বুয়েটে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ

নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কেন এমন রাজনৈতিক চর্চা

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনের মাঠে নামা- জাতির জন্য রীতিমতো অশনিসংকেত। কেন পড়ার টেবিল ও পরীক্ষার হল ছেড়ে তাদের রাজপথে নামতে হবে, সেই প্রশ্ন প্রতিটি সচেতন মানুষের। বুয়েট প্রশাসন কীভাবে বিষয়টি সমাধান করতে পারবে, সেটা তাদের নিজস্ব বিষয় হলেও বিবেকবান মানুষ আতঙ্কিত। বুয়েটের ছাত্রদের পরবর্তী জীবনে রাজনীতিতে আসার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে প্রবেশ করল এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাল, সেই প্রশ্নের জবাব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দিতে হবে।

বাংলাদেশে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক পরিসরে ছাত্রলীগের রাজনীতি রয়েছে। তারা সেখানে নানা রকম ঘটনা ঘটিয়ে মাঝেমধ্যে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। তবে বুয়েট একটা বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানকার ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতি না করলে কি ছাত্রলীগ দেউলিয়া হয়ে যাবে? সেই প্রশ্নটিও থাকবে অসহায় অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীতের মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ঢুকে রাজনৈতিক চর্চা করা কি অত্যবশকীয় ছিল- সেই প্রশ্নও থাকতে পারে। দিনের কোনো একটা সময় কি যাওয়া যেত না। মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে তাদের প্রবেশের প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্ররা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে রাজপথে নেমেছে। তাদের শিক্ষাজীবনে যে ক্ষতি হলো, তা কি ছাত্রলীগের ওইসব নেতাকর্মী পূরণ করতে পারবেন? সেই প্রশ্নটাও না করে বিরত থাকা যাচ্ছে না। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও গত বুধবার মধ্যরাতের পর বহিরাগত কিছু নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ ছাত্ররা। আজও তারা আবার সমবেত হবেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ নামের এক শিক্ষার্থীকে বুয়েটের হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সবাই ছিলেন ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার নেতাকর্মী। এ ঘটনায় করা মামলার রায় হয় ২০২১ সালে। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্ররাই বুয়েটে লেখাপড়ার সুযোগ পান এবং তারাই পরবর্তীতে দেশের নির্মাণ শিল্পে নেতৃত্ব দেন। তারা একটি বিশেষ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হন এবং তাদের মাধ্যমে দেশের স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটে। সে কারণে বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট নিয়ে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বুয়েটকে এক করা কোনো অবস্থায় ঠিক হবে না। সেখানে যারা লেখাপড়া করেন, তাদের জন্য শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বুয়েটকে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে কলুষিত করা যাবে না। বুয়েটকে মনে-প্রাণে লালনপালন করতে হবে। ছাত্র রাজনীতির কলুষতা যদি বুয়েটকে আচ্ছন্ন করে, তাহলে দেশের প্রকৌশল শিল্পধ্বংস হয়ে যাবে।

এই ভাবনাটি দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে ভাবতে হবে। মেধাবী ছাত্রদের লেখাপড়ার বাইরে আর কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। রাজনীতির হীন স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা যাবে না। তাদের জন্য লেখাপড়ার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মেধাবী ছাত্ররা শঙ্কিত অবস্থায় কাটানোর পরিস্থিতি যেন আগামীদিনে সৃষ্টি হতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি করার মতো দেশে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে ছাত্র রাজনীতির নামে যা হচ্ছে, তা কারোই কাম্য নয়। তবে বুয়েট একটি বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেখানে লেখাপড়াই মুখ্য। সেখানে কেন ছাত্র রাজনীতি ঢুকবে। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েটে গিয়েছে কার নির্দেশে।

এর আগেও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। এবারের আন্দোলন কত দিন পর্যন্ত চলমান থাকে, সেটা ভাবনার বিষয়। বুয়েট কর্তৃপক্ষ যদি বিষয়টি বিচক্ষণতার মাধ্যমে সমাধান করতে পারে- তাহলে ভালো, আর যদি সংকটের কোনো সমাধান না হয়, তাহলে আগামীদিনে জাতির ভাগ্যে দুর্ভোগ রয়েছে। একটা ছাত্রের বুয়েটে পড়ালেখার করা মতো যোগ্যতা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। ছাত্র রাজনীতির নামে যদি তাদের জীবন বিপন্ন হয়, সে জন্য দেশের মানুষ বুয়েট প্রশাসনকে ক্ষমা করবে না।