বিসিএস পরীক্ষায় সময়ের পরীক্ষা

সময় জ্ঞানের মমার্থ উপলদ্ধির কোনো বিকল্প নেই

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সময় জ্ঞানের উপলব্দি অনুধাবন করতে না পারলে জীবনে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সময়ের কাজ সময়ে করার কোনো বিকল্প নেই। যথাসময়ে অফিসে যাওয়া কিংবা যে সময়টি যে কাজটি করার জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়, সেই কাজটি যথাসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সম্পাদন না করলে কি ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, সেটা হাড়ে হাড়ে অনুধাবন করেছে এবারের ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ ্রহণকারীরা। গত শুক্রবার সকাল ১০টায় ২ ঘণ্টার এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সামান্য কয়েক মিনিট পরে হলে পৌঁছানোর কারণে অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। যেসব পরীক্ষার্থী এবারের ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তাদের মধ্যে কারো কারো সরকরি চাকুরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। এটাই ছিল তাদের শেষ পরীক্ষা।

পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে কেউ কেউ উত্তপ্ত রাস্তার মধ্যে গড়াগড়ি করেছেন। পরীক্ষায় সামান্য বিলম্ব করার পর অনেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে অনুনয় বিনয় করেছেন। কিন্তু কর্তা-ব্যক্তিদের মন গলেনি। এ পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ছিল পরীক্ষার সময়সূচি ও কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে। তবে অভিযোগ করা হয়, অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের কাছে পিএসসির নির্দেশনাটি পৌঁছেছে পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরুর ১৬ মিনিট পর। এদিকে নির্ধারিত ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রের গেট বন্ধ করে দেওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি কোনো কোনো শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, শেষ সময়ে কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কোনো সতর্কতা না দিয়েই গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে তেজগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এমনি ২০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি কেবলমাত্র কয়েক মিনিট বিলম্বে কেন্দ্রে প্রবেশ করার জন্য। নির্দেশনায় বলা হয়েছে- প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। তবে অভিযোগ রয়েছে সাড়ে ৯টার এই নির্দেশনা যদি ১০টার পর আসে তাহলে ওই ধরনের নির্দেশনার কার্যকারিতা খর্ব হয়। ৯টা ৩০ মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গে গেটটা বন্ধ করে দেয়া হয় কোনো সতর্কতা বা নির্দেশনা না দিয়েই। ৯টা ৩১ মিনিটেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে বারবার আকুতি জানিয়ে কোনো কাজ হয়নি। অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগেও পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়। অথচ বিসিএস পরীক্ষায় কোনো পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয়নি। কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকটা একঘেয়েমিতা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো পরীক্ষার্থী। তারা জানান, ১ মিনিটের জন্য অনেকগুলো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেল। ১ মিনিট তো মানুষের ঘড়ির কাঁটাও এদিক-সেদিক হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পরীক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষ যদি এতই কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে শেষ সময়ে কেন কেন্দ্রের সামনে মাইকিং করে বলা হলো না কেন! পিএসসিও কি এই ধরনের দায় এড়াতে পারে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। পরীক্ষার হলে ঢুকে যাওয়ার পর ফোনে পিএসসির নির্দেশনামূলক মেসেজ আসলে তো আর করার কিছুই থাকেনা। তবে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন জাানিয়েছেন এ বিষয়ে আমরা বারবার বলেছি, একটু সময় নিয়ে কেন্দ্রে আসবেন, ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। তারপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে না পারে, তাহলে আমাদের দৃষ্টিতে সে পরীক্ষার অযোগ্য। আগামী দিনে আমাদের দেশে যেসব পাবলিক পরীক্ষা কিংবা চাকরির পরীক্ষা আসবে, সেই সব পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা যেন সময়জ্ঞানের প্রতি সতর্ক থাকেন। বিশেষ করে রাজধানী শহরের যানজট ও ভিআইপি মুভমেন্ট মাথায় রেখে ঘর থেকে সময় নিয়ে বের হওয়া উচিত। এছাড়া অনেক পরীক্ষার্থী ভুল করে ভুল কেন্দ্রে গিয়ে হাজির হন। তখন সঠিক কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য তার আর বাড়তি সময় থাকে না। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি পরীক্ষার কেন্দ্রটি আগের দিনে দেখে আসা হয়। আগামী দিনে আর যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই কামনা থাকবে।