ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্মার্ট বাংলাদেশ নতুন কারিকুলাম ও আমাদের প্রত্যাশা

ড. সৈয়দ নাজমুল হুদা
স্মার্ট বাংলাদেশ নতুন কারিকুলাম ও আমাদের প্রত্যাশা

আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম, তখন আমার মেঝ খালা বলত- লেখাপড়া শিখে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। লেখাপড়া শিখি আমরা চাকরির জন্য। গাড়ি বাড়ির জন্য। শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়াটা চাকরিনির্ভর হয়েছে। মানবিক, মনুষ্যত্ববোধ আর দেশাত্মবোধের সঠিক জন্ম দিতে না পারলে শিক্ষাব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়বে। ক্লাসের শিক্ষা বোঝার পর থেকেই দেখে আসছি একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়া, মুখস্থ ও পরীক্ষা এভাবেই করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে চলেছে এইভাবে শিক্ষাব্যবস্থা। একজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অভিভাবক সবাই এই ধারায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখাতে অভ্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন করে চালু হওয়া শিক্ষাক্রমে আর থাকবে না মুখস্থনির্ভরতা লেখাপড়া। মুখস্থ করার পরিবর্তে নিজ দক্ষতা ও কাজের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রী আত্মস্থ করবে জ্ঞান। এতে করে পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থাও বদলে যাবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এতে করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতে আমূল পরিবর্তন আসবে। নতুন একটি ব্যবস্থা চালু হলে সেই ব্যবস্থার আশানুরূপ ফল পেতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রেও বিদ্যমান কারিকুলামের পরিবর্তে নতুন কারিকুলামের দৃশ্যমান ফল পেতে আমাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তারপরেও যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নতুন কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে, সেটি আশানুরূপ ফল পেলে শিক্ষাপদ্ধতি স্বার্থক হবে। কতটুকু আশানুরূপ ফল হবে, সেটিই দেখার বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গতানুগতিক পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে একাধিক অভিভাবক উৎকণ্ঠায় থাকলেও একসময় এটি সহনশীল ও গ্রহণযোগ্য হবে সবার কাছে এ পদ্ধতি। শিক্ষার্থীর একাডেমিক বিষয়ে প্রকৃত মূল্যায়নকারি শিক্ষার্থীর শিক্ষকরা। সুতরাং শিক্ষকের হাতে মূল্যায়ন পদ্ধতি এটি যথাপযুক্ত এবং সঠিক। এই শিক্ষাক্রম সবটাই আউটকাম বেজড। শিক্ষার্থীরা তার নির্দিষ্ট ট্রপিকস সম্পর্কে আগে চিন্তা করবে। তারপর কাজ করবে। প্রথমে বুঝবে। সেটা শিখবে। পরে বাস্তবায়ন করবে। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের কারিকুলাম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু যোগাযোগ কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত নয়। এই উন্নয়নে তার শিক্ষাপদ্ধতির একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। এ কারণে আমাদের কারিকুলাম উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন করার কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি সফলভাবে কাজটি করছেন। এটি একটি সময় উপযোগী মাইলফলক সিদ্ধান্ত। এ পদ্ধতিতে কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো শিক্ষক চাইলেও নম্বর দিয়ে অবমূল্যায়ন কিংবা অতিমূল্যায়িত করতে পারবেন না। করলেও সেটা হবে নীতিভ্রষ্ট কাজ। পরীক্ষা পদ্ধতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সবার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি দিনই শিক্ষার্থীর জন্য একেকটি পরীক্ষা হিসেবেই কাজ করতে হবে। মেধার বিকাশ ও সৃজনশীলতা সৃষ্টিতে এটি একটি অন্যতম যুগোপযোগী কারিকুলাম। শিক্ষার্থীর মনে সৃজনশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে ২০০৮ সালে দেশের মাধ্যমিক স্তরে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার বিষয়টি মূল্যায়ন ও বিবেচনা করা হয়। সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতির বিষয়টিকে শুধু মাধ্যমিক স্তরে না রেখে পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই একটি বিষয় ছাড়া অধিকাংশবিষয় এই পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত