় তখন দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষারকীয় পানি বের হয়। এগুলো বাতাস ও পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই বলা যায় যে, প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের ফলে প্রাণি ও উদ্ভিদজগতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। সে কারণে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় নির্মল প্রকৃতি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত