উৎসবের আমেজে ঈদ-বৈশাখ পালন

আতঙ্ক ছড়িয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার মধ্য দিয়ে আমোদপ্রিয় দেশবাসী মেতে উঠে এক শিহরিত উৎসবে। তবে ঈদের আগে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফন্ট (কেএনএফ)-এর ব্যাংক আক্রমণ ও ম্যানেজারকে অপহরণ করার মধ্যদিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল র‌্যাবের মাধ্যেমে। ম্যানেজার মুক্তি লাভের পর সেই আতঙ্ক অনেকটা কেটে যায়। তবে এবার পাহাড়ে খানিকটা ‘অশান্ত পরিবেশ’ বিরাজ করার আশঙ্কা থাকলেও পর্যটক আগমনের কমতি ছিল না। মানুষ এখন ভয়কে জয় করার কৌশল আয়ত্ব করে নিয়েছে। যানবাহন চালকরা অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে ঈদের আগে জানিয়ে দেন পর্যটক আসলে তারা পরিবহন করবেন। মানুষও আতঙ্ককে পাশ কাটিয়ে পার্বত্য জেলাগুলোর পযটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছেন। ঈদের পর পর্যটন অনুকূল পরিস্থিতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পর্যটকদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে। ঈদের সময় মানুষ পরিবারের লোকজন নিয়ে পার্বত্য এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেন। তবে সেখানকার পর্যটন খাত থেকে প্রতি বছর যে আর্থিক লেনদেন হয়, সেটি এবার ততটা জোরাল হয়নি। পাহাড়ের আরেকটি উৎসব ছিল ‘বৈশাবি’। এই সামাজিক উৎসবটি আনন্দের সঙ্গে পালন করেছে পাহাড়ি জনগণ। ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও বৈশাবি উৎসব এই তিনটি উৎসব একাধারে চলতে থাকায় সারা দেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের ছুটি কাটিয়েছে। এবারের ঈদের আগের দিন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেশি থাকলেও যানজট হয়নি।

স্থানীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুস্মরণ করে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঈদে ঘরমুখী মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছে। বড় ধরনের কোন সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেনি। তবে ঢাকার সদরঘাট টামিনালে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে তা মাথায় আঘাত করলে একই পরিবারের তিনজনসহ অন্তত ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এটা নিছক অঘটন ও লঞ্চ পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের গাফিলাতি ছাড়া আর কিছু নয়। তবে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিল বেপরোয়া মোটরসাইকেল। যমদুত নামে খ্যাত এই বাহনটি রীতিমতো দাপিয়ে বেড়িয়েছে রাস্তাঘাটে। উঠতি বয়সিদের মোটরসাইকেল চালানো প্রতিযোগিতায় সারা দেশে অনেকে নিহত হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ জীবনে পারিবারিক কিংবা গোষ্ঠীগত সংঘাতের কারণে কারো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ঈদকেন্দ্রিক সংঘাতে যে আশঙ্কা থাকে, সেটা এবার রক্তারক্তিতে রূপ লাভ করেনি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও বোধগম্যতা বেড়েছে। নাগরিক সংঘাতে যে অসহিঞ্চুতা ফুটে উঠে গ্রামীণ জীবনে তা নিষ্ঠুরতায় রূপ নেয়া কঠিন। কেন না, গ্রামীণ জীবনে সবাই সবাইকে চিনে জানে এবং বুঝে। তাই অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ কম। তবে শহর জীবনে ঝড়ের মতো সন্ত্রাসীরা এসে নাকশতা করে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বহিরাগত সন্ত্রাসী বিশেষ করে কিশোর গ্যাং পাড়া-মহল্লায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ফলে তাদের চিহ্নিত করা সহজ হয় না। তবে গ্রামীণ জীবনে কিশোর গাংয়ের ধারণা এখনো পাকাপোক্ত হয়নি।

এবারের ঈদে ছুটির সময়টায় প্রচলিত অর্থে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা গেলেও মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য রোধ করা যায়নি। মোটরসাইকেল উঠতি বয়সি কিশোরদের জন্য বিনোদনের বাহন হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে আত্মঘাতী যানবাহনে রূপ নিয়েছে। মোটরসাইকেলে বেপরোয়াপনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া দমন করা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে দরকার সামাজিক সচেতনতা। অভিভাবকরা কিশোরদের মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ার ঝুঁকি নিতে চান না। কেন না, আমাদের যুব সমাজের সামাজিক মূল্যবোধ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। উপদেশ পালন করা কিংবা উপদেশ অনুসারে জীবনযাপন করার মতো নৈতিক শিক্ষা তারা পাচ্ছে না। শিক্ষাজীবনে মানুষ নৈতিকতা ও সততার শিক্ষা লাভ করে। তবে আমাদের শিক্ষাঙ্গন নানা কারণে কলুষিতায় রূপ নিচ্ছে। অনৈতিকভাবে একজন শিক্ষক নিয়োগ লাভ করলে তিনি কি নৈতিক শিক্ষা দেবেন। তিনি নিজের বিবেকের কাছে পরাজিত। নিজে নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান না হলে অন্যকে নৈতিক জ্ঞান দেয়া যায় না। সে কারণে আমাদের শিক্ষাঙ্গন আজ নৈতিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারছে না। এটা জাতির জন্য একটি ভয়াবহ বার্তা এনে দেয়। শিক্ষাঙ্গনে যদি সততা ও নৈতিকতার শিক্ষা আমাদের কিশোর-যুবকরা না পায়, তাহলে জাতি হিসেবে হয়তো আমরা শিক্ষিত হবে ঠিক। তবে মানুষ হিসেবে উন্নত হতে পারবে না। আর মানুষ হিসেবে উন্নত না হলে সেই জীবনকে পশুত্ব আচ্ছন্ন করবে। দেশের এ সামাজিক সংকট থেকে রেহাই পেতে হলে রাজনৈতি সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই।