ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বৃদ্ধি

জীবনমান উন্নয়নে এ এক মহতী উদ্যোগ
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বৃদ্ধি

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য খাতের ভাতাও। সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাও একইভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা শুধু বিজয় দিবসের দিনে বিশেষ ভাতা পেলেও নতুন করে স্বাধীনতা দিবসেও ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ দুটি বিশেষ দিনের ভাতার হারও দ্বিগুণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। সব খাতের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অতিরিক্ত ২ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে। গত বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমানে যে হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে তাতে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে সরকারের ব্যয় হবে ৫ হাজার ৬৯৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত হারে ভাতা বাড়লে নতুন করে ২ হাজার ৮৬৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে দরকার পড়বে ৮ হাজার ৫৬৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে দুই লাখ সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য মাসিক ২০ হাজার টাকা হারে সম্মানি বাবদ ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে মাসিক সম্মানি ৩০ হাজার করা হলে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের দরকার হবে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড সভায় প্রধানমন্ত্রী ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা প্রদানের নির্দেশনা দেন। পরে ওই বছর জুলাই থেকে ২০ হাজার টাকা হারে ভাতা প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে এ হারে তারা সম্মানি পেয়ে আসছেন।

দুই লাখ সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য (শহীদ পরিবার, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত) ১২ হাজার ৫৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরি ভিত্তিতে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার হারে উৎসব ভাতা পেয়ে আসছেন। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসব ভাতা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য দরকার হবে ২০০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ৯৮ হাজার ৫৭০ জন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে ৫ হাজার হারে বিজয় দিবসের বিশেষ ভাতা বাবদ ৭০ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এ ভাতা দ্বিগুণ হলে অতিরিক্ত ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দরকার পড়বে। স্বাধীনতা দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো বিশেষ ভাতা দেওয়া হয় না। নতুন করে এ দিবসে ১০ হাজার টাকা হারে ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে আগামী অর্থবছরে ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার দরকার পড়বে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের ওয়ারিশ মিলে মোট উপকারভোগী ২ লাখ ১২ হাজার ৫৮৫ জনকে ২০০০ টাকা হারে চলতি অর্থবছরে নববর্ষ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত রয়েছে। আগামী অর্থবছরে ৫ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য ৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত দরকার হবে। বর্তমানে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার উপকারভোগী ৫৮২ জন। বীরশ্রেষ্ঠ ৩০ হাজার, বীর উত্তম ২৫ হাজার, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক ২০ হাজার হারে ভাতা পাচ্ছেন। এ জন্য চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ১৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবে বীর উত্তমদের ৪০ হাজার, বীর বিক্রম ৩৫ হাজার ও বীর প্রতীক ৩০ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা লাগবে। শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাটাগরি ভিত্তিতে ২৭ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা সম্মানি পান। এজন্য চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ রয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে সম্মানি বাড়িয়ে ক্যাটাগরি ভিত্তিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে লাগবে অতিরিক্ত ৭০ কোটি টাকা। দাফন, সৎকার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও লাশ পরিবহনের ব্যয় বাবদ সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৯০০ টাকা দেওয়া হয়। এ খাতে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ও ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা যেহেতু বাজেট সংশ্লিষ্ট, এই মুহূর্তে এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

এদিকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শহীদ পরিবার এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সম্মানি বৃদ্ধির প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মান উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মিষ্টি ফুল ও ফল পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আবেগ-আপ্লুত হয়ে যান। ক্ষণিকের জন্য তারা ভুলে যান মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়, তাদের দুঃসাহসিক জীবনের কথা। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তারা তো জীবন বাজি রেখে রণাঙ্গণে গিয়েছিলেন। তারা জানতেন পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সৈন্যদের হাতে তাদের প্রাণ যেতে পারে। তবে তারা হয়তো তেমনটি ভাবেননি। তারা ভেবেছিলেন দেশ একদিন স্বাধীন হবে। আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পাব। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে- এটাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র স্বপ্ন। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের প্রতিদান কোনোক্রমেই পূরণ করা সম্ভব নয়। আমাদের আজকের প্রজন্ম যদি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধে তাদের লড়াই করার ইতিহাসটা জেনে নেয়, তাহলে এই প্রজন্ম এ দেশ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে। দেশের প্রতি মমতাবোধ আরো বেশি জাগ্রত হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণ বাড়নো হলে তা হবে এই সরকারের আরেকটি মহতী উদ্যোগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত