শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য আমাদের কী করা দরকার?
এমএ মতিন
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল কল্যাণমুখী উন্নত রাষ্ট্রে পরিণিত করতে হলে জনশক্তি উন্নয়ন অপরিহার্য। জনশক্তি উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে গুণগত শিক্ষা। এজন্য আমাদের দেশে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে শিক্ষার পরিমাণগত দিকের চেয়ে গুণগত মানের দিকে অধিক নজর দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন উপাদানের গুণগত পরিবর্তন সাধন করতে হবে। গুণগত শিক্ষা একুশ শতকের একটি অন্যতম চাওয়া।
কিন্তু গুণগত শিক্ষা বলতে কী বোঝায়? জাতিসংঘ এর সদস্য দেশসমূহের জন্য ২০১৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা [Sustainable Development Goals (সংক্ষেপে এসজিডি)] নির্ধারণ করে দিয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল প্রতিটি সদস্য দেশকে এর বাস্তবায়নের অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রতি বছরই এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের প্রতিবেদন প্রতিটি দেশকে দাখিল করতে হয় এবং এগুলো জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট শাখা মূল্যায়ন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের জন্য আগামী ২০২৬ (করোনার জন্য এক বছর বাড়িয়ে ২০২৭ করা হয়েছে) সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের সনদ লাভের জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজনীয় সব চলকের [গ্রস ন্যাশনাল ইনডেক্স (জিএনআই), হিউম্যান এসেটস ইনডেক্স (এইচএআই) এবং ইকোনমিক ভালনারেবিলিটি ইন্ডেক্স (ইভিয়াই),] উপর অর্জিত ফলাফল (উপাত্ত) দাখিল করতে হচ্ছে। সুতরাং দুটি বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা অর্জনই প্রকৃত অর্থে গুণগত শিক্ষা। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য শিক্ষাকে সৃজনশীল ও প্রায়োগিক করে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহী এবং শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনে সামর্থ্য করে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষার সর্বস্তরে গুণগত পরিবর্তন সাধন করা। গুণগত শিক্ষা এমন একটি পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা যার উদ্দেশ্য হলো সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে সমাজে একজন পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল নাগরিক হয়ে ওঠে। তাই শিক্ষায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন প্রতিটি শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং স্কুলের লব্ধ জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের জন্য উৎপাদনশীল নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে। যেখানে প্রতিটি শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের যোগান থাকবে। প্রতিটি শিশু একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে, উন্নত জীবনের চর্চা করবে। শিখন পরিবেশ হবে ভীতিহীন। শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে শিখন-শেখানো কাজে অংশগ্রহণ করবে ও উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ও বৃহত্তর সমাজের কাজে সম্পৃক্ত হতে শিখবে। যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকের সংস্পর্শে শিক্ষার্থীরা আত্মবিকাশের সুযোগ পাবে। তারা কর্মজীবনের জন্য তৈরি হবে এবং বৈশ্বিক পরিবেশে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
গুণগত শিক্ষা হবে একীভূত যেখানে সব ধরনের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে অতি মেধাবী, ক্ষীণ বুদ্ধি, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী, পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু, দলিত জনগোষ্ঠী যেমন পড়তে পারবে তেমনি বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতির মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিখন পরিচালিত হবে। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে [(Millennium Development Goals (MDG)] টেকসই রূপদানের লক্ষ্যে ২০১৬-২০৩০ মেয়াদে এসডিজি ঘোষণা করেছে। এসজিডির মোট ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৪নং লক্ষ্য হচ্ছে গুণগত শিক্ষা। অর্থাৎ উন্নয়নশীল সব দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪নং লক্ষ্যে বর্ণিত গুণগত শিক্ষার সব চাহিদা পূরণ করবে। গুণগত শিক্ষার আওতাধীন লক্ষ্যমাত্রা-৪ এ কী কী উপাদান অর্জনের কথা বলা হয়েছে তা পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য জাতিসংঘ প্রকাশিত ডকুমেন্ট থেকে কিয়দংশ নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো-
এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা-৪
৪.১. ২০৩০ সালের মধ্যে সব ছেলে ও মেয়ে যাতে প্রাসঙ্গিক, কার্যকর ও ফলপ্রসূ অবৈতনিক, সমতাভিত্তিক ও গুণগত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে তা নিশ্চিত করা;
৪.২. ২০৩০ সালের মধ্যে সব ছেলে ও মেয়ে যাতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ শৈশবের একেবারে গোড়া থেকে মানসম্মত বিকাশ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে তার নিশ্চয়তা বিধান করা;
৪.৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগসহ সাশ্রয়ী ও মানসম্মত কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চ শিক্ষায় সব নারী ও পুরুষের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা;
৪.৪. চাকরি ও শোভন কর্মে সুযোগলাভ এবং উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতাসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দক্ষতাসম্পন্ন যুবক ও প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো;
৪.৫. অরক্ষিত জনগোষ্ঠীসহ অসমর্থ (প্রতিবন্ধী) জনগোষ্ঠী, নৃ-জনগোষ্ঠী ও অরক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সব পর্যায়ে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষায় নারী-পুরুষ বৈষম্যের অবসান ঘটানো;
৪.৬. নারী ও পুরুষসহ যুবসমাজের সবাই এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতা ও গণন-দক্ষতা অর্জনে সফলকাম হয় তা নিশ্চিত করা;
৪.৭. অপরাপর বিষয়ের পাশাশাশি, টেকসই উন্নয়ন ও টেকসই জীবনধারার জন্য শিক্ষা, মানবাধিকার, নারী পুরুষ সমতা, শান্তি ও অহিংসামূলক সংস্কৃতির বিকাশ, বৈশ্বিক নাগরিকত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়নে সংস্কৃতির অবদান সম্পর্কিত উপলব্ধি অর্জনের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থী যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা;
৪.ক. শিশু, অসামর্থ্য (প্রতিবন্ধী) ও জেন্ডার বিষয়ে সংবেদনশীল শিশুদের জন্যে শিক্ষা সুবিধার নির্মাণ ও মানোন্নয়ন এবং সবার জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর শিক্ষা পরিবেশ প্রদান করা;
৪.খ. উন্নত দেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কারিগরি, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচিসহ উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির জন্য উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রদেয় বৃত্তির সংখ্যা বৈশ্বিকভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো; এবং
৪.গ. শিক্ষক প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা। উৎস: জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন ডকুমেন্ট গুণগত শিক্ষার উপাদান
জাতিসংঘ প্রদত্ত এসজিডির লক্ষ্যমাত্রা-৪ এর উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করলে গুণগত শিক্ষার যে উপাদানগুলো আমাদের সামনে প্রতিভাত হয় সেগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে -
যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের পর্যাপ্ততা, যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, মানসম্মত শিখনসামগ্রী ব্যবহার, শিখন-শেখানো পদ্ধতির ও কৌশলের কার্যকর ব্যবহার, নিরাপদ ও সহযোগিতামূলক শিখন পরিবেশ, উপযুক্ত মূল্যায়ন ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তার ও কর্মচারীর সুসম্পর্ক, ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা, অহিংসামূলক পরিবেশ, শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুবিধা।
এসজিডি কর্তৃক নির্ধারিত গুণগত শিক্ষার উপরোল্লিখিত উপাদানগুলো বাস্তবায়নের জন্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষা সরঞ্জামের সাথে যে উপাদানটি সবচেয়ে জরুরি সেটি হলো উপযুক্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষকের সাথেই গুণগত শিক্ষার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি। যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যত বেশি উন্নত সে দেশ তত বেশি উন্নত। আর এই উন্নয়নের কারিগর হলো শিক্ষক। ‘শিক্ষক’ এমন একটি শব্দ যে শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে ন্যায়নিষ্ঠা, প্রজ্ঞা, অন্তহীন ত্যাগ, মূল্যবোধ, আদর্শবান, অনুপ্রেরণাদানকারী, শুদ্ধতা, সহায়তাকারী ব্যক্তিত্বের একটি ছবি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়, একটি ব্রত। শিক্ষকতা পেশাকে যেসব দেশ সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে সেসব দেশ দ্রুত সময়ে এগিয়ে গেছে।
শিক্ষকদের বেতন
ভালো শিক্ষক, ভালো ছাত্র, ভালো পাঠ্যসূচি, ভালো অবকাঠামো, ভালো গ্রন্থাগার, ভালো খেলার মাঠ, উপযুক্ত সহপাঠসূচি নিশ্চিত করা গেলেই আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মান বিশ্বমানের হবে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু সেইসাথে শিক্ষকদের ভালো বেতন ও উন্নত সামাজিক মর্যাদা প্রদানের কথা অনেকেই বেমালুম ভুলে যান। এসজিডি’র লক্ষ্যমাত্রায় আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক তৈরির কথা বলা হলেও এর পূর্বশর্ত যে শিক্ষকদের স্বদেশে প্রচলিত ক্রয়ক্ষমতা [(Purchase Power Parameter (PPP)] বৃদ্ধির লক্ষ্যে যথোপযুক্ত বেতনভাতা ও সামাজিক মর্যাদা প্রদান প্রয়োজন তা বলাই বাহুল্য। অতি সম্প্রতি আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেক্সট বুক বোর্ড (এন সি টি বি) যে আধুনিক পাঠসূচি প্রণয়ন করেছে যা জাতীয়ভাবে কিছুটা বিরোধিতার মুখোমুখীও হয়েছে। তার স্বপক্ষে প্রণয়নকারীদের পক্ষে বলা হয়েছে যে, এই শিক্ষাক্রম ফিনল্যান্ড, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের পাঠক্রম অনুসরণ করে করা হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, জাপান, ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের পাঠক্রম অনুসরণ করে একটি পাঠসূচি প্রণয়ন করা খুব বেশি কঠিন নয়। উল্লিখিত দেশসমূহ ভ্রমণ না করেও তাদের দেশের পাঠক্রম অনুসরণ ও অনুকরণ করে সহজেই একটি পাঠক্রম রচনা করা যেতে পারে। সমস্যা হলো- সেটি বাস্তবায়ন। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চালিকা শক্তি হচ্ছে- শিক্ষক। শিক্ষকদের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান রেখেই বলছি- আমাদের শিক্ষকদের (কিছু শিক্ষক বাদে) যোগ্যতা কি ফিনল্যান্ডের, জাপানের এমনকি ভারতের শিক্ষকদের সমান? যদি সত্যিকারভাবে তা না হয় তাহলে, সেসব দেশের অনুরূপ পাঠক্রম আমাদের শিক্ষকরা বাস্তবায়ন করবেন কীভাবে?
এখানে আমাদের শিক্ষকদের বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। এ কথা সত্য যে, বিনামূল্যে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কেউ কাজ করতে চায় না। এটাই মনুষ্য স্বভাব। সেজন্য যারা চাকরি করেন তাদের কাছে ‘বেতন’ শব্দটির আবেদন অনেক। ‘বেতন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো মজুরি, পারিশ্রমিক বা কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত টাকা। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ বা পরিশ্রম করার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় পর একজন কর্মী/শ্রমিক যে পারিশ্রমিক বা আনুতোষিক লাভ করেন, তা-ই বেতন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ বেতনের বিনিময়ে কাজ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজ কেউ করবেন কি না, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ভর করে ‘ওই কাজের পারিশ্রমিক কত’, তার ওপর। কাজটির পারিশ্রমিক যত বেশি হবে, ততই সেটির দায়িত্ব মানুষ কাঁধে নিতে চাইবে। অর্থাৎ, ভালো বেতনে কাজ করার প্রবণতা মানুষের একটা জন্মগত স্বভাব। জন্মগতভাবেই মানুষ যেহেতু কোনো কাজের বিনিময়ে কিছু মূল্য পেতে চায় এবং বেশি মূল্যের কাজের প্রতি আগ্রহ বেশি, সেহেতু সম্মানিত শিক্ষকরাও তাদের জ্ঞান বিতরণের বিনিময়ে একটা সম্মানজনক ও প্রত্যাশামাফিক মজুরি পেতে চান। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের সব পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খুবই অপ্রতুল। আমাদের শিক্ষকরাও চান আর দশজন পেশাজীবীর মতো তারাও যেন ভালো বেতন পান। একজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী, একজন প্রশাসক কিংবা একজন ব্যাংকার উচ্চমানের বেতন পাচ্ছেন। অথচ শিক্ষকরা নিজেরাই এসব প্রকৌশলী, চিকিৎসক, প্রশাসক কিংবা ব্যাংকার তৈরির কারিগর হয়েও তাদের তুলনায় কম বেতন পাচ্ছেন! তাই যেসব শিক্ষকের সুযোগ থাকে চাকরি পরিবর্তন করার, তারা ‘শিক্ষকতা’ নামক মহান পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যান।
আমাদের দেশে এখনও সামাজিক বিচারে শিক্ষকদের সম্মানের চোখে দেখা হয় বটে কিন্তু রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক মর্যাদার বিচারে শিক্ষকরা প্রথম সারিতে তো নেই-ই, বরং দ্বিতীয় শ্রেণির পরে তাদের অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নানা কারণে তাও অনেকটা গুরুত্ব পান কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সে তুলনায় অনেকটা উপেক্ষিত। অথচ একটি রাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ভিত গড়ে তোলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা সে কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো গড়ে তুলতে পারবেন না। সুতরাং যে কোনো বিচারে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের গুরুত্ব ও মর্যাদা হওয়া উচিত সম্মানজনক।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত শেষ পে-স্কেল অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবীদের তালিকায় শিক্ষকদের মধ্যে আছেন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক। প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবীদের এই তালিকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা নেই। শিক্ষকদের এত কম বেতন আর এমন মানবেতর জীবন বিশ্বের উন্নত কোনো দেশে দেখা যায় না। আমরা যদি ইউরোপের উন্নত দেশ ফিনল্যান্ডের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে যে, সেখানকার শিক্ষকদের বেতন অন্যদের চেয়ে বেশি এবং শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা সেখানে সর্বোচ্চ। বেতন ও সামাজিক মর্যাদা সর্বোচ্চ হওয়ায় সে দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসেন। আর আমাদের দেশের চিত্র ভিন্নতর। চাকরির শুরুতেই সরকারি প্রাইমারি স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষকের বেতন হয় ১৩তম গ্রেডে। যেখানে শুধুমাত্র বেসিক বেতন থাকে ১১ হাজার থেকে ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ চাকরির শুরুতে বেসিক বেতন হবে ১১ হাজার টাকা, এরপর সময়ের সাথে সাথে বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা পর্যন্ত। সহকারী শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পান মূল বেতনের ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ কমপক্ষে ৬ হাজার ৬০০ টাকা। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সহকারী শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ৫০ শতাংশ।
এর বাইরে দেশের বাকিসব অঞ্চলের জন্য বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ। সহকারী শিক্ষকদের অন্যান্য নিয়মিত ভাতার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, টিফিন ভাতা ২০০ টাকা, এবং যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা। এই হিসাবে চাকরির একদম শুরুতে প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের মোট বেতন হয় ঢাকা সিটি এলাকায় ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য সিটি এবং সাভার পৌর এলাকায় মোট ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরে অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষকদের মোট বেতন ১৭ হাজার ৯৫০ টাকা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি পায় ৫ শতাংশ হারে। সেই সাথে উৎসবভাতা পান দুটি করে।
এখানে আমরা বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের সাথে উন্নত ২-১টি দেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শিক্ষকদের মাসিক বেতনের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছি।
ফিনল্যান্ডের একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষক মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন! আরেক উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বেতন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। উচ্চবেতনের পাশাপাশি সেখানকার শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদাও অনেক বেশি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন আমাদের চেয়ে ঢের বেশি।
শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা
বিশ্বে অনেক দেশ আছে, যেখানে শিক্ষকদের মর্যাদা সবার উপরে। উদাহরণ হিসেবে জার্মানির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়টি একদিকে যেমন সমাজ নির্ধারণ করে, তেমনি নির্ধারণ করে রাষ্ট্র। যারা শিক্ষা ও শিক্ষককে যত বেশি গুরুত্ব দেয়, তাদের উন্নতি তত দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এও সত্য যে, সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছ থেকে মর্যাদা জোর করে বা বলেকয়ে আদায় করা যায় না; কাজের মাধ্যমেই তা আদায় করতে হয়। আমাদের দেশে একসময় শিক্ষকদের যে রকম শ্রদ্ধার আসনে দেখা হতো বর্তমান অবস্থা সে রকম নয়। এজন্য শিক্ষকরাও দায়ী। শ্রেণিকক্ষে না পড়ানো, ঠিকমতো ক্লাসে না আসা, প্রাইভেট পড়ানোর প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া, নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়া ইত্যাদি কারণে শিক্ষকরা তাদের আগের অবস্থান হারিয়েছেন। যদিও অধিকাংশ শিক্ষককে এরকম অভিযোগে অভিযুক্ত করা যাবে না, তবে জনমানসে একবার খারাপ ইমেজ গড়ে উঠলে সেটি দূর করা কঠিন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের দরদ দিয়ে ও দক্ষতার সঙ্গে পড়ানোর বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। এখনকার শিক্ষকরা অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ পান। সেসব প্রশিক্ষণ তাদের কতটুকু দক্ষ করতে পেরেছে, তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। অথচ বিশ-ত্রিশ বছর আগের শিক্ষকরা এত প্রশিক্ষণ পেতেন না বা তারা হয়তো এতটা দক্ষও ছিলেন না; কিন্তু পড়ানোর প্রতি তাদের দরদ বা নিষ্ঠা নিয়ে খুব কমই প্রশ্ন তোলা যায়। সুতরাং শিক্ষকরা যে তাদের মর্যাদার অবস্থান হারিয়েছেন, এতে শুধু রাষ্ট্রীয় বা শিক্ষাব্যবস্থার দায় দেখলে চলবে না- শিক্ষকদের নিজেদের ঘাটতিটুকুও বিচার্য।
একটি শিক্ষিত, উন্নত ও আধুনিক জাতি গড়ে তুলতে হলে প্রখর মেধা ও জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিকে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে। তবে মেধাবীরা তো এমনি এমনিই শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হবেন না। এ জন্য তাদের ভালো বেতন ও উন্নত সামাজিক মর্যাদা প্রদান করতে হবে। ভালো বেতন ও উন্নত সামাজিক মর্যাদাই হতে পারে ‘শিক্ষকতা’ নামক কাজের শ্রেষ্ঠ বিনিময়।
শিক্ষকরা বর্তমানে যেটুকু বেতন পাচ্ছেন তা কি বাজার দর অনুযায়ী তাদের পিপিপি কি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য? সেই সাথে তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য যথেষ্ট? একজন শিক্ষককে যখন পরিবারের সদস্যদের রুটি-রুজির চিন্তা করতে হয়, তখন তিনি তো প্রাইভেট পড়ানোর কথা চিন্তা করবেনই। এ ধরনের অবস্থায় তাদের জোর করে প্রাইভেট পড়ানো থেকে বিরত রাখার উপায় বের করা হলে তারা রোজগারের অন্য কোনো উপায় বের করবেন। বিদ্যালয়ে পড়ানোর যাবতীয় ব্যবস্থা তখন পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর হবে না যতক্ষণ শিক্ষককে বেতনের দিক দিয়ে নির্ভার না করা যায়। চলমান পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকরা বলার মতো বেতন পেলেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন এখনও করুণ। শিক্ষকতা পেশায় থেকে তাঁরা সমাজে সম্মান নিয়ে চলতে পারেন না। টাকার অভাবে তারা একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে পর্যন্ত যেতে পারেন না। সংসারের খরচ মেটাতে পারেন না। আত্মীয়স্বজনের বিপদণ্ডআপদে পাশে দাঁড়াতে পারেন না। ভালো কাপড় কিনতে পারেন না বলে তাদের বেশভূষায় দীনতার ছাপ পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে শিক্ষক সমাজ মানসিকভাবে আরও বেশি অসহায় ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অগত্যা সুযোগ পেলেই তারা অন্য চাকরিতে চলে যান!
বেতনের সঙ্গে যেহেতু অনেক বিষয় সম্পৃক্ত, তাই শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে বেতনের বিষয়টিকে আলাদা করা প্রয়োজন। বেতন স্কেল কখনও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয়। তাই শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখা প্রয়োজন। কারণ তারা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলেন, মানুষের মধ্যকার মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তুলতে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন। অন্তত সে হিসেবে বিবেচনা করলেও শিক্ষকদের বেতন স্কেল হওয়া উচিত ভিন্ন বা আলাদা। আর সেখানে যোগ্যতার ভিত্তিতেই বেতন নির্ধারণ করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনক্রম আলাদা করার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ মাস্টার্স পাস একজন শিক্ষক প্রাথমিকে যে বেতন পাবেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও সমমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতার শিক্ষক একই বেতন পাবেন। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের উচ্চতর পর্যায়ে কাজ করার, নেতৃত্ব দেওয়ার, পড়াশোনার সব সুযোগ উন্মুক্ত থাকা প্রয়োজন। যদি এমন করা সম্ভব হয় কেবল তখনই আমরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ভালো শিক্ষক পাব। আর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ভালো শিক্ষক পাঠদান করলে শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তন হতে বাধ্য। তখন হয়তো দেখব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করবেন (বর্তমানে ১০ শতাংশ পাস করেন)। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকে নন-ক্যাডারদের প্রথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষক হিসেবে নেয়া যায় কি না বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়ও শিক্ষকদের সামনের সারিতে রাখা প্রয়োজন। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা শিক্ষকদের হাতে তৈরি। শিক্ষককে সম্মান ও মর্যাদা দিলে রাষ্ট্র কিছু হারাবে না, বরং তাদের সম্মান দিয়ে রাষ্ট্র সম্মানিত হবে। একেকজন শিক্ষক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাদের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের পরিবর্তন যত দ্রুত ঘটানো সম্ভব, তেমনটি অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়। শিক্ষকরা নিজেরা যেমন নিজের সীমাবদ্ধতা কাটাতে চেষ্টা করবেন; তেমনি রাষ্ট্রও শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে নিয়ে যাবে এ প্রত্যাশাটুকু শিক্ষক হিসেবে করতে চাই।
লেখক : উপদেষ্টা, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রক্টর, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪১ এবং প্রাক্তন পরিচালক, বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), সাভার, ঢাকা।