বিশ্ব বই দিবস

বই পড়ুন জীবনের জন্য

আজহার মাহমুদ

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমরা আমাদের প্রিয় সঙ্গি, বন্ধু সবসময় খুঁজে বেড়াই। অথচ আমরা আমাদের সর্বোৎকৃষ্ট বন্ধুটিকেই খেয়াল করি না, আর সেটি হচ্ছে বই। জীবনের পরতে পরতে আমরা ধোঁকা খাই, কষ্ট পাই, কিছু না কিছু হারাই। তবে বই কখনও আমাদের ধোঁকা দেয় না। বরং বই আমাদের উপহার দিবে সুন্দর একটি জীবন। বই এমন একটি উপকরণ, যা একজন মানুষকে সহজেই আলোকিত করে তুলতে পারে। শিক্ষার আলো, নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সভ্যতা, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ সব কিছুই রয়েছে বইয়ে। একমাত্র বইয়ের মধ্যেই আছে সব ধরনের জ্ঞান। তাই জীবনের জন্য বই প্রয়োজন।

অবসর সময়গুলো বিনোদনের মাধ্যমে কাটানোর জন্য কত কিছুই না আবিষ্কৃত হয়েছে পৃথিবীতে, কিন্তু বই পড়ার মতো নির্মল আনন্দের কাছে সেগুলো সমতুল্য হতে পারেনি। আমরা যদি মনোযোগ দিয়ে কোনো বই পড়ি, তাহলে সে বইয়ের মজাদার বিষয় বস্তু বা ঘটনা কখনও ভুলে যাবো না। তাই জীবনের অবসর সময়গুলো বইয়ের মাঝে ডুবে থাকা দরকার। জ্ঞান চর্চা মানুষকে যেমন মহৎপ্রাণ করে তোলে, তেমনি চিত্তকে মুক্তি দেয় মানবাত্মাকে জীবনবোধে বিকশিত করে। জাগ্রত করে তুলে মনুষ্যত্বকে। সব বিষয়ে সুশৃঙ্খল ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জন এবং পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে হলে অবশ্যই বই পড়া জরুরি। কারণ সব জ্ঞানের উৎস বই। একটি সুস্থ, সুন্দর জাতি গঠন করতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। একটি মানুষের মননশীলতার সম্প্রসারণ ও জ্ঞানের গভীরতা বাড়ায় বই। বই পড়ার আনন্দে ও আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে পাঠকদের নামতে হবে। বড় মনের মানুষ হওয়ার জন্য সবাইকে বইয়ের সান্নিধ্যে আসতেই হবে। একজন লেখক তার সুপ্ত ভাবনা এবং চিন্তাকে সৃজনশীল লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। কবি-সাহিত্যিক-লেখকরা তাদের সমস্ত জ্ঞান বইয়ের পাতায় ঢেলে দেন, বই পড়ে সেই জ্ঞানের আলো সংগ্রহ করা যায়। বই পড়া মানুষের কাছেই দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে। যারা বড় হতে চায়, তাদের প্রয়োজন বেশি বেশি করে বই পড়া। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত বেশি বই পড়ব তত বড় হবো।

যারা সমাজে নোংরা এবং অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন তারা বই পড়া থেকে দূরে আছেন। বই পড়া থেকে দূরে সরে গিয়েই বিভ্রান্তির পথে চলে যায় মানুষ। আমাদের জানতে হবে বই শুধু মানুষের মেধা কিংবা জ্ঞান বৃদ্ধি করে না, বরং বই পড়লে মানুষ হয়ে ওঠে কর্মোদ্যম, সহনশীল ও সহমর্মী। যত বেশি বই পড়া যবে, তত সুন্দর জীবনে এগুবে মানুষ। শিক্ষা না থাকলে কোনো জাতি আলোর মুখ দেখে না। উন্নতির উচ্চ শিখরে অবতীর্ণ হতে পারে না। মানুষ বই পড়েই নিজেকে জানতে পারে এবং নিজের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে পারে। একটি ভালো বই যে কোনো সময় যে কোনো মানুষকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে। এটা আর কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক, আমি বিশ্বাস করি।

প্রাচিনকাল থেকে শুরু করে আজও পর্যন্ত জ্ঞানী আলোকিত মানুষরাই দেশ, সমাজ এবং পরিবারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তাই একটি দেশকে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে বই পড়ায় আগ্রহী হতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রতিটি প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে।

উন্নত জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। হতে হবে আলোকিত মানুষ। এজন্য প্রয়োজন বই পাঠ করা। নতুন প্রজন্মকে যত বেশি বই পাঠে উৎসাহিত করা যাবে, ততই তারা জ্ঞানসমৃদ্ধ হবে। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার অন্যতম হাতিয়ার বই। তাই বই পাঠের বিকল্প কিছু নেই। দেশ গড়তে চাইলে, দেশকে ভালোবাসলে, নিজেকে ভালোবাসলে, জ্ঞানী হতে চাইলে, আলোকিত মানুষ হতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। আমরা বর্তমানে বই কিনি লোক দেখানো, কিন্তু পড়ি না। আর বই কেনার মানুষও দিন দিন কমছে। তরুণরা যেন বই পড়া থেকে পিছিয়ে গেছে। এখন সবাই অনলাইনে পড়ছে, কেউ আর কাগজের পাতা উল্টায় না। বর্তমান অবস্থা এমনই। এ সমস্যা থেকে কবে আমরা বের হয়ে আসতে পারব সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। মানবজীবনের অন্যতম একটি বন্ধু হচ্ছে বই। যা কখনো মানুষ থেকে কেড়ে নেয় না, বরং বাড়িয়ে দেয়। আবার বিখ্যাত মনীষীর কথা, বই কিনে কখনো ফকির হয় না। তবুও যেন আজ আমরা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমরা সত্যি বলতে এখন বইও পড়ি না। ক’জন মানুষ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে একটা দৈনিক পত্রিকা পুরোটা শেষ করে। আসলে আমাদের ভেতরে পড়ার অভ্যাসটা এখনও হয়নি। যতদিন এ অভ্যাসটা হবে না আমাদের, ততদিন বই এবং বইমেলা থাকবে মূল্যহীন। তাই আসুন, বই পড়তে নিজে উৎসাহিত হই, অন্যকে উৎসাহিত করি। বেশি বেশি বই পড়ব এবং উপহার দিব। এটাই যেন আমাদের জীবনের অংশ হয়। আরও একটি বিষয় আমার সবচাইতে বেশি কষ্ট লাগে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পুরস্কার হিসেবে বই না দিয়ে অন্যকিছু দেয়। এই সিস্টেম থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা চাইলে এটা বন্ধ করতে পারি। প্রতিটি পুরস্কার হোক বই। প্রতিটি উপহার হোক বই। তবেই আমাদের জীবন হবে সুন্দর। বই এমন একটি উপকরণ যা পড়ার পড়ে যত্ন করে সাজিয়ে রাখা যায়। প্রজন্মের পর প্রজন্মরাও চাইলে এ বই পড়তে পারে। সুতরাং আমাদের জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ বই। এটা আমরা তখনই বুঝব যখন বই পড়ব। তাই আসুন, আমরা বইকে ভালোবাসি এবং বই পড়ি। ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। বই দিবসে বেশি বেশি বই পড়ি, কিনি এবং উপহার দিই। সবাইকে বই দিবসের শুভেচ্ছা।