ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্রমিকরাই কারখানার প্রাণ

ভোগ বিলাসে শ্রমিক নেতাদের জীবনযাপন
শ্রমিকরাই কারখানার প্রাণ

বিশ্ব সভ্যতা বিনির্মাণে শ্রমিক শ্রেণির অবদান সবচেয়ে বেশি। অথচ দেশ-বিদেশে শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত ও অবহেলিত। তারা যেমন মালিকের মাধ্যমে বঞ্চনার শিকার হন, তেমনি তাদের যারা নেতৃত্ব দেন তারাও শ্রমিকদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেন। অধিকার আদায়ের দাবিতে শ্রমিকরা অনেক সময় রাস্তায় নেমে আসেন। তখন কখনো কখনো তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ হয় আবার কখনো হয় না। অধিকার আদায় করতে গিয়ে বারবার রক্ত ঝরাতে হয়েছে শ্রমিকদের। প্রতি বছর পহেলা মে আসলে স্মরণে আসে ১৮৮৬ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটে রক্ত দিয়েছিলেন শ্রমিকরা। সেই থেকে শুরু হয় বিশ্ব শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি ও জীবনমান উন্নয়নসহ একাধিক দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছিল শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবি ছিল ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর ৮ ঘণ্টা নিজের জন্য। কিন্তু তারা তখন ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করত মালিকের নির্দেশে। শাসক মালিকগোষ্ঠীর হিংস্র আক্রমণে সভ্যতার নির্মাতা শ্রমিকের তাজা রক্ত ঝরছিল সেদিন। আন্দোলন মিছিলে পুলিশের নৃশংস গুলিতে অনেক শ্রমিক তাজা প্রাণ হারান এবং পরে বিচারের মাধ্যমে কয়েকজনকে মৃত্যুদন্ডও দেওয়া হয়। এভাবে আত্মবলিদানের মাধ্যমে তারা কায়েম করেছিলেন ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৮৯৪ সাল থেকে শ্রমিক দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯১ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। স্বীকৃতি পায় মে দিবস। ১৯৯৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমজাতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পহেলা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সব গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে সব শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশেষে ১৯২৩ সালে লেবার পার্টি অব হিন্দুস্থান ভারতে দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মে দিবস সাধারণ লোকদের কাছে অন্যান্য দু-চারটা দিনের মতো সাধারণ দিন হলেও শ্রমজীবী মানুষের কাছে এই দিনটা অনেক বেশি গৌরবের। মে দিবসের সঙ্গে মিশে আছে তাদের রক্ত, আত্মত্যাগ, অধিকার আদায়ের চেতনা। বর্তমান বাজারে অনেক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এখনো তারা পুঁজিপতি মালিক শ্রেণির স্বার্থের নিকট জিম্মি। নেই ন্যায্য মজুরি, নেই কর্মক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য শ্রমিকদের অবদানকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। শিল্পের বিকাশের জন্য চাই শিল্প। শ্রমিক সমস্ত দিন অমানুষিক পরিশ্রম করে শিল্প সৃষ্টি করে। অথচ বিনিময়ে তার ভাগ্যে যে মজুরি জোটে তা দিয়ে জীবনযাপন করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। অথচ তারই তৈরি শিল্পের মুনাফা ভোগ করে পুঁজিপতিরা হয় সুবিশাল সম্পদের অধিকারী। পুঁজির মালিক কেবলই পুঁজি খাটিয়ে ধনী থেকে হচ্ছে আরও ধনী। পক্ষান্তরে, শ্রমিক রাত-দিন গাধার খাটুনি খেটেও উন্নতি করতে পারছে না নিজের অবস্থার। দুঃখজনক হলো বছরে কেবল পহেলা মে ঢাকঢোল পিটিয়ে তাদের স্মরণ করা হয়। আর, সারা বছর শ্রমিক অধিকারের দাবি থেকে যায় আড়ালে। এ থেকে বেরিয়ে এসে মে দিবসের চেতনায় আদায় করতে হবে শ্রমিকের অধিকার। এটাই হোক মে দিবসের মূলমন্ত্র। তবে আফসোসের কথা হচ্ছে আমাদের দেশের শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করে কল-কারখানার চাকা সচল রাখেন অথচ শ্রমিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে কতিপয় শ্রমিক নেতারা আয়েসি জীবনযাপন করছেন। মূলত তারা কোন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক না হয়েও শ্রমিকদের কল্যাণের অঙ্গীকার করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ম্যানেজ’ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। মালিকরা শ্রমিকদের খুশি করার চেয়ে শ্রমিক নেতাদের খুশি করতে বেশি ব্যস্ত। কেননা আমাদের দেশের শ্রমিকরা তেমন একটা সচেতন নন। তারা মনে প্রাণে এমন আস্থা পোষণ করেন যে, তাদের নেতারা তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করবেন। তাই নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে শ্রমিকরা কলকারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামে এবং কখনো কখনো নিজের রুটি রুজির স্থান ভাঙচুর করে। আমাদের দেশে বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিক নেতাদের বিলাসী জীবনযাপনের বিস্ময়কর তথ্যে পাওয়া যায়। দেশের কতিপয় গার্মেন্ট শ্রমিক নেতার বিদেশ সফর ও দেশে বিলাসী জীবনের বিস্ময়কর খরব অনেকেরই জানা। গার্মেন্ট কর্মীদের কষ্টের জীবন দেখিয়ে তাদের নেতারা বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল থেকে ফায়দা লুটছে কি না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত