কৃতজ্ঞতা বোধ আত্মিক প্রশান্তি বাড়িয়ে দেয়!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

যা পাইনি-চিরকাল সেটার আফসোস করতে থাকলে সুসময় খোয়া যাবে! যা হয়নি অথচ হতে পারত- তা যিনি দেননি, সেখানে আরো বৃহত্তর পরিকল্পনা আছে হয়তো! যা ধরা দিয়েছে তা অসুখ এনেছে, আর যা ছুটে গেছে, তা শুধু সুখ আনত- এমন ভাবনা-সান্ত¡নার সহায়ক হলেও স্বস্তির নিশ্চয়তা দানের জন্য যথেষ্ট নয়। যা আসেনি-তাতেই কল্যাণ নিহিত ছিল বলেই পাইনি। কিছু কিছু অপ্রাপ্তি প্রাপ্তির মূল্য জানাতে থেকে যায়! পেয়েও যাকে অবহেলা করেছেন, সেটাকে না পেলেও আফসোসে দিন খোয়াতেন- এটাই তো মানবধর্ম! প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সেটার মূল্য চুকাতে ভুলে যেতে যেতে বরং অবহেলা বহুগুণ করে ফেলি। তখন আদর-কদর উপেক্ষার রঙে বদলে যায়।

কারো জন্য যা কিছু এবং যতটুকু কল্যাণের সেটুকু তার কাছেই আছে। বঞ্চিতের চোখে যা পায়নি, সেখানে হয়তো ভিন্নতার সমীকরণ আছে। আমি যা চাইতে পারি, যা পরিকল্পনা করি তার বাইরেও মহাপরিকল্পনাবিদ আছেন। চাইনি কিংবা আশাও করিনি অথচ তিনি দিয়েছেন- এমনটা একজীবনে বহুবার ঘটে। যিনি পরীক্ষা দিয়ে উৎরে নেন। দুঃখের উল্টো পিঠে সুখ লেপ্টে রাখেন। তিনি এতো কিছু দেন, যার যোগ্যও আমি ছিলাম না কিংবা কিছু না দিয়েও কল্যাণ রাখেন। আমাদের কৃতজ্ঞতার চেয়ে হাহাকার স্পষ্টভাবে জোড়ালো হয় বলেই অর্থ-বিত্তের মোহে অন্ধ হই! অবাস্তব কল্পনায় গা ভাসাই! যে স্বপ্ন আমার নয় সেখানে দল পাকাই! অথচ কৃতজ্ঞ চিত্ত কখনোই অপূর্ণতার ব্যথা অনুভব করে না। সে প্রশান্তির প্রত্যাশায় ধৈর্যশীল থাকে।

মানুষ হিসেবে আমরা কত দুর্বল, মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় আমার কত সংক্ষিপ্ত আয়ুর অথচ আমাদের লোভ মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে যায়। যার প্রত্যাশা যত বেশি কিংবা যার সন্তুষ্ট হওয়ার ক্ষমতা যত কম সে ততবেশি অসুখী। অকৃতজ্ঞ আত্মা জগতের তাবৎ সম্পদেও তুষ্ট হবে না। সবকিছু পেলেও তার মন ভরবে না! আমরা আমাদের অবস্থানের ওপর তলায় তাকিয়ে আমাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি পরিমাপ করে নিজেকে দুঃখের বেড়িবদ্ধ করি! অথচ আমার চেয়েও মলিন, আমার চেয়েও যোগ্য অথচ ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি যার, আমার চেয়েও শক্তিশালী অথচ অঙ্গহীন কিংবা আমার চেয়েও বুদ্ধিমান অথচ হাসপাতালের বিছানায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে- তার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে শোকরিয়া করি না। আকাশের দিকে মুখ তুলে বলি না, ‘তুমি মহান!’

আমি যে অনেকের চেয়ে ভালো আছি, এই-যে এখনো বেঁচে আছি, এই বোধটুকুন পুরোপুরি থাকলে আমি সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজেকে ভালো রাখতে পারি। দিনে চাঁদ চাইলে সেটা পাব? কাজেই সকালে বিকালের প্রত্যাশা করা অন্যায় হবে। যিনি ভাগ্যবিধাতা তিনি উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি কাউকে অঢেল দিয়ে এবং কাউকে কিছুই না দিয়ে পরীক্ষা করেন। এই পৃথিবীটাই হিসাবের শেষ জায়গা নয়! পুরস্কারের জন্য যে অসীমতার পথে যাত্রা সেখানে তিনি ন্যায়-বিচারক। জগতেও তিনি কাউকে চিরকাল দুঃখী আবার কাউকে অবিরাম সুখী-এমন রীতির মধ্যে রাখেন না। সুখ-দুঃখের ভারসাম্য করেই একটা জীবন আবর্তিত হয়।

ক্ষণকালের না পাওয়ার হতাশায় যদি নিজেকে ডুবিয়ে ফেলি, চিন্তার জগৎ সংক্ষিপ্ত করে ফেলি কিংবা ভাগ্যকে বারবার দোষারোপ করি তাতে ক্ষতি নিজেরেই! যতবার নিজেকে শোনাব- আমি ভালো নাই, ভালো থাকা আমার থেকে তত দূরবর্তী হবে। মানুষকে খাপখাওয়াতে শিখতে হয়। ধৈর্য ধরে বিপদণ্ডআপদে যারা বুক পেতে দাঁড়াতে পারে, যার গাঢ় অন্ধকারেও আশা বাঁচিয়ে রাখে, তারাই তো শুধু ভোরের সৌন্দর্য উপভোগের অধিকার পায়! অল্পতে ভেঙে পড়লে, আফসোসে কপাল চাপড়ালে কিংবা ভাগ্যকে দুয়োধ্বনি দিলে কল্যাণ কমে যায় এবং মানসিক অস্থিরতা বাড়ে। আপনার ঘুমন্তকালেও যার পরিকল্পনায় থাকেন তিনি আপনার জন্য যথেষ্ট- এমন ভাবনায় চেষ্টা অব্যাহত রাখলে চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলে জীবনে কিছুই থাকবে না। সংগ্রাম ছাড়া যে সফলতা সেটার মূল্যায়ন মানুষ করতে জানে না!

জীবন সম্পর্কে যতবেশি অভিযোগ থাকবে, আপনি ততবেশি অশান্তিতে পতিত হবেন। সর্বত্র খুঁতখুঁতে হওয়া, শুধু অন্যের দোষ খোঁজা, নিজেকে সেরা ও বড় ভাবা, সুযোগ পেলেই কাউকে আঘাত দেওয়া কিংবা আড়ালে নিন্দা করা- এই অপরাধগুলো আপনার জন্য বরাদ্দকৃত শুভের অংশ কেটে নেয়। কারো অধিকার হরণ করলে তা আপনার ভবিষ্যত থেকে টেনে পূরণ করা হয়।