ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা

রাজু আহমেদ
অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা

পৃথিবীতে যতগুলো ভালো কাজ টিকে আছে, সেগুলোর মধ্যে বৃক্ষরোপণ অন্যতম একটি। শুধু মানুষ নয় বরং সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ ও নিঃসরণের যে চক্র তা নিয়ন্ত্রণ করে গাছপালা, বৃক্ষ-তরুলতা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিবেশ-প্রকৃতিকে রক্ষা করতে বৃক্ষ প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই যে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা, সূর্যের তাপে মানুষ পুড়ছে-এর পেছনেও বৃক্ষ সংকটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃক্ষরোপণ একটি জীবন্ত সাদকাহ। এ সম্পর্কে মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা খেতে ফসল বোনে। আর তা থেকে কোনো পোকাণ্ডমাকড় কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বোখারি, হাদিস : ২৩২০; মুসলিম, হাদিস : ৪০৫৫)।

ইসলাম ধর্ম বৃক্ষরোপণকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং গুরুত্বসহকারে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষরোপণ করে আর ফলদার হওয়া নাগাদ তার দেখাশোনা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফলের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে সদকার সওয়াব দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৭০২; শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩২২৩)। ধর্মে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে শুধু নির্দেশনা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং বিনাপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। পরিবেশ শান্ত, শীতল ও মনোমুগ্ধকর রাখতে গাছের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেন প্রিয় নবী (সা.)। আবদুল্লাহ ইবনে হুবশি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৪১)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে [যে গাছ মানুষের উপকার করত], আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৬/১৪০)। বৃক্ষ থেকে ফুল-ফল, ছায়া কিংব জ্বালানি এসব উপকারের কথা বাদ দিলাম। কিন্তু জীবজগতের অস্তিত্ব টিকে থাকে যে বৃক্ষের দ্বারা সেগুলোর ঋণ কী করে ভুলি? মানুষের বাঁচা-মরানির্ভর করে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইড চক্রের ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ প্রতিদিন ১১ হাজার লিটার বাতাস নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে, যা সে বৃক্ষ থেকে বিনামূল্যেই পেয়ে থাকে। বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন ৫৫০ লিটার খাঁটি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। যদি এই সমপরিমাণ অক্সিজেন টাকা দিয়ে কিনতে হতো, তবে প্রতিদিন ১৮ লাখ টাকা খরচ করতে হতো! উল্লেখ্য, কোনো ধরনের খাবার ছাড়া বেঁচে থাকা যায় অন্তত ২১ দিন; পানি ছাড়া ৩ দিন আর বাতাস ছাড়া বেঁচে থাকা যায় মাত্র ৩ মিনিট। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। গাছপালা ও বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। চারদিক সজীব-সতেজ ও স্বাভাবিক রাখে।

সারা দেশের মানুষ তীব্র গরমে যেভাবে কষ্ট পাচ্ছে তা অসহনীয় ও অবর্ণনীয়! ২৬ এপ্রিল-২০২৪ চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, যা চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অফিস। এমনকি গত ৭৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটি! থার্মোমিটারে তাপমাত্রায় ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও অনুভূত তাপমাত্রাা ৪৫-এর মত। সবকিছু পুড়িয়ে যাচ্ছে। হিট ওয়েভে উৎপাদন ব্যবস্থায় ধ্বংস নেমেছে, কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে, খামারির মুরগি মারা যাচ্ছে, মাছ কাতরাচ্ছে এবং ফসল পুড়ে যাচ্ছে। কাজেই বৃক্ষরোপণ আন্দোলন ত্বরান্বিত করতেই হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত