ঝামেলামুক্ত হোক হজ ফ্লাইট

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সময়ের দাবি

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আজ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের হজ ফ্লাইট। চলবে আগামী ১০ জুন পর্যন্ত। জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১১৭টি হজপূর্ব ফ্লাইটে করে ৪৫ হাজার ৫২৫ জন নিয়ে যাবে। আর আগামী ১২ জুনের মধ্যে সৌদি আরবে ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ৪৩টি হজপূর্ব ফ্লাইটে করে বাকি হজযাত্রীদের হজ পালন করতে সৌদি আরবে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ বিমান ২০ জুন সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের নিয়ে ফিরতি ফ্লাইট শুরু করবে এবং সৌদি আরবের বিমান সংস্থা ফ্লাইনাস ২১ জুন থেকে হজ ফিরতি ফ্লাইট চালু করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে রাজধানীর আসকোনা হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আজ প্রথম হজ ফ্লাইটে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ৪১৯ জন যাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। আর আজ দুপুর ১টায় সৌদি আরবের ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বাংলাদেশি হজযাত্রীদের নিয়ে জেদ্দার উদ্দেশ্যে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ বছর মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ বাংলাদেশি হজ পালন করতে পারবেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৫৬২ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮০ হাজার ৬৯৫ জন ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করতে এরইমধ্যে ৪ হাজার ৩১৪ হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন এবং ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করতে ৭৮ হাজার ৮৯৫ হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। ভিসা আবেদনের বর্ধিত সময় আরো এক ধাপ বাড়িয়ে আগামী ১১ মে করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেনি প্রায় ৮০ শতাংশ হজ এজেন্সি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হজ এজেন্সিগুলো বাড়ি ভাড়া করতে গাফিলতি করেছে। কম রেটে বাড়ি ভাড়া করার জন্য প্রতিবার শেষ সময়ে এসে বাড়ি ভাড়া করেন তারা। এবারও তাই করেছেন। এবার এটা করতে গিয়ে নতুন আইনের ফাঁকে পড়ে যায় হজ এজেন্সিগুলো। বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্ধারিত এজেন্সি প্রতিনিধি মোনাজ্জেমদের ভিসা আটকে দেয় সৌদি সরকার। ফলে হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া করতে সৌদি আরবে যেতে পারেননি তারা। এ জায়গায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েও পায়নি বলে অভিযোগ করছে এজেন্সিগুলো। এপ্রিলের শেষের দিকে বিকল্প পদ্ধতিতে মোনাজ্জেমদের ভিসা করার জন্য জিও (সরকারি পত্র) দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এজেন্সির প্রতিনিধিরা এখন সৌদি আরবে গিয়ে বাড়ি ভাড়া করতে হিমশিম খাচ্ছে। হেরেম শরিফের কাছে বাড়ি না পেয়ে অনেক দূরে বাড়ি খুঁজছেন তারা। সেখানেও ভাড়া বেড়ে গেছে। ফলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রীতিমতো সংকট তৈরি হয়েছে। তবে এ সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, সংকট সমাধানে আমরা কাজ করছি। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান বেশিরভাগ এজেন্সির মোনাজ্জেমদের ভিসা নিশ্চিত করতে পারেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে সংকট উত্তরণ সম্ভব, আমরা চেষ্টা করছি। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বুকিং দেওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যাচ্ছেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হজযাত্রীরা ভিসা না পাওয়ায় এজেন্সিগুলো বিমানের টিকিট কাটতে পারছে না। এজন্য বুকিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে না। হজযাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১১ মে’র মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে ভিসার কার্যক্রম। এতে বলা হয়, হজ যাত্রীদের ভিসার জন্য আবেদনের সময় নির্ধারিত ছিলো ২৯ এপ্রিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ভিসার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ১ম দফায় ৭ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ২৫৯টি বেসরকারি হজ এজেন্সির অনেকেই এই বর্ধিত সময়ের মধ্যে ভিসার কার্যক্রম শেষ না করায় দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। এ বর্ধিত সময়ের মধ্যে ভিসার কার্যক্রম শেষ করা না হলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকেই তার দায় নিতে হবে বলে তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ হতে সব হজ এজেন্সিকে এ বিষয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর হজের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মধ্যেকার দাপ্তরিক জটিলতা গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। আর আমাদের দেশের হাজীরা তাদের কারণে ভোগান্তির মুখোমুখি হন। এমন কোনো বছর নেই যে বছর সম্মানিত হাজী সাহেবরা ঝামেলা ছাড়া হজ পালন করতে পেরেছেন। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় মানুষ এ ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ থেকে যারা হজ পালন করতে যান তাদের বয়স সাধারণত অনেকটা বেশি থাকে। বেশি বয়সে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে গিয়ে তারা যে ভোগান্তির মুখোমুখি হন তাতে পরিবারের অন্য সদস্য এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেও উৎকণ্ঠা বাড়ে। দেশে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হজ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা কি একদমই অসম্ভব সেই প্রশ্ন থাকতেই পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশে অনেক বিরাট বিরাট সংকট ও সমস্যার সমাধান সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। আর দেশে একটি সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে না এটা বিশ্বাস করা যায় না। কি করলে দেশে একটা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে অংশীজনদের নিয়ে একটা সংলাপের ব্যবস্থা করলে যদি এই সংকটের কোনো সমাধান হতো তাহলে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারত।