ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাওয়া-পাওয়ার এপিঠ-ওপিঠ!

রাজু আহমেদ
চাওয়া-পাওয়ার এপিঠ-ওপিঠ!

৪০ বিসিএসের ফয়সাল ভাই জয়েনিংয়ের ৮০ দিনের মাথায় মাজিস্ট্রেটের চাকরি ছেড়েছেন- ভাইয়ের এই লেখাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণহারে শেয়ার হচ্ছে। ধরে নিচ্ছি, যারা শেয়ার করছে তারা ফয়সাল ভাইয়ের সিদ্ধান্তে সহমত! লেখাটি বোধহয় সবার মন জয়ের চেষ্টা করে ফেলেছে! আর কারও চাকরি-বাকরির দরকার নেই! চাকরিজীবীদের অনেক দুঃখ-কষ্ট আছে সেটা ধ্রুব সত্য; কিন্তু যারা চাকরি থেকে পদত্যাগের এই ঘটনাকে বিশাল করে তুলছেন তাদের দিবা-রাত্রির আরাধনায় যেমন-তেমন একটা চাকরির স্বপ্ন বাঁক খাচ্ছে!

চাকরি পেয়ে ছাড়ার সাহস এদেশের তরুণদের লাখে একজনেরও আছে কি-না, সেটা সাংঘাতিক সন্দেহের! চাকরি করছে; কিন্তু মানাতে পারছে না, ছাড়তে ইচ্ছা করে; কিন্তু পরিবার এবং সমাজের চাপে কোনোদিন চাকরি ছাড়তে পারবে না এই সংখ্যা হাজারে দু-চারজন আছে! চাকরির পরিবেশ পছন্দ নয়, বসের সাথে বনিবনা হয় না, বেতনে কুলোচ্ছে না কিংবা অবসর মিলছে না- এমন দাবি অবাস্তব নয়। কিন্তু ইচ্ছা করলেই কেউ চাকরি ছাড়তে পারবে না! তার পিঠে একটা সমাজ চেপে আছে, কাঁধে অনেক দায়িত্ব ভর করেছে! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণ সত্য হচ্ছে অভিজাত শ্রেণির কেউ চাকরি করে না। তাদের চাকরি করতে হয় না! তাদের অর্থই ক্ষমতা তৈরি করে! আর এ দুইয়ে মিলে সামাজিক অবস্থান-সম্মান নিশ্চিত করে। অতিমেধাবীদের কেউ সরকারি চাকরিতে নেই! তার নাসায় কিংবা পছন্দের জায়গায়! দেশে আছে কি-না সেটাও খোঁজা যেতে পারে (মজা করলাম)। তবে অনেক স্বাধীনচেতা যোগ্য মানুষ চাকরিতে এসে পরাধীন হয়ে গেছে! ফয়সাল ভাইয়ের চাকরি ছাড়ার পেছনে উল্লেখিত ৯৮ শতাংশ কারণ সত্য! বাকি ২ শতাংশ মিথ্যা? না। ৮০ দিনে একটা পেশার নেগেটিভণ্ডপজিটিভ বিচার করা কঠিন; অসাধ্য নয়! চাকরির আসল ফিল ডেস্ক পাওয়ার পরেই মিলতে শুরু করে। তবে যাদের কোনো উত্তম বিকল্প নাই, বুকে অনেকখানি সাহস নাই, যারা পূর্ণ বোহেমিয়ান হতে পারে না তারা এথা-সেথা আটকে যায়। যাদের পরিবারের কোন পিছুটান নাই, যে পিতা-মাতার সন্তান সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা পায় কিংবা সমাজের অনেক কথাতেই যাদের কিছুই আসে-যায় না তারা চাকরি ছাড়তে পারে! যেকোনো সময় বলতে পারে, কে তুমি? আমি আমার পথে গেলাম! যারা চাকরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও বেকারত্ব ঘোচাতে পারছে না, স্বপ্নের চাকরির গেজেটে নিজের নাম এখনো তুলতে পারেনি তারা ফয়সাল ভাইয়ের চাকরি ছাড়ার সংবাদকে নিজেদের অবস্থানের স্বপক্ষে সান্ত¡না হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন! চাকরির পেছনে ছোটার চেয়ে উদ্যোক্তা হওয়া বেশি জরুরি। সে ফয়সাল ভাইয়ের লেখা শেয়ার করে সমাজকে চাকরির যাতনা বোঝাতে পারে! কিন্তু চাকরি ছাড়ার স্বপক্ষে হাততালি দেবে আবার মধ্যরাত পর্যন্ত এমপি থ্রি পড়বে, প্রত্যেক শুক্র-শনিবার এডমিট পকেটে নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় দৌড়াবে- এটা তো আধাআধি হিপোক্রেসি হবে! এমন হিপোক্রেসির মাঝেও সবাই সবার গন্তব্যে পোঁছাক-প্রত্যাশায় সেটাই। বেকারদের দুঃখ আর চাকরিজীবীদের দুঃখ একরকমের দুঃখ না হলেও দু’টোতেই আলাদা আলাদা ব্যথা আছে! দেশে কিছু ব্যস্ততম চাকরি আছে। যেমন প্রশাসন-পুলিশ! তাদের আসলে দিন-রাত নেই! অবসর তাদের জন্য স্বপ্নের মতো। ছুটি তাদের জন্য ভাগ্য! এখানে যেমন কঠোর কাজ তেমন পারিশ্রমিক-সম্মান না থাকলেও সমাজে মান-সম্মান নিয়ে বাঁচা যায়! এদের পরিবার-আত্মীয়-স্বজন এদের অনেককেই বেচে খায়! নিজের জীবনকে নিজে কতখানি ভোগ করতে পারে তা ২৪ ঘণ্টাই ডিউটিতে থাকা একজন মানুষ জানে।

বাবা-মা, পরিবারের অসুস্থতায় কিংবা বিশেষ প্রয়োজনেও কাছে না দাঁড়াতে পারার যাতনা যার আছে-সেই জানে! বাইরে থেকে চাকচিক্য দেখালেও ইদণ্ডকোরবানিতে চোখ ভেজে! তবুও স্বস্তি, দেশের একেবারে প্রান্তীয় শ্রেণিকে সরাসরি সহায়তাণ্ডউপকার করার সুযোগ মেলে! অন্যায়কে রুখে দেয়ার সুযোগ আছে। সমাজের অনেক বাঁকা কথা বদলে দেওয়ার সুযোগ আনে! কিছু চাকরি আছে মোটামুটি রিলাক্সের! কৃষি, মৎস্য, বন কিংবা শিক্ষকতা! ক্ষমতাও নাই তেমন আবার ব্যস্ততাও অনেক কম! অফিস আওয়ারে দায়িত্ব পালন করলেই হয়! তারপর স্বাধীন-সীমাহীন।

এখানে না পাওয়ার তথা বঞ্চনার অনেক ব্যথা আছে। হরেক রকমের কথা প্রচলিত আছে! তবে জীবন চলেই যাচ্ছে। যারা আরও বেশি যোগ্য তারা এখানে থাকবে কেন? যে চলে যাওয়ার সে যাবে! ফয়সাল ভাই যদি এডমিনের না হয়ে অরণ্যের হতেন এবং ৮০ দিন নয় ০৮ দিনের মাথাতেও চাকরি ছেড়ে চলে যেতো কেউ ডেকেও জিজ্ঞেস করত না! ভুলেও কেউ শেয়ার করত না! ক্ষমতা, অর্থ, সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্য এর সাথে সাথে অবসর, কম দায়িত্ব, স্বস্তি এবং ব্যথা-সব একসঙ্গে উপভোগ করা কঠিন থেকে কঠিনতর! জীবনকে সবাই একভাবে পায় না।

যার চাকরি লাগবে না, সে না আসুক, যে বিকল্পে চলে যাওয়ার সে যাক! চাকরির পেছনেও ছুটবে, আবার ফয়সাল ভাইদের আদর্শ বানাবে- এরকম হলে তো সেটা মিষ্ট ভন্ডামী হবে! যেকোনো একপক্ষের হও! না পেয়ে টক ভেবো না! খেয়েছ বলেই তারে মিষ্টি বলো না! মনে রাখতে হবে, ফয়সাল ভাইদের সংখ্যা লাখে একজন! আর ফয়সাল ভাই যে চূড়া স্পর্শ করে ফিরে গেছেন সেটা স্পর্শ করার যোগ্যতা ১০ লাখে একজনের! তুমি যোগ্য হয়েই যোগ্যের সমালোচনা করো! অযোগ্যতা তো অনেকখানি-ই আছে!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত