জাকাতের গুরুত্ব ও পরিত্যাগকারীর শাস্তি

ম: শাহনাজ সুলতানা লুনা

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে জাকাত অন্যতম। ঈমান আনয়নের পর সালাতের মতোই জাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র কুরআনে একাধিকবার সালাতের পাশাপাশি জাকাতের আলোচনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন। সুরা বাকারা : ১১০।

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা সালাত আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেব।’ সূরা নিসা : ১৬২। উক্ত আয়াতে সালাত কায়েমকারী ও জাকাত প্রদানকারীর জন্য পরকালে আল্লাহ তায়ালা ‘আজরুন আজীমের’ প্রতিশ্রুত দিয়েছেন। সালাত যেমন প্রতিটি বিবেকসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মুসলমানে ওপর ফরজ। এমনই স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত আদায় করা ফরজ।

জাকাতের মধ্যে পার্থিব ও পরকালের কল্যাণ নিহিত। প্রত্যক্ষভাবে জাকাত আদায়ের দ্বারা সম্পদ কমে গেলেও মূলত সম্পদ কমে না। জাকাত শব্দের অর্থই হলো- পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা, বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। এই কলুষিত সমাজে অসাধুতার বিষাক্ত বাতাস সর্বদাই বইছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই উপার্জিত সম্পদের মধ্যে অপবিত্রতার মিশ্রণ ঘটতে পারে।

বছরে একবার জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদের এই অপবিত্রতা দূর করে সম্পদকে পরিশুদ্ধ করা আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে নবী!) তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ কর, যার মাধ্যমে তুমি তাদের পবিত্র ও বরকতপূর্ণ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর।

নিশ্চয়ই তোমার দোয়া তাদের পক্ষে প্রশান্তিদায়ক। আল্লাহ সব কথা শোনেন, সবকিছু জানেন। সূরা তাওবা : ১০৩। আয়াতের দ্বারা প্রতীয়মান হয়, জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পরিশুদ্ধ হয়। সম্পদ বৃদ্ধি পায়। সম্পদ বরকতময় হয়। এছাড়া পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা খাঁটি মুমিন, পুণ্যশীল, সৎকর্মপরায়ণ, মুমিনের বন্ধু, মসজিদ আবাদকারী ইত্যাদির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনার ক্ষেত্রে সালাত ও জাকাত অপরিহার্যভাবে উল্লেখ করেছেন।

পবিত্র কুরআনে জাকাত আদায়কারীর জন্য যেমন রয়েছে ইহকাল ও পরকালের সুসংবাদ।

তেমনই জাকাত পরিত্যাগকারীর জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তির বার্তা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটা তাদের জন্য অমঙ্গল।

যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও যমীনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবগত।- সূরা আল ইমরান : ১৮০।

যারা কৃপণতাবশত জাকাত প্রদান করেনা তাদের জন্য উক্ত সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ততার কারণ হবে।

গচ্ছিত সম্পদের জন্য কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণায় যদিও তারা মনে করে জাকাত প্রদান করা অমঙ্গল প্রকৃতপক্ষে তা অমঙ্গল নয়। এছাড়া আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও।

যে দিন সে ধন-সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দ্বারা তাদের কপাল, তাদের পাঁজর ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে (এবং বলা হবে) এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যে সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে, তার মজা ভোগ কর।- সূরা আত তাওবা : ৩৪-৩৫।

হাদিসের মধ্যেও জাকাত প্রদান না করার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুমকি রয়েছে। হযরত আবু বকর (রা.) এর মতো নরম তবিয়তের মানুষ জাকাতের ব্যাপারে একটু হেরফের হওয়ার কারণে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

রাসুল (সাঃ) গরিব অসহায়দের মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ধনীদের সম্পদের মাঝে তোমাদের নির্দিষ্ট হক রয়েছে! পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে। প্রার্থী এবং বঞ্চিতদের।- আল মা’আরিজ : ২৪-২৫।

সুতরাং, অসহায়ের প্রতি দয়া করার মনমানসিকতা নিয়ে জাকাত প্রদান করা আদৌও ঠিক নয়। তাদের নির্দিষ্ট হক তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত করা এটাই হবে জাকাত প্রদানকারীর চিন্তা ও চেতনা। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক। সমস্ত সম্পদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসাব করে নির্দিষ্ট অংশ জাকাত দেওয়ার তাওফিক দান করুক। আমিন।