পণ্য বয়কটে মিলবে সুফল!

বেশি দামের পণ্য কম কিনলে লাভবান হবে ক্রেতা

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কারণে অকারণে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অস্বাভাবিক মুনাফা করেন। এই কাজটি করার জন্য তারা সিন্ডিকেট সৃষ্টি করেন। কোনো ধরনের উপলক্ষ্য পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। সাধারণ অর্থে বলা যেতে পারে বৃষ্টি হলে কিংবা প্রচণ্ড গরম পড়লে সরবরাহ সংকটের অজুহাত তুলে তারা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেন। দেশের সরকারপ্রধান ছাড়াও মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কোনোভাবেই অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের নিবৃত্ত করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য নানা ফন্দি ফিকির করেন। ফলে সাধারণ ভোক্তারা বিপদে পড়ে যায়। তাদের আর কোনো কিছু করার থাকে না কেবল আফসোস করা ছাড়া। তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা নতুন একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তারা কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সেই পণ্য বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তারা তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে সাফল্য এসেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে কিংবা কোনো পণ্যের দাম সস্তা হলেও তাদের কেনার পরিমাণে কোনো পরিবর্তন হয় না। তারা পরিবারের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয় করেন। ফলে ভারতে পণ্যের মূল্য তুলনামূলক কম। আমাদের দেশেও এই নীতি অনুস্মরণ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে সম্প্রতি দুয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পর ফেসবুকে ওইসব পণ্য বর্জনের ডাক দেয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে ওই পণ্যের দাম কমে যায়। রমজানের শুরুতে রাজধানীতে তরমুজের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তখন থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে এ পণ্য কিছুদিনের জন্য বয়কটের ঘোষণা দিয়ে অনেকে পোস্ট দেন। তবে রোজার মধ্যেই তরমুজ নেমে এসেছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। তরমুজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন মহাসংকটে পড়েছেন। দাম অর্ধেক কমিয়ে দেয়ার পরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গণমাধ্যমে তরমুজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বিড়ম্ভনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতার আশায় বিক্রেতারা অলস সময় ব্যয় করছেন। এটিকে প্রতিবাদ বা বয়কটের ফল হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা। তরমুজ বয়কটের দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধ হওয়ার পর এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গরুর মাংস বয়কটের ডাক দিয়েছে সাধারণ মানুষ। রোজার শুরু থেকেই গরুর মাংসের দাম বেড়েই চলেছে। ফেসবুকে চলছে গরুর মাংস বয়কটের হিড়িক। মূলত বাজারে গরুর মাংসের অতিরিক্ত দামের কারণে অনেকে এটিকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দাম কমবে বলে ধারণা তাদের। বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে এ বয়কটের স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকেই। গত ১৫ মার্চ গরুর মাংসের দাম ৬৬৪ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। তবে এখনও বাজারে গরুর মাংস বিক্রি ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বয়কটের ডাক দিয়ে অনেকের স্ট্যাটাসই ভাইরাল হয়েছে। তারা ফেসবুকে লিখছেন গরুর মাংসও খাওয়া বাদ দিন, বয়কট করুন দেখবেন, সেটাও হাতের নাগালে চলে আসবে। ক্রেতা না কিনলে দাম বাড়িয়ে কয়দিন কাটা গরুর মাংস রাখবে ফ্রিজে। কম দামে ক্রেতা না কিনলে কত দিন চড়া দাম হাঁকাবে। ক্রেতাই যদি না থাকে কিসের সিন্ডিকেট! আমরা সব চাইলেই পারি! লাগবে শুধু একতা! চলেন, তরমুজের পরে এবারে গরুর মাংসের দাম কমাই। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া অন্য একটি স্ট্যাটাসে গরুর মাংস বয়কটের ডাক দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় দেশবাসী আপনারা তরমুজকে বয়কট করেছেন, এখন বর্তমানে তরমুজের দাম ১০০ টাকা কেজির পরিবর্তে ৩০ টাকা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, এবার আপনাদের পালা, গরুর মাংসকে বয়কট করুন, দেখবেন ৮০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে চলে এসেছে গরুর মাংস। ধন্যবাদ।’ এরআগে ডিম বয়কট করার পর দাম কমে গেছে। পণ্য বয়কটের সামাজিক আন্দোলন যত বেগবান হবে ভোক্তারাও তত বেশি লাভবান হবেন। ইতোপূবে আমাদের দেশের বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখন কোনো স্থানে পেঁয়াজ আড়তেই পচে যাচ্ছে। পণ্য মজুদ করে বেশি মুনাফা করার ফল এটা। ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা করার জন্য পেঁয়াজ মজুদ করার পর বস্তার গরমে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এমন কারসাজিতে কিন্তু ক্রেতারা ক্ষতির সম্মুখীন হননি। বরং ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তরমুজের দাম যদি স্বাভাবিক হতো এবং বিক্রেতারা যদি সহনীয় মুনাফা করার নিয়ত করতেন তাহলে এই রমজান মাসে রোজাদাররা ইফতারের সময় তরমুজের সুমিষ্ট স্বাদ গ্রহণ করতে পারতেন। খেতে তরমুজ বেশি দিন রাখা যায় না। তরমুজ পরিপক্ব হলেই তা সংগ্রহ করতে হয়। যারা রমজান মাসকে কেন্দ্র করে তরমুজ খেত থেকে তোলেননি তারা এখন এক সঙ্গে তুলতে গিয়ে বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে। আর সে কারণে তরমুজের দাম ধপাস করে পড়ে গেছে। পেঁয়াজের দামও এখন ৫০ টাকার মধ্যে চলে এসেছে। এখন যদি মানুষ মাংস বয়কট কিংবা কেনা সীমিত করে তাহলে আশা করা যায় মাংসের দামও অনেক কমে আসবে। ক্রেতা না থাকলে বিক্রেতা অলস বসে থাকবেন। মাংস এক মাস না খেলেও মানুষ মারা যাবে না। মাংসের বিকল্প ডাল রয়েছে। ক্রেতারা বেশি কেনে বলে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি পড়ে। আর কয়েকদিন পর আসছে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখে মানুষ ইলিশ ভাজা দিয়ে সকালে পান্তাভাত খায়। এটা বাংলা সংস্কৃতির কোনো অনুসঙ্গ নয়। এটা একটা রেওয়াজ। এবার যদি মানুষ ইলিশ বয়কট করে তাহলে রাতারাতি ইলিশ মাছের দাম বাড়বে না। পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া আর আগের দিন কিংবা পরের দিন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার বেলায় স্বাদের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয় না। কেবল মানসিক প্রশান্তির জন্য মানুষ বাজার ব্যবস্থায় সর্বনাশ ঘটায়। সারা বছর পান্তা ভাত কেউ খাবার টেবিলে চোখেও দেখে না। আর সেই পান্তা নিয়ে কতইনা মাতামাতি হয় পহেলা বৈশাখের সকাল বেলা। তাই বেশি দামের পণ্য কম কিনলে বেশি লাভবান হবে ক্রেতারাই। আর সে কারণে বেশি দামের পণ্য কম কেনা কিংবা সম্ভব হলে বর্জন করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে ক্রেতা সাধারণকে।