অটিজম সচেতনতায় ব্যাপক সচেতনতা

চাই শারীরিক-মানসিক সুস্থতা ও দাম্পত্য প্রশান্তি

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। অটিজম আক্রান্ত শিশুর মাঝে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ ও সামাজিক কল্পনার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। অটিজম কেন হয়, তার কারণ খুঁজতে ব্যাপক গবেষণা হলেও এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, জিনগত সমস্যার মাত্রা পরিবেশগত কারণে বেড়ে যায়। পরিবারে একজন অটিজম সদস্যের উপস্থিতিতে পুরো পরিবারের ওপর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাবা-মায়ের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ সমস্যাকে জিন-ভূতের আছর বলার মতো কুসংস্কার আমাদের সমাজে এখনো রয়েছে। একসময় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুকে বছরের পর বছর আলাদা করে রাখা হতো। সামাজিক কোনো আচার অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। তবে এখন ধীরে ধীরে তা কমে এসেছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে অটিজম আক্রান্ত শিশুর বেশিরভাগই থাকছে চিকিৎসা বা শিক্ষার বাইরে। দেশে ঠিক কতজন শিশু অটিজম আক্রান্ত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ২০০৯ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, দেশে এক শতাংশ শিশু অটিজম আক্রান্ত। ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ঢাকা শহরে ৩ শতাংশ শিশু অটিজম আক্রান্ত। আর গ্রামে প্রতি সাতশ’ জনে একজন শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সে হিসাবে গ্রামের তুলনায় শহরে অটিজম আক্রান্ত শিশুর হার ২১ গুণ বেশি। এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও গতকাল পালিত হলো ১৭তম ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘সচেতনতাণ্ডস্বীকৃতি-মূল্যায়ন: শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’। তবে স্বস্তির কথা হচ্ছে দেশে ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়বিক জটিলতাণ্ডসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার কন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। তার উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যার সদর দপ্তর করা হয় বাংলাদেশে। তার চেষ্টাতেই বাংলাদেশে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট-২০১৩’ পাস করা হয়। অটিজম মূলত জিনগত সমস্যা এবং পরিবেশগত কারণে এর মাত্রা বাড়ে। একসময় মনে করা হতো ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতির কারণে অটিজমের মাত্রা বাড়তে পারে। তবে গবেষণায় এটির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া বায়ুতে সিসার মাত্রা নিয়েও গবেষণা হয়েছে তবে এটি অটিজমের কারণ হিসেবে সম্পর্কযুক্ত বলে প্রতীয়মান হয়নি। শহর অঞ্চলে অটিজমের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে শহরে পরিবেশগত কিছু সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অটিজম ও স্নায়বিক সমস্যাযুক্ত শিশুদের নিয়ে যেসব পলিসি গ্রহণ করেছে তার বেশিরভাগের প্রস্তাবক ও উত্থাপক বাংলাদেশ। আগামীদিনে এ সংক্রান্ত যেসব পলিসি ও নীতিমালা রয়েছে তা বাস্তবায়ন হবে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। অটিজম আক্রান্ত শিশুর দেড় বছর বয়স থেকে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। তিন বছরে এসে পুরোপুরি চিত্রটা প্রকাশ পায়। এসব শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না, একা থাকতে পছন্দ করে, একা একা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। ‘স্বাভাবিক শিশুরা যে ধরনের খেলাধুলা করে, অটিজম আক্রান্তরা সে ধরনের খেলাধুলা করে না। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বোতল, ব্রাশ কিংবা কাগজের টুকরো নিয়ে খেলাধুলা করে। এ ধরনের শিশুদের নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় কম, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। তারা বেশি রাতে ঘুমাতে চায়। এদের হজমের অসুবিধা থাকে। কখনো কখনো তারা অধিক পরিমাণে হাইপার থাকে। অনেক সময় কারও কারও খিঁচুনি ও মৃগী রোগ দেখা দেয়। নির্দিষ্ট বয়সে শিশুর নির্দিষ্ট বিকাশ হচ্ছে কি না, বিষয়টি গুরুত্বসহ খেয়াল রাখা জরুরি। ধাপে ধাপে শিশুর যে বিকাশটা হওয়ার কথা সেটা হচ্ছে কি না; এজন্য শিশু বিশেষজ্ঞ বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাঝে মাঝে শিশুর পরীক্ষা করাতে হবে। একজন নারী সন্তান সম্ভাবা হওয়ার পর থেকে তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা দরকার। তার জীবনাচারণও হতে হবে সুশৃঙ্খল। গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পরপরই চলাফেরা এবং শিশু জন্মের আগ পযন্ত একজন চিকিৎসকের নিবিড় পযবেক্ষণে থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র খেতে হবে। সেই সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় টিকাগুলো সময়মতো নিতে হবে। মায়ের চলাফেরার কারণে মাতৃগর্ভে সন্তানের অবস্থানের যদি পরিবর্তন ঘটে কিংবা শিশুর শান্তিপূর্ণ বিশ্রামের ঘাটতি হয় তাহলে গর্ভের শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং আথিক সামর্থ্য অর্জনের পরই পরিকল্পিত গর্ভধারণের ব্যাপারে একজন দম্পত্তি উৎসাহিত হবেন। মনোবেদনা কিংবা সংকটময় দাম্পত্য জীবনে সন্তান ধারণ করলে সে শিশু ও মায়ের গর্ভকালীন সময় অস্থিরতায় কাটার আশঙ্কা থাকে। আর সে কারণে গর্ভধারণের আগে চাই শারীরিক মানসিক সুস্থতা ও দাম্পত্য প্রশান্তি। সে কারণে অটিজম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।