ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পিতৃত্বকালীন ছুটি ও বাস্তবতা

শিশুর যথার্থ পালনে দরকার বাবার সান্নিধ্য
পিতৃত্বকালীন ছুটি ও বাস্তবতা

সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর সন্তানকে সঠিকভাবে প্রতিপালন করার দায়িত্ব সাধারণত মায়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। আমাদের সমাজে একজন মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ৯ মাসের অধিক সময় কি না কষ্ট করেন, সেটা কেবল যিনি মা হয়েছেন তিনিই অনুধাবন করতে পারেন। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অনেক নারী মারাও যান। সন্তান জন্মদানের পর একজন মা যেভাব ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন, তাতে তারপক্ষে শিশুসন্তান লালন-পালন করা সত্যিকার অর্থে অসম্ভব হয়ে পড়ে। শিশুকে দুধ পান করানো, তার নোংরা কাপড়চোপড় পরিষ্কার করা এবং নিজেকে ব্যক্তিগতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের যৌথ পরিবারগুলো দ্রুত ভেঙে যাওয়ায় একক পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সে কারণে শিশু জন্ম নেয়ার পর মা ও শিশুর যত্ন নেয়ার জন্য পরিবারের মধ্যে অভিজ্ঞ সদস্য বিশেষ করে নানি-দাদির উপস্থিতি কমে আসছে। শিশুরা তার প্রয়োজনের কথা কেবল কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং শিশুর ভাষা বোঝার ক্ষমতা একজন মা সহসা রপ্ত করতে পারে না। সে কারণে পরিবারের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য থাকলে তারা তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনেই সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন। ফলে শিশুর বেড়ে উঠা অনেকটা স্বস্তিকর হয়। সন্তান জন্ম দেয়ার পর একজন মা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শিশু লালন-পালন করতে পারেনা। এছাড়া সংসারের অত্যাবশকীয় কাজকর্ম করার জন্য বাড়তি একজন লোকের প্রয়োজন হয়। তবে যে কোন কেউ সেই কাজ করতে পারেনা। এ ক্ষেত্রে সন্তানের পিতার বিকল্প আর দ্বিতীয়জন কেউ হতে পারে না। সন্তান জন্ম নেয়ার পর বাবা যদি শিশুর পাশে থাকে তবে মা ও বাবার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়ে শিশু তরতর করে বেড়ে উঠতে পারে। কখন শিশুর ক্ষুধা লাগবে, কখন তার নোরাং কাপড় পরিষ্কার করতে হবে সেটি করার জন্য মা কিংবা বাবা দায়িত্ব পালন করলে শিশুর জন্য সেটা কল্যাণকর হয়। কখনো মা কিংবা কখনো বাবা এই দুইজনের মধ্যে একজন শিশুর দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক শিশুরা হেসে খেলে বড় হতে পারে। আমদের দেশে কর্মজীবী নারীরা একটা নির্দিষ্ট মাতৃকালীন ছুটি ভোগ করেন। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাধ্যবাধকতা হিসেবে মাতৃকালীন ছুটি পাওয়া গেলেও বেসরকারি কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া অনেক কঠিন। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ার সেন্টার নেই। ফলে শিশুর চিন্তা মাথায় রাখতে গিয়ে শিশুর মা তার দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে সেভাবে মনোযোগী হতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে পিতার জন্য ছুটির ব্যবস্থা হলে একজন মা স্বস্তি পাবেন। দুইজন মিলে শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারেন। আমাদের দেশে এখনো পিতৃত্বকালীন ছুটি দেয়ার বিধান গড়ে উঠেনি। তবে বাস্তবতার নিরীক্ষে কোনো একসময় পিতৃত্বকালীন ছুটি হয়তো চালু হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, পিতাদের পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তারিকুল আলম। গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আয়োজিত ‘শোভন কাজ’ বিষয়ক এক জাতীয় সংলাপে তিনি এই আশার বাণী শোনান। তিনি বলেন এ বিষয়ে সরকার কাজ করছে এবং সার্বিক বিষয়টি জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় দেখবে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পেলেও পিতাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন বিধি এখনো নেই। বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ৪৩ শতাংশ নারী। অথচ কেবল সন্তান লালন পালন করতে হবে সেই কারণে অনেক উচ্চ শিক্ষিত নারী চাকরি করেন না। যেসব নারী স্বামী কিংবা পিতা-মাতার পরিবার থেকে আর্থিক সহায়তা পান তারা অনেক ক্ষেত্রে সন্তান লালন পালনের কথা চিন্তা করে চাকরি করার আগ্রহ ও ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন। এতে করে শিক্ষিত নারীরা দেশের উন্নয়নের ধারায় অংশ নিতে পারেনা। সে কারণে পিতৃত্বকালীন ছুটি আজ বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। সরকার যদি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাহলে হয়তো মাতৃত্বকালীন ছুটির সঙ্গে পিতৃত্বকালীন ছুটিও বলবৎ হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত