ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রচণ্ড গরমে বয়স্ক ও শিশুর যত্ন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ নিয়ে ভাবনা
প্রচণ্ড গরমে বয়স্ক ও শিশুর যত্ন

আবারও সারা দেশে তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। এ নিয়ে চতুর্থবার হিট অ্যালার্ট দিল সংস্থাটি। গতকাল থেকে পরবর্তী সময়ে ৭২ ঘণ্টা এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। সেইসঙ্গে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। এর আগেও গত ৩, ১৯ ও ২২ এপ্রিল ৩ দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছিল। তবে প্রথম দুইবার তাপমাত্রা বাড়ার আভাস ছিল। চলতি মাসে টানা তাপপ্রবাহ থাকতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ মাসে হয়তো বৃষ্টির দেখা মিলবে না। তবে আগামী মাসে বৃষ্টি হলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে- টানা বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা কম। কেন না, তাপপ্রবাহের কারণে ভূপৃষ্ট উত্তপ্ত হয়ে গেছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক কমে গেছে। ফলে সেচের মেশিন ও নলকূপ দিয়ে কোনো কোনো স্থানে পানি উঠছে না। পুকুর-খাল-বিলে পানি কমে গেছে। কোথাও কোথায় শুকিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা কাটার ফলে সবুজায়ন বিনষ্ট হয়েছে। শিল্পায়নের ফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমে গেছে। গরমের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি বেড়ে গেছে।

যাদের রোদের মধ্যে অবস্থান করে কাজ করতে হয়, তারা গরমে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- বয়স্ক ও শিশুরা। বয়স্কদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। গরমের কারণে তাদের রোগের প্রার্দুভাব বেড়ে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে যায়। তাদের ওষুধ সেবন ও খাবারের প্রতি বেশি নজর রাখতে হবে। কেন না, শরীরের জন্য অসহনীয় খাবারের কারণে বিপত্তি ঘটতে পারে। বয়স্করা নিজেরাই এ ব্যাপারে সচেতন হলেও সমস্যা হলো শিশুদের নিয়ে। তারা গরম ঠান্ডা বুঝে না। প্রচণ্ড গরমে তারা খেলাধুলা কিংবা ঠান্ডাজাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য বায়না ধরে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বলে তারা বাসায় থাকলেও কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে অনেকে। সেখানকার পরিবেশের ওপর নজর দিতে হবে। শিশুদের মধ্যে পানিবাহিত রোখের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে। তারা ঘরের বাইরে কিংবা রোদের মধ্যে ছাদে গিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে। এ কাজে তাদের কঠোরভাবে নিবৃত্ত করতে হবে। তাদের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায় যে কোনো ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশজুড়ে দুর্বিষহ তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। সারা দেশে এ অসহনীয় তাপমাত্রায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যজাত ও অল্প বয়সি শিশুদের জন্য। হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়া এবং উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় এই বয়সি শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। শিশুদের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। নতুন করে আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা জারি করা হয়েছে। স্কুল বন্ধের মেয়াদ বাড়বে কি না, তা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ বাবা-মায়েদের প্রতি তাদের সন্তানদের পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। কেন না, চলমান এই তাপপ্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনের আরো ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আমাদের শিশুও সবচেয়ে অসহায়, জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার প্রতি নজর দিতে হবে।

শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের বসা ও খেলার জন্য ঠান্ডা জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। তপ্ত দুপুর ও বিকালের কয়েক ঘণ্টা তাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখতে হবে। শিশুরা যেন হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সারা দিন তারা যেন প্রচুর পানি পান করে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। তবে হিটস্ট্রোকের উপসর্গ বিশেষ করে কোনো কিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ্বর, হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে। শুধু শিশুরাই নয়। বয়স্কদের প্রতিও অনুরূপভাবে সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত