ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুমিনের পরিচয় ও গুণাবলি

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
মুমিনের পরিচয় ও গুণাবলি

বিশ্বাস ও কর্মের দৃষ্টিতে মহাগ্রন্থ আল কোরআন মানুষকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে। একদল মুমিন অর্থাৎ বিশ্বাসী, অপরদল কাফির অর্থাৎ অবিশ্বাসী। বিশ্বাস হচ্ছে কর্মের ভিত্তি এবং কর্মের মাধ্যমেই একজন মানুষের চরিত্র ফুটে ওঠে। সে কারণে সমাজে ভালো মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলাম মানুষের বিশ্বাসগত দিকটির প্রতি প্রথমেই দৃষ্টি দিয়েছে এবং ইসলামের কতগুলো মৌলিক বিষয়ে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেন তাদের মুমিন বলে উল্লেখ করেছে। কোরআনের সব পাঠকই এ পরিভাষার সাথে অত্যন্ত পরিচিত। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মুমিন কারা, কি তাদের বৈশিষ্ট্য সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের না থাকায় ঈমানের সুফলতা থেকে যেমন আমরা নিজেরা বঞ্চিত হচ্ছি তেমনি অন্যদেরও আমাদের বিশ্বাস ও কর্মের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারছি না।

রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে মুমিনদের উদ্দেশ্যে নাজিল করা আয়াতসমূহে তাদের বিশ্বাস, কর্ম, করণীয় ও বর্জনীয় এবং গুণাবলি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। যার জ্ঞান আমাদের ঈমানী চেতনাকে জাগ্রত করতে পারে। প্রথমেই কোন কোন বিষয়গুলোর উপর একজন মুমিন বিশ্বাস স্থাপন করবে তা কোরআন বলে দিয়েছে। যেমন কোরআন থেকে কারা হিদায়াত পাবে সে বিষয়ের উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে। আর তোমার ওপর যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে এবং তোমার আগে যেসব কিতাব নাজিল করা হয়েছিল সে সবগুলোর ওপর ঈমান আনে এবং আখেরাতের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। এ ধরনের লোকেরা তাদের রবের পক্ষ থেকে দেওয়া হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারা কল্যাণ লাভেরও অধিকারী’ (সুরা বাকারা : ৩-৫)।

অন্যত্র বলা হয়েছে- ‘বরং নেক কাজ হচ্ছে তো এই যে, মানুষ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা আল্লাহর কিতাব ও নবীদের মনে-প্রাণে মেনে নেবে।’ (সুরা বাকারা : ১৭৭)

এ ছাড়াও বলা হয়েছে, ‘রাসুল তার রবের পক্ষ থেকে তার ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছেন। আর যেসব লোক রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছেন তারাও ওই হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে নিয়েছেন। তারা সবাই আল্লাহকে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাব সমূহকে ও তাঁর রসুলদেরকে মানে এবং তাদের একজনকে আর একজন থেকে পৃথক করে দেখেন না, আর তারা বলেন আমরা শুনলাম এবং অনুগত হলাম। হে আমাদের রব আমাদের ক্ষমা করুন, আপনারই নিকট আমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : ২৮৫)

উপরিউক্ত আয়াতসমূহ থেকে সার সংক্ষেপ যা জানা যায় তা হলো, ‘মুমিনগণ মৌলিকভাবে আল্লাহ, রাসুল, ফিরিশতা, কিতাব ও আখিরাতে বিশ্বাস স্থাপন করবেন। এ বিশ্বাস তাদের কি মানের হতে হবে সে বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা এ কথার ঘোষণা দিয়েছে যে, আল্লাহই আমার রব এবং তার উপর সুদৃঢ় থাকবে তার জন্য ফিরেশতা অবতীর্ণ হবে’ (হা-মীম আস-সিজদা: ৩০)।

আরও বলা হয়েছে যে, ‘মুমিন তো হলো তারাই যারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর উপর ঈমান আনার পর কখনো তাতে সন্দেহ পোষণ করেনি বা তা থেকে ফিরে যায়নি’ (সুরা হুজরাত : ১৫)।

এভাবে বিশ্বাসের দৃঢ়তা বা সত্যিকারের ঈমান বুঝবার একটি পরিমাপও মহাগ্রন্থ’ আল-কোরআন আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। ‘সত্যিকারের ঈমানদার তো তারাই, আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়ে শুনানো হয়, তাদের ঈমান তখন বেড়ে যায় এবং তারা নিজের রবের ওপর ভরসা করে’ (সুরা আনফাল : ২)। এ তো গেল সত্যিকারের মুমিনের পরিচয়। এবার সফল মুমিন কারা তার পরিচয়ে কোরআন কি বলে আমরা সুরা মুমিনুনের প্রথম কয়েকটি আয়াত সামনে আনলে তা দেখতে পাই।

‘যারা ভীতি ও বিনয়সহকারে নামাজ আদায় করে’ (আল মুমিনুন: ২)

একজন মুমিনের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তিনি অবশ্যই তা আদায় করবেন। বলা হয়েছে যে, ‘নামাজ কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’ (সুরা বাকারা: ৪৩)। এ আয়াতের মাধ্যমে মুমিনদের জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার জন্যও তাকিদ দেওয়া হয়েছে। তবে সে নামাজ হতে হবে বিনয় ও ভীতিসহকারে। অর্থাৎ খুশু-খুযূর সাথে সালাত আদায় করবেন। এখানে শুধু নামাজ পড়ার কথা বলা হয়নি বরং ‘খুশু’-এর সাথে নামাজ আদায়ের কথা বলা হযেছে। ‘খুশু’-এর অর্থ হল, বিনয়ের সাথে অন্তরকে আল্লাহর দিকে অভিমুখী করা।

ইবাদাত সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা এমনভাবে ইবাদাত করো যেন আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তোমরা আল্লাহকে দেখতে না পাও অবশ্যই তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ এ ধরনের একটি অনুভূতিই নামাজের মধ্যে কাম্য। কেননা অন্য একটি হাদিসে এভাবে বলা হয়েছে যে, ‘মুসাল্লি আল্লাহর সাথে কথা বলে’ (বুখারি)।

‘মুমিনগণ বেহুদা কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকে’ (আল মুমিনুন: ৩):

মুমিন মনে করে এ দুনিয়া হলো আখিরাতের জন্য চাষাবাদের জায়গা। এখানে সে যত ভালো কাজ করবে আখিরাতে তার সুফল তিনি পাবেন। সুতরাং কোনো বেহুদা কথা ও কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার মতো তার কোনো সময় সুযোগ নেই। সে কারণে অন্যত্র বলা হয়েছে ‘(মুমিনগণ) কোনো বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মতো অতিক্রম করে চলে যায়’ (সুরা ফোরকান: ৭২)।

অতএব সফল মুমিনদের উচিত বেহুদা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। একটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবীগণকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘তোমরা বেশিরভাগ চুপ থাক, কেননা তা শয়তান বিতাড়িত করতে এবং দ্বীনের পথে সকল কাজের জন্য সহায়ক হবে।’ ‘মুমিনগণ যাকাত তথা পবিত্রতা ও উন্নয়নের জন্য কর্মতৎপর থাকে’ (আল মুমিনুন: ৪) : এটি ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। রাসুল (সা.) কে ইতিবাচক যে চারটি কাজের জন্য পাঠানোর বিষয়ে সুরা বাকারার ১২৯ ও ১৫১, আলে ইমরানের ১৬৪ ও সুরা জুমআর ২নং আয়াতে বলা হয়েছে সেখানে সফল মুমিনের কাজের বিষয়েই উল্লেখ করা হয়েছে। যাকাত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ।

যার মাধ্যমে ব্যক্তির আত্মশুদ্ধি, সমাজের সংশোধন ও উন্নয়ন এবং আহলে নিসাবের অর্থের নির্দিষ্ট পরিমাণ আল্লাহ নির্ধারিত খাতে প্রদান সবটাই বুঝায়। তবে এখানে উল্লেখিত আয়াতটি যাকাতের বিধান চালু হওয়ার আগে অবতীর্ণ। সুতরাং তা দিয়ে শুধু অর্থের যাকাত ইঙ্গিত করা হয়নি বরং মুমিনের আত্মশুদ্ধি, সমাজ সংশোধন ও উন্নয়নের কাজ তথা সামগ্রিক সংশোধনের কাজকেই এখানে বুঝানো হয়েছে।

‘মুমিনগণ তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে’ (আল মুমিনুন : ৫)

পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল চলন, কর্মকাণ্ড সকল কিছুতে একটি শালীনতা, পবিত্রতা এবং শরিয়তের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে এখানে দিকনির্দেশ করা হয়েছে। শরিয়তে নিষিদ্ধ পন্থায় নিজের জৈবিক কামনা পূরণ করা থেকে বিরত থাকা মুমিনের অন্যতম পরিচয়। অর্থাৎ যাবতীয় অশ্লীলতা, বেহায়াপনা পরিহার করবে। কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে মুমিনগণ কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। এসব নির্দেশনার মাধ্যমে মুমিনদের রুচিশীলতা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা প্রকাশ করা হয়েছে।

‘মুমিনগণ আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করেন’ (আল মুমিনুন: ৬)

আমানত ও ওয়াদা এ শব্দ দুটি মুসলিম ও অমুসলিম সকলের নিকটই পরিচিত। আমানত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। যার মধ্যে আর্থিক আমানত, কথার আমানত, ইজ্জতের আমানত, দায়িত্বের আমানত, ইলমের আমানত, রাষ্ট্রীয় আমানত, নেতৃত্ব ও পদমর্যাদার আমানত, বিচারের আমানত, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের আমানত, পরিবার পালনের আমানত প্রভৃতি রয়েছে।

মুমিনগণের আমানত ও ওয়াদা রক্ষার বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী আখিরাতে নবীগণ, সিদ্দিকগণ এবং শহীদগণ ও সালিহিন গণের সঙ্গে থাকবেন।’ (তিরমিজি: ৩-১২০৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই। মুমিনের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হলেও আমানতের খেয়ানতকারীর ব্যাপারে কঠোর কথা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহর পথে জিহাদ আমানত ব্যতীত সব গুনাহের কাফফারা। (বায়হাক্বী: ৪৮৮৫)।

অতএব প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হবে, আমানত রক্ষা করা। একইভাবে ওয়াদা রক্ষার তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে যে, ‘ওয়াদা হচ্ছে এক ধরনের ঋণ।’ তাই কোরআনে অনেক জায়গায় ওয়াদা রক্ষার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। চাকরি, ব্যবসা ও দৈনন্দিন মানুষের জীবনে ‘কমিটমেন্ট’ রক্ষার যে বিষয়টি অনেককে বলতে শোনা যায় তার চাইতেও বহুগুণ উন্নত বৈশিষ্ট্যের কথা এ ‘আমানত ও ওয়াদা’ শব্দ দুটির মাঝ দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। যা রক্ষায় অভ্যস্ত হলে ব্যক্তি ও সমাজ সকলেই উপকৃত হয়। এমনকি আমানত ও ওয়াদা রক্ষাকারীর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে আমানত ও ওয়াদা খেলাপকারী সমাজে অবিশ্বস্ত, নিন্দিত ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা যে, বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুমিনের অন্তর্ভুক্ত হন। ফলে ইসলামের বিধিবিধান অনুসরণ করা তখন তার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আর এটা অনুসরণের মাধ্যমেই তিনি পূর্ণ মুসলিম হতে পারেন। এ বিষয়ে কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনাও আমরা দেখতে পাই, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।’ (বাকারা-২০৮)

এভাবে সফল মুমিনের পরিচয় তুলে ধরা ছাড়াও কোরআনুল কারিমের বিভিন্ন জায়গায় মুমিনদের নানা গুণগত পরিচয় এবং করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি করে স্মরণ করো’ (সুরা আহযাব: ৪১)। আরও বলা হয়েছে ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা ইমরান: ১০২)

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা যে, বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুমিনের অন্তর্ভুক্ত হন। ফলে ইসলামের বিধিবিধান অনুসরণ করা তখন তার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আর এটা অনুসরণের মাধ্যমেই তিনি পূর্ণ মুসলিম হতে পারেন। এ বিষয়ে কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনাও আমরা দেখতে পাই, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।’ (বাকারা-২০৮)

এছাড়া একজন মুমিন নিজের পিতা, মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য পরায়ণ হবেন। তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেন তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারোর ইবাদাত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকেন, তাহলে তাদের ‘উহ্’ পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)। সামগ্রিক ভাবে একজন মুমিন বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হবেন। অর্থাৎ এ ধরনের গুণসম্পন্ন মুমিনের সমারোহে একটি পরিবার ও সমাজ সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।

বিশ্বাস স্থাপনের পর স্বাভাবিকভাবে মুমিনগণ একটি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হবেন। ফলে লুকোচুরি নয় বরং বুক ফুলিয়ে পরিচয় দেবেন ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (হা-মীম আস-সিজদা : ৩৩)। মুসলিমদের একজন দাবি করলেই হবে না বরং তাকে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর পথকে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ একাকী নয় বরং দলবদ্ধভাবে ইসলামের জন্য কাজ করতে হবে এবং বিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না। যেমন বলা হয়েছে, ‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর পথকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেকো না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)

তাই মুমিনদেরকে সংঘবদ্ধভাবে থাকতে হবে এবং একটি মিশনারী জাতি হিসেবে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। অর্থাৎ নিজে ঈমানের পথে আসলেই হবে না বরং দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের মুক্তির এ পথে অন্যদেরকেও নিয়ে আসার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সে প্রচেষ্টাকে মহাগ্রন্থ’ আল কোরআন দাওয়াত, তাযকিয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ নামে উল্লেখ করেছে। যেমন বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকতে হবে যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, ন্যায় কাজের আদেশ দিবে এবং খারাপ কাজের বিষয়ে নিষেধ করবে’ (আলে ইমরান-১০৪)। বলা হয়েছে, ‘মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম না হওয়া সত্ত্বেও ঘরে বসে থাকে, আর যারা নিজেদের ধন মাল এবং জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা উভয়ে সমান নয়’ (আন নিসা: ৯৫)। অর্থাৎ ‘যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে আল্লাহর কাছে তারা শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধীকারী।’ (তাওবা-২০)

ঈমানের পথে চলতে এবং ইসলামের জন্য কাজ করতে গিয়ে একজন মুমিন বিপদ আপদ বাধা প্রতিবন্ধকতা যত কিছুরই সম্মুখীন হন না কেন তিনি ধৈর্যধারণ করবেন এবং লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাবেন সে বিষয়েও কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, ‘আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করব। এ অবস্থায় যারা সবর করে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)। একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো কোরআনে যেখানেই মজবুত ঈমান, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ এমনকি সাধারণ দাওয়াতি কাজের বিষয়েও বলা হয়েছে তার বেশিরভাগ জায়গায় একই সাথে ধৈর্যধারণের ও উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা এ কাজে বাধা প্রতিবন্ধকতা এবং দুঃখ কষ্ট নিত্যদিনের সাথী। কোরআনের ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি সুরা ‘আসর’সহ অনেক জায়গায় বিষয়টি মুমিনদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।

এভাবে ‘মহাগ্রন্থ’ আল কোরআনে মুমিনদের অগণিত পরিচয়, গুণাবলি এবং কার্যক্রম বলে দেওয়া হয়েছে। যা এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ আমাদের সেসব উপদেশাবলী অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত