বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের ভাবনা ও সাফল্য

কমল চৌধুরী

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে সবার জন্য বিদ্যুৎকে যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে সরবরাহ করা। উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতের সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে চলতি বছরের মধ্যে সবার জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট এবং উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। সে সময় নতুন সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।

একইসঙ্গে উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জি-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার হতে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পাওয়ার সেলের তথ্যমতে, সরকারের চেষ্টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭ থেকে ১২৮টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। ২০০৯সালে মোট ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হয়েছে, যেগুলোর ক্ষমতা ৩৫৬ মেগাওয়াট। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭৭৫ মেগাওয়াট।

একইভাবে ২০১১ সালে এক হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি, ২০১২ সালে ৯৫১ মেগাওয়াটের ১১টি, ২০১৩ সালে ৬৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি, ২০১৪ সালে ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৬ সালে ১ হাজার ১৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি এবং ২০১৭ সালে দেশে ১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়।

ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারি খাতে ৬ হাজার ৭০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারি খাতে ৪ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোট ১১ হাজার ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি খাতে ২ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সর্বমোট ৪ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। সরকারি খাতে ৭ হাজার ৬১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরবর্তন ঘটবে। এক নজরে ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট থেকে ১৩ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করা, সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৯৭ শতাংশে উন্নীত করা, মাথাপিছু উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার হতে ৫৪৬ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করা। এছাড়াও ৯৯ লাখ নতুন গ্রাহকসহ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎসুবিধা প্রদান।

বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আর বিদ্যুৎ খাতের বড় যে প্রকল্পগুলো এখন বাস্তবায়নের পথে তা শেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতেও সময় লাগবে। এই সময়ে দেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে তুলনামূলক কম অর্থ বিনিয়োগ করে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ৪০৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সরকার চলতি বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকেও ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।