মধ্যবিত্তের নিয়মনীতি!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

তুমি যদি আম্বানি পরিবারের কেউ না হও, এস আলম গ্রুপের ভাইস্তা না হও, তবে ১৮-৩০ বছর বয়সের মধ্যে দিনভর মুভি দেখা, রাতভর খেলা দেখা, জীবন উপভোগের জন্য ঘুরে বেড়ানো- এসব তোমার জন্য না! এই সময়ে তুমি খাবা, নামাজ পড়বা, ঘুমাবা এবং বইতে ডুবে থাকবা। তুমি ভর্তি পরীক্ষার জন্য শরীর ভাঙা খাটুনি দিবা, ভালো সিজিপিএর জন্য লাইব্রেরিতে দৌড়াবা, রাত জেগে বিসিএসের জন্য প্রস্তুত হবা এবং একটা সুন্দর পরিচয়ের জন্য সংগ্রাম করবা। এতে তোমাকে কেউ কথা শোনালে লজ্জিত হওয়ার কিচ্ছু নাই বরং গর্ব অনুভব করবা। ভুলে যেও না তুমি মধ্যবিত্ত। তোমার পার্কিং প্লেসে রোলস রয়েলস নাই! তুমি খাঁচায় মুনিয়া পাখি পালতে পারো না!

১০ বছর পরিশ্রম করে যদি চাকরি পাও তবেই অবসরে কাশ্মীর ঘুরে বেড়াতে পারবে, দার্জিলিং টি মুখে দিতে পারবে! সমাজে তোমার সম্মান থাকবে! সন্তানেরা তোমায় মনে রাখবে! তুমি দেশ ও দশের উপকারে আসবে। ১৮ বছর বয়সে হরদম মুভি দেখে, দাপিয়ে-কাঁপিয়ে জীবন উড়িয়ে দেয়ার চেয়ে ৭৫ বছরকে টার্গেট করো! তখন মুভি দেখার, ঘোরার এবং উপভোগের বিস্তর সময় থাকবে। আর্থিক নিরাপত্তা থাকলে সুখ থাকে! উচ্চমাধ্যমিকে কোথাও চান্স না পেলে মধ্যবিত্তের জীবনে অনিশ্চয়তা নামে।

জীবন ফুলসজ্জা না! মধ্যবিত্তের জন্য অনেক চিল, অনেক কুল লাইফ-ভুলে যাও! রঙিন চশমা খুলে জীবনের মুখোমুখি হও!

তোমাকে মায়ের ওষুধ কিনতে হবে, বাবাকে ডাক্তার দেখাতে হবে, বউয়ের শখ পূরণ করতে হবে এবং সন্তানের আব্দার মেটাতে হবে। মধ্যবিত্তের টিকে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যমই ভালো একটা চাকরি, সম্মানজনক বেতন। সামাজিক থাকতে হলে পকেটে কিছু পয়সা লাগবে। সমাজে চলতে হলে মাথায় কিছুটা জ্ঞান-বুদ্ধি লাগবে। ভালো প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি, ভালো বেতনের চাকরি জাগতিক দুর্দশা থেকে তোমাকে মুক্তি দিতে পারে। সেজন্য কৈশোরের সময়টা মুভিতে বিনিয়োগ না করে বইয়ের কাছে যাও। তোমার বাবার অঢেল টাকা থাকলে উড়াও, নিজেকে শূন্যে চড়াও! কিন্তু টানাটানির সংসারের কেউ হলে নাওয়া-খাওয়া, ঘুমানো আর নামাজের সময় ছাড়া টেবিলে বই নিয়ে থাকার মধ্যে লজ্জা নেই বরং ভবিষ্যতের গরিমার জন্য গৌরব আছে।

রঙিন দুনিয়ায় জীবন উপভোগ করতে এসে কত প্রতিভা হারিয়ে যেতে দেখলাম! জীবন উপভোগের বহু কায়দা আছে। পাঁচ বছর ফুরিয়ে সমগ্র জীবন পোড়াবে নাকি বইয়ের সঙ্গে কয়েকবছর দেস্তি করো বাকি জীবন সুখে-সম্মানে কাটাবে সে সিদ্ধান্ত তোমার। সম্বল থাকলে অবসর জীবনেও রোগ-শোক কম আসে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, ভালো চাকরি, ভালো বেতন এবং ভালো পরিবার-মধ্যবিত্তের স্বপ্নের অনুষঙ্গই এসব। কে, কি বলল, কীভবে দেখল, কত সমালোচনা করল- তাতে কিচ্ছুই আসে যায় না! যে ছেলেটে দিন-রাত একাকার করে বুয়েটে প্রথম হয়েছে, সে সংগ্রাম করে জীবন বদলেছে। যার জ্ঞান আছে তার বোধশক্তি অন্যান্যদের চেয়ে তুখোড় হয়। যে বড় চাকরে হতে পারবে, সে বড় মানবিকতা বোধসম্পন্ন হতে পারবে না- একথা মূর্খের। ঠিকানা নিশ্চিত করার পর চিল করা, জীবন উপভোগ করা এসব আটকাবে কে? বরং পকেটে পয়সা থাকলে আরও বড় ক্যানভাসে এসব করা যাবে!

ফোকাস করো! কত মেধাবী বড় ভাইয়ের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যাচ্ছে! কিশোর গ্যাংয়ে নিজের ভবিষ্যতকে বলি দিচ্ছে! নেশায় পরিবার নিয়ে ধ্বংস হচ্ছে। অথচ যে ছেলেটা বিপথে না যেয়ে পড়েছে, দেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে প্রথম হয়ে মেধার শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে- আমরা তার সমালোচনা করছি। কী আশ্চর্য! আমরা কী ঈর্যাকাতরতায় নিজেদের বোধ-বিবেক হারিয়ে ফেলেছি? কোনটার সমালোচনা করতে হয়, আর কোনটার প্রশংসা সেই বোধটুকুও আর অবশিষ্ট নেই তবে? মধ্যবিত্তকে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে এবং এর সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম চাকরি। এতে একদিকে দেশের সেবা করার সুযোগ হয়, আরেকদিকে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা দূর হয়। কাজেই মুভি দেখা বাদ দিয়ে, অহেতুক আড্ডা বাদ দিয়ে বইয়ের সঙ্গে মিতালি করা বুদ্ধিপ্রসূত কাজ। যারা এর নিন্দা করে তারা হারিয়ে যায়। অতীতেও হারিয়ে গেছে। যারা বইয়ের সঙ্গে লেগে থাকে, পরিশ্রম করে তারা এগিয়ে যায়- এটা জগতের প্রতিষ্ঠিত রীতি। মধ্যবিত্ত থেকে উত্তরণের এটাই নিয়মনীতি।