বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে সুযোগ-সুবিধা সীমিত হয় যাবে। তাতে দেশের পণ্য রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থায়ও সংস্কার লাগবে। দেশের রপ্তানি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলারের একক বিনিময় হার চালু, আমদানি শুল্ক হ্রাস, ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ হ্রাস, অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। তবে পণ্য বৈচিত্র্যকরণে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে বাংলাদেশ চার ডিজিটের এইচএস কোডের মাত্র ৯টি নতুন পণ্য রপ্তানিতে যোগ করতে পেরেছে। ২০২১ সালে এসব পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮২ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ এই সময়ে ভিয়েতনাম ৪১টি নতুন পণ্য রপ্তানি করেছে। পণ্যগুলোর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার। শিল্পায়ন হলে অন্যান্য দেশ তৈরি পোশাক থেকে অন্য খাতে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। আমরা নতুন পণ্য সেভাবে আনতে পারছি না। অনেকে চেষ্টা করছেন। তবে টিকে থাকতে পারেননি। তার ফলে বাংলাদেশ এখনো সহজ পণ্যই উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম জটিল পণ্য উৎপাদন করে। অথচ নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রপ্তানি প্রায় কাছাকাছি ছিল। রপ্তানি খাতে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। কাঁচামাল আমদানিতে দেশে শুল্কহার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি, যা রপ্তানি খাতের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা।
উচ্চ শুল্কের কারণে সমস্যায় পড়ছে কোম্পানিগুলো। তাদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। একটি দেশের করব্যবস্থা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী বা নিরুৎসাহী করে। পিডব্লিউসির এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালে সহজে কর প্রদান সূচকে বাংলাদেশ ১৮৯ দেশের মধ্যে ১৫১তম অবস্থানে ছিল। ডলারের একাধিক বিনিময় হারের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় নিচে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের আধ্যিকের কারণে যারা বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন করতে চান, তারা ঋণ পেতে ভোগান্তিতে পড়েন। জাপানে এখন আর নতুন পণ্য রপ্তানির খুব সুযোগ নেই। তবে নতুন পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অসীম। সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বড় ধরনের লাফ দিতে হবে। বড় সংস্কার করতে হবে। ছোট ছোট উদ্যোগ নিলে খুব বেশি কাজ হবে না। ভিয়েতনামের নতুন পণ্য রপ্তানিতে খুব বেশি সংস্কারের প্রয়োজন নেই। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ যত সহায়ক হবে, রপ্তানি খাতে তত বেশি সাফল্য আসবে। আর শুল্কহার বেশি থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। তাই সহায়ক রাজস্ব নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২৩ সালটা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য ভালো যায়নি। এই এক বছরেই দেশটিতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৪৪ কোটি ডলার। তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, দেশটিতে শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য চার দেশের পোশাক রপ্তানিও কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫৪৪ কোটি ডলার। একইভাবে ভিয়েতনামের ৪০৬ কোটি, ভারতের ১৫২ কোটি ও ইন্দোনেশিয়ার ১৪২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি কমেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। ২০২২ সালের একই সময়ে তারা আমদানি করেছিলেন- ৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ডলারের পোশাক। এর মানে, বিদায়ি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি আগের বছরের চেয়ে ২২ দশমিক ০৫ শতাংশ কমে গেছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে। তাতে ওই বছরের জুনে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়। মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছানোর কারণে নিত্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনাকাটা কমিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা। যার প্রভাব পড়েছে দেশটিতে- পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর। এসব দেশের রপ্তানি কমে যায়। তবে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল- ৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগে ডিসেম্বরে বড়দিনের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। ফলে আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ পাওয়ার হার বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন। বিদায়ি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৪১৮ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি কমেছে ২২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এই বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। বিদায়ি বছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ বা ২৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ কম। গত বছর বাংলাদেশ থেকে মোট পোশাক রপ্তানির সাড়ে ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর ২২৬ কোটি বর্গমিটার কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম। ২০২২ সালে ৩১৩ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১২ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪১৮ কোটি ডলার। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়ে ৯৭২ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
তবে ১ বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে এক-চতুর্থাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ বাড়ছে। পাশাপাশি কানাডা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও বাড়ছে। গত বছর তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন গুদামে পণ্যের মজুত বেশি থাকায় ক্রয়াদেশ কম এসেছিল। তবে এরইমধ্যে মজুত কমে যাওয়ায় ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে পোশাকের চাহিদাও বাড়ছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গত বছর মাত্র দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত বছর ইইউতে ২ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। বড়দিনে যুক্তরাষ্ট্রে ভালো বেচাবিক্রি হয়েছে। ফলে আমাদের প্রত্যাশা আগামী এপ্রিল-মে থেকে ক্রয়াদেশ বাড়বে। ওই সময়ে মূলত আগামী বছরের গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসবে। তার আগে শীতের যে ক্রয়াদেশ এসেছে সেটিও খুব খারাপ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশের রপ্তানি কমলেও বাজার হিস্যায় বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের হিস্যা হচ্ছে- যথাক্রমে ২১, ১৮ ও ৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ টুকটাক আসছে। ক্রয়াদেশ কেমন এলো, সেটি বোঝার জন্য আরেকটু সময় লাগবে। আগামী শীতের ক্রয়াদেশ খুব আহামরি না হলেও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ ভালো হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
২০২০ সালে কোভিড মহামারির শুরু থেকেই বিশ্ব অর্থনীতিতে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। কোভিডের প্রভাব কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ রকম পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, চলতি ২০২৪ সালেও বিশ্ব অর্থনীতিতে একধরনের অনিশ্চয়তা থাকবে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো অস্থিতিশীল এবং আগামী কয়েক বছরে তা আরো দুর্বল হতে পারে। যারা মনে করেন যে বৈশ্বিক অর্থনীতি এ বছর স্থিতিশীল হবে বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তারা কিন্তু সংখ্যায় বেশ কম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ‘চিফ ইকোনমিস্টস আউটলুক’ বা ‘প্রধান অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এখনো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গতি কম। বিশ্বজুড়ে নীতি সুদহার বাড়তি থাকার কারণে অর্থপ্রবাহে গতি কমে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। প্রধান অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ সবকিছুর প্রভাব ২০২৪ সালেও কমবেশি থাকবে। প্রধান অর্থনীতিবিদদের ওপর করা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) জরিপ থেকে জানা যায়, ৫৬ শতাংশ প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, চলতি ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হবে। এই দুর্বলতার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে তারা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও আর্থিক খাতের কঠোরতাকে চিহ্নিত করেছেন। তবে মাত্র তিন শতাংশ মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতি আরো বেশি দুর্বল হবে। জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ আশা করছেন, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে শিথিলতার পাশাপাশি আর্থিক বাজারেও শিথিলতা আসবে; অর্থাৎ শ্রমবাজারে খালি হওয়া কর্মের বিপরীতে বেকার মানুষের সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে নীতি সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা থাকায় আর্থিক বাজারে কিছুটা শিথিলতা আসবে; অর্থাৎ ঋণ নেওয়া সহজতর হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে শ্রমবাজারে অতিরিক্ত ২০ লাখ মানুষ প্রবেশ করবেন।
কিন্তু কর্মসংস্থানের হার কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক বেকারত্বের হার বেড়ে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশে উঠে যেতে পারে, যা বিদায়ি ২০২৩ সালে ছিল পাঁচ দশমিক এক-শতাংশ। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি এ বছর আরো শক্তিশালী হবে। অর্থনীতি অধিকতর শক্তিশালী হওয়ার আভাস দিয়েছেন ২৩ শতাংশ প্রধান অর্থনীতিবিদ। অর্থনীতিবিদেরা সাধারণত কোনো বিষয়ে একমত না হলেও একটি বিষয়ে তাদের মধ্যে ঐকমত্য দেখা গেছে। সেটি হলো, তারা মনে করছেন, ভূ-অর্থনীতিতে যে খণ্ডিতকরণ চলছে, সেই প্রক্রিয়ার প্রভাব অব্যাহত থাকবে। ১০ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে সাত জন; অর্থাৎ ৭০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ২০২৪ সালে ভূ-অর্থনৈতিক খণ্ডিতকরণের হার আরো বাড়বে। বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন, এ কারণে আগামী তিন বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও স্টক মার্কেটে অস্থিতিশীলতা বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন, অর্থনীতির স্থানীয়করণের গতি বাড়বে, সেই সঙ্গে ভূ-অর্থনৈতিক ব্লকের শক্তি বাড়বে। পরিণতিতে বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার ব্যবধান বাড়বে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করছে, বাণিজ্য বাধা ও বিধিনিষেধ বৃদ্ধির কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক উৎপাদন হ্রাসের হার বেড়ে ৭-এ উঠতে পারে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের অর্থনীতিগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির চার শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবৃৃদ্ধির ধরনের মধ্যে ব্যবধান দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক তৎপরতা চাঙা থাকবে। এত দিন চীন এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিত। এখনকার বাস্তবতা হলো, এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে চাঙাভাব থাকলেও ব্যতিক্রম হবে চীন। তাদের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে আগে শক্তিশালী ও মধ্যম মানের প্রবৃদ্ধির কথা বলা হতো।
এখন বলা হচ্ছে, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে অনেকাংশে মধ্যম মানের। অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ইউরোপের জন্য পূর্বাভাস হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে তাদের অর্থনীতি মোটাদাগে দুর্বল বা অতি দুর্বল থাকবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকাতেও প্রবৃদ্ধি দুর্বল থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ১০ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৬ জন মনে করেন, ২০২৪ সালে ওই সব অঞ্চলের দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধি হবে মাঝারি মানের। গত ২০২২ সালের শেষ ভাগে চ্যাটজিপিটির আগমনের মধ্য দিয়ে জেনারেটিভ এআই বিশ্ব দরবারে বিপুল বিক্রমে হাজির হয়। ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে অর্থনীতিবিদরা বলতে শুরু করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এখন দেখার বিষয়, আমাদের জন্য কী নিয়ে আসছে আগামী দিনগুলো। আমাদের প্রত্যাশা, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ক্রমেই আরো সমৃদ্ধি এবং সাফল্যের নতুন নতুন ধাপ অতিক্রম করে তরতর করে এগিয়ে যাবে সুবর্ণ অবস্থানের দিকে।