ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তাপ প্রতিরোধে বনায়নের ভূমিকা অপরিসীম

আফতাব চৌধুরী
তাপ প্রতিরোধে বনায়নের ভূমিকা অপরিসীম

বৃক্ষনিধন ও বনাঞ্চল উজাড়ের খবর প্রায়শই পত্র-পত্রিকায় চোখে পড়ে। মাত্র ক’দিন আগে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিলেট বন বিভাগের অধীনে বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে সমানে গাছকাটা চলছে। একশ্রেণির অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বন থেকে কোটি কোটি টাকার কাঠ ও বাঁশ অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সরকার ইতিপূর্বে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বনজ সম্পদ রক্ষার্থে গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেছেন। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল। সরকারের এ শিথিলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের বনজ সম্পদ উজাড় করে চলেছে এবং সারা দেশের বনাঞ্চলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে যে মুহূর্তে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব সে^াচ্চার সে মুহূর্তে এমন খবর আমাদের জন্য ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের প্রায় ৫ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বনাঞ্চল রয়েছে। এ বনাঞ্চল দেশের মোট জমির ৭ ভাগ মাত্র। দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ থাকার কথা ৩০ ভাগ, কিন্তু আমাদের তা নেই। উপরন্তু এ ৭ ভাগ বনাঞ্চল থেকে নির্দয়ভাবে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। যেভাবে বৃক্ষ নিধন ও বনাঞ্চল উজাড়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বনাঞ্চলের পরিমাণ ৭ ভাগ আছে কি-না, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটানো ছাড়াও বৃক্ষ এদেশের প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। বনভূমি বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি হতে প্রাণিকূলকে রক্ষা করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃক্ষ ও বনাঞ্চলের অভাবে প্রায় প্রতি বছরই আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বনাঞ্চল সম্প্রসারণ করা ছাড়া কোনো গতি নেই। আর যদি থেকেও থাকে তাহলে সেটা আমাদের মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। বস্তুত বনজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণের উপরই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশে নির্ভর করে। মাত্র ক’দিন আগে ঢাকা থেকে প্রকাশিত অন্য একটি খবরে জানা যায়, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, সাতগাঁও, জুরী, সিলেটের টিলাগড়, খাদিম নগর এলাকার বনাঞ্চল হতে বন বিভাগের কিছুসংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে চোরা কারবারিরা কাঠ কেটে অবাধে চোরাই পথে বিক্রি করে চলেছে। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। চোরাই কাঠের বেশির ভাগই অবৈধভাবে বসানো স’মিলগুলোতে জড়ো করে তা করাত কলের মাধ্যমে সাইজ করে সড়ক ও নদী পথ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে।

বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে দৈনিক ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কাঠ কাটা হয় বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সিলেট অঞ্চলের বনাঞ্চল সংকোচিত হয়ে আসছে এবং এভাবে চলতে থাকলে সিলেট বিভাগের বনভূমির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। শুধু সিলেট কেন, দেশের প্রতিটি বনাঞ্চলে যেভাবে অবাধে গাছ কাটা চলছে, তাতে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করা তো দূরের কথা গ্রামগঞ্জেও ওষুধের জন্য প্রয়োজনীয় গাছ-গাছড়া পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। এ তথ্যে জানা যায়, সিলেট বিভাগে ‘ হাজারের উপর স’মিল রয়েছে যার বেশির ভাগই অবৈধ, কোনো কাগজপত্র নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত