ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জীবনযাপনে স্বর্ণের অপরিহার্যতা

স্বর্ণালংকার ব্যবহারে চাই দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন
জীবনযাপনে স্বর্ণের অপরিহার্যতা

আবার স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪ টাকা। এর ফলে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৭ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বাজারে এটিই স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) নতুন এই মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজুসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছেই। স্বর্ণকে একটি নির্ভরযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য করা হয়। স্বর্ণের দাম বাড়লেও এই ধাতু কেনার পরিমাণ কিংবা চাহিদা সাধারণত কমে না। স্বর্ণকে বলা হয় ‘সেফ হেভেন’। বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং সফল বিনিয়োগকারীদের কেউ হয়তো আদর্শ বিনিয়োগ বলতে প্রথমেই স্বর্ণের কথা বলবে না। তারপরেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু মানুষ নিরাপদ ভেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বর্ণে বিনিয়োগ বেশ জনপ্রিয়, গয়না হিসেবে এবং স্বর্ণের বার- দুইভাবেই বাংলাদেশে এ বিনিয়োগ হয়। ‘এর বড় কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে অনিশ্চয়তার কারণে মানুষের আস্থা অনেক কম। সে কারণে সাধারণ মানুষ স্বর্ণে বিনিয়োগ করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারী অর্থাৎ স্বল্প আয়ের মানুষজনের কাছে স্বর্ণে বিনিয়োগের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, স্বর্ণের দাম বাড়লে বা কমলে তাতে আকাশ-পাতাল ফারাক হয় না। ফলে এটি ঝুঁকিমুক্ত। এছাড়া অল্প শিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা মনে করেন পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্রের মতো মুনাফার হারের দিকে নজর রাখার দরকার থাকে না স্বর্ণে বিনিয়োগের বেলায়। তার বাইরে প্রয়োজনে স্বর্ণের একটি ব্যবহারিক উপযোগিতা রয়েছে। সেটাও এ খাতে বিনিয়োগ জনপ্রিয় হবার আরেকটি কারণ। আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, স্বর্ণের চাহিদা সবসময় থাকে। স্বর্ণে বিনিয়োগকে লাভজনক ও নিরাপদ বলে মনে করেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন এক্ষেত্রে স্বর্ণের গয়নার চেয়ে স্বর্ণের বার বা গোল্ডবারে বিনিয়োগ লাভজনক। কেননা স্বর্ণের গয়না বিক্রি করতে হলে ২০ শতাংশ মূল্য কেটে রাখা হয়, আর বদল বা পরিবর্তন করলে ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়। অথচ গোল্ডবারে সেটা হবে না। অন্যদিকে, গোল্ডবার প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারের দর অনুযায়ী কেনাবেচা করা যায়। স্বর্ণাংকার আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য ধাতু। সেই সঙ্গে একটি মূল্যবান সম্পদ। মানুষ বিয়ে-শাদী কিংবা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে প্রিয়জনকে স্বর্ণালংকার দিয়ে থাকেন। স্বর্ণের মতো উপহারের কোনো বিকল্প নেই। কার বিয়ে-শাদীতে কত ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া গেল তা নিয়ে আমাদের সমাজে নানা রকম মুখরোচক আলাপ আলোচনা হয়ে থাকে। বিয়ে-শাদীর পর উপহার হিসেবে স্বর্ণালংকারের হিসাবটাই আগে মানুষ করে থাকে। যেসব অভিভাবকের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তারা হয়তো তাদের সন্তানের বিয়ে-শাদীতে সাধ্যমতো স্বর্ণালংকার উপহার দিতে পারেন। তাদের কাছে স্বর্ণালংকার কোনো বিষয় নয়। সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে মানুষ বিয়ে-শাদীতে স্বর্ণাংকার দিয়ে থাকেন। তবে যাদের সেই ধরনের সামর্থ্য নেই তাদের সন্তানদের বিয়ে-শাদী কীভাবে হবে সেই দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা অস্থির হয়ে ওঠেন। অনেক সময় বিয়ের আগে কোন পক্ষ কতটুকু স্বর্ণালংকার দেবে তা নিয়ে দর কষাকষি হয়। উভয়পক্ষের মতামত ভিন্ন হলে বিয়ে-শাদী ভেঙে যাওয়ারও দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজে রয়েছে। অনেক শিক্ষিত অভিভাবকও এ নিয়ে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা করে বিয়ের আনন্দকে ম্লান করে দেন। স্বর্ণালংকার মানবজীবনে কোনো অপরিহার্য ধাতু কি না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো মতবাদ নেই। স্বর্ণালংকার শরীরে ধারণ করলে একজন মানুষের মনের মধ্যে কি রকম অনুভূতি হয় সেটাও বোধগম্য নয়। তবে এটা ঠিক যে মানুষ যখন স্বর্ণালংকার পরিধান করেন তখন তার মধ্যে ছিনতাই কিংবা খোয়া যাওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করে। কোনো অনুষ্ঠানে কে কতখানি স্বর্ণালংকার পরিধান করে গেলেন তা নিয়েও আলোচনা চলতে থাকে আমাদের সমাজে। স্বর্ণালংকার অনেক সময় আভিজাত্যের প্রতীকে পরিণত হয়। সেইসঙ্গে অর্থ-বিত্তেরও। যে নারী যত বেশি স্বর্ণালংকার পরিধান করেন তার তত বেশি ‘অহংকার’ এটা বলা হয়তো অত্যুক্তি হবে না। তবে যার ন্যূনতম স্বর্ণালংকার নেই তিনি অনেক সময় নিজেকে আড়াল করে রাখেন। ফলে সমাজে একটা বৈষম্যভাব ফুটে ওঠে। স্বর্ণাংকারে নারীর শোভা বর্ধন হয় এটা ঠিক। তবে সেটা যেন লোক দেখানো না হয়। দেশে এমন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে যে, স্বর্ণালংকার জীবনে কোনো অপরিহার্য বস্তু নয়। মাত্রাতিরিক্ত স্বর্ণালংকার সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষ অনেক সময় অসৎ পন্থা অবলম্বন করে। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদশালী হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে এমন একটা সময় আসে যখন তাকে আইন আদালতের মুখোমুখি হতে হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত