জীবন-জীবিকায় প্রাণিসম্পদ খাত

মিলবে অর্থ-বিত্ত ও কর্মসংস্থানের সুযোগ

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আত্মকর্মংস্থানের ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছে। দেশের উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবকও এখন দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতে তার অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করছে। শিক্ষিত যুবকরা চাকরি করবেন এবং মাস গেলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন নিয়ে ঘরে ফিরবেন। সংসার খরচ নির্বাহ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের জীবন যাত্রার মান বেড়ে যাওয়ায় সংসার পরিচালনার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে গেছে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে মাস চালানো অনেক সময় দায় হয়ে পড়ে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মাসিক বেতন ও চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে। তবে বেসরকারি খাতে যারা কাজ করেন, তাদের চাকরি ও মাস শেষে বেতন পাওয়ার বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে কোন কোন শিল্প রয়েছে, যেখানে বেতন বাকি একটি সাধারণ চরিত্রে রূপ নিয়েছে। চাকরির নিশ্চয়তা ও যথাসময়ে বেতন না পাওয়ার মতো যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকতে হলে কৃষি ও পশুসম্পদ খাতের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। এমনি এক প্রেক্ষাপটে ‘প্রাণিসম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে গতকাল ঢাকায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ মেলা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে মেলাটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কাউন্সিল আয়োজিত এই মেলার ৩০০ স্টলে গরু, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাসহ কয়েক হাজার পোষা প্রাণী রয়েছে। সারা দেশ থেকে খামারিরা এ মেলায় অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি, বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধি, মেধাসম্পন্ন জাতি গঠন ও বৈদেশিক আমদানিনির্ভরতা হ্রাসে প্রাণিসম্পদের ভূমিকা অপরিসীম। গত বছরের হিসেবে জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১.৯০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধি ৩.১০ শতাংশ। কৃষিক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদের অবদান ১৬.৫২ শতাংশ যা জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ মানুষকে প্রত্যক্ষ এবং ৫০ শতাংশ মানুষকে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত করে। গবাদিপ্রাণীর খামার দ্রুত বর্ধনশীল ও সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এ ব্যবসা করেছেন। উৎপাদন, বিপণন, সরবরাহ ও যোগান প্রতিটি পর্যায়ে ধারাবাহিক বৈচিত্রতা থাকায় এ খাতে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি যেসব ঝুঁকি রয়েছে তা কার্যকরভাবে নিরসন করতে হবে। প্রাণিসম্পদের বিকাশ ও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি বেকার জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিশ্বব্যাপী শিল্প ও জীবিকাকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে চলেছে। বাংলাদেশের ডেইরি ও মাংস শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিশ্বমানে উন্নীত করতে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতকে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে মানুষ যখন সম্পৃক্ত হয়, তখন তার সংসারে আমিষের কোনো অভাব হয় না। নিয়মিত দুধ খাওয়ার সৌভাগ্য ওই পরিবারের সবার হয়। মৎস্য ও পশুর খামার গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসে আয় করার সুযোগ পাচ্ছে। বাড়ি বসে দুধ ডিম ও মাছ বিক্রি করার সুযোগ পাওয়া যায়। পরিবার পরিজনকে অধিক সময় দেয়া যায়। বাড়তি হিসাবে খামারে জৈব সার ও জ্বালানি পাওয়া যায়।

এছাড়া তাজামোটা করে ঈদুল আজহার সময় দুই-তিনটি গরু বিক্রি করতে পারলে বাড়তি আয়ে সংসারে সাচ্ছল্য আসে। যারা মৎস্য ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করেন, তাদের পক্ষে বাড়ির যেখানে যতটুকু স্থান পাওয়া যায়, সেখানে তিনি সবজি চাষ করতে পারেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, একটি বাড়ি একটি খামারের ধারণা নিয়ে যারা জীবন শুরু করেন, তাদের আর পেছনে তাকাতে হয় না। তবে এ ধরনের কাজে একনিষ্ঠতা ও অধিক পরিশ্রম করার মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। খামারের পরিধির বিস্তার লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ তার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সহজেই নগরজীবনে সরবরাহ করতে পারেন। কৃষি আমাদের জাতির মেরুদণ্ড এবং গবাদি প্রাণী শিল্প কৃষির খুব বড় একটি অংশ। দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি হলো মৎস্য খাত ও গবাদি পশুর খামার ব্যবস্থাপনা। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও আমাদের অর্জনের তালিকায় প্রথমে রয়েছে কৃষি খাতের অবিস্মরণীয় অগ্রগতি। তারপরও কৃষির এ অগ্রযাত্রায় আমিষ উৎপাদনকারী খাতগুলোর যেভাবে অবদান রাখার কথা, আমাদের প্রাণিসম্পদ খাত ঠিক সেভাবে এগুতে পারেনি। দৈনিক আমিষ গ্রহণে আমরা এখনো বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের বেকার যুবসমাজ যদি কৃষিভিত্তির পেশাকে বেছে নেয়, তাহলে তার ও তার পরিবারের আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের দুয়ার খুল যাবে। ঘুচে যাবে দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা।