ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে হিট অ্যালার্ট

প্রাণিকুল রক্ষায় সবুজায়নে গুরুত্ব দিতে হবে
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে হিট অ্যালার্ট

সারা দেশে সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। আগামী পাঁচ দিন বিরাজমান তাপপ্রবাহ আবহাওয়া পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। তবে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা হিসেবে। তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। শরীরে পানি ও লবণের পরিমাণ কমে গেলে হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথাব্যথা, চোখে ঝাঁপসা দেখা, মাংসপেশির ব্যথা ও দুর্বলতা, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, ত্বক লালচে হয়ে ওঠা, গরম লাগলেও ঘাম কম হওয়া, বমি হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং হাঁটতে কষ্ট হওয়া। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে যারা বেশি থাকছে তাদের মধ্যে রয়েছে- শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রমজীবী ব্যক্তি। যাদের ওজন বেশি এবং যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারাই। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় হিসেবে রয়েছে, দিনের বেলায় বাইরে কম বের হওয়ার চেষ্টা করা, রোদ এড়িয়ে চলা, বাইরে বের হলে সঙ্গে ছাতা রাখা ও টুপি বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা। এছাড়া হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরিধান করা, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, সহজে হজম হয়, এমন সহজপাচ্য খাবার খাওয়া, বাসি বা খোলা খাবার না খাওয়া। দিনের বেলা একটানা শারীরিক পরিশ্রম না করা, সম্ভব হলে একাধিকবার পানির ঝাপটা দিন বা গোসল করা। প্রস্রাবের রঙ হলুদ হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া এবং ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা ভ্যাপসা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। বেশি অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। গরমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। সেজন্য বাইরে বের হলে পানি নিয়ে বের হওয়া জরুরি। শরীরে পানির ঘাটতি কমাতে নিয়মিত পানি খাওয়ার বিকল্প নেই। পাশাপাশি পানিজাতীয় খাবারও খেতে হবে। প্রচণ্ড গরমে চলার পথে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়া অনুচিত। কারণ অনেক সময় হঠাৎ ঠান্ডা পানি খেলে গলাব্যথাসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বাইরে থেকে ঘেমে ঘরে ফিরেও সঙ্গে সঙ্গে হিমশীতল পানি খাওয়া ঠিক নয়। বাচ্চা, বয়স্ক এবং ক্রনিক রোগের রোগীদের এই গরমে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা খুব জরুরি। আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিস্থিতিতে সবুজায়নের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশের মোট ভূখণ্ডের শতকরা ২৫ ভাগ বনাঙ্গল থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৭ থেকে ৮ ভাগ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও কম। পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার জন্য আরো বেশি বনাঞ্চল গড়ে তোলার তাগিদ দেয়া হলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো জোরাল ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমাদের দেশে যতটুকু বনাঞ্চল রয়েছে, সেটাও দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বনদস্যুরা প্রকাশ্যে বন উজাড় করে দিচ্ছে। তাদের বাধা দেয়ার মতো সাহস স্থানীয় লোকদের নেই। সরকারের বন রক্ষীরা এসব দস্যুদের প্রতিরোধ করতে পারছে না। কখনো কখনো নিজেরা হামলার শিকার হচ্ছে। যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়ে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। সে কারণে মানুষ পৃথকভাবে বাড়িঘর করে বসবাস করতে গিয়ে ফসলি জমি ও বন-জঙ্গল কেটে সাবাড় করছে। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া শিল্পায়নের কারণে বাতাসে কার্বণডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের জীবন দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করা গেলে মানুষের জীবনযাপন সুন্দর হবে। আর সুন্দর পরিবেশে শিশুরা সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে। তারা আগামীদিনে সুনাগরিক হয়ে উঠবে। পরিবেশের ওপর যখনই আঘাত আসবে, তখনই প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে উঠবে। নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের আঁকড়ে ধরবে। চলমান তাপপ্রবাহ পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার ফল। তাই প্রকৃতিকে শান্ত রাখতে পরিবেশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত