ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোন দিকে এগুচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ!

রায়হান আহমেদ তপাদার
কোন দিকে এগুচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ!

রাশিয়ার বিরুদ্ধে টানা দুই বছর ধরে সম্মুখযুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রাশিয়ার বাহিনীকে পিছু হটানোর পাশাপাশি নিজেদের হারানো ভূখণ্ড ফিরে পেতে কিয়েভের এ লড়াই। জোগান, কৌশল আর সমতল ভৌগোলিক সীমানার দিকে তাকালে বোঝা যায়, ইউক্রেনের বহুল আলোচিত পাল্টা আক্রমণের কৌশল গত বছর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে বাস্তব কিছু ফলাফল এনে দিয়েছে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি রয়েছে। তাই ওই অঞ্চলে যুদ্ধ করতে গিয়ে সুরক্ষা পাওয়া তুলনামূলক কঠিন। সেখানে রুশবাহিনী নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য কয়েক মাস সময় পেয়েছে। তাই বেশ গভীরভাবে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়তে পেরেছে তারা। সারি সারি পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী প্রতিবন্ধকতা, খাদ এবং নতুন খোঁড়া কয়েক কিলোমিটার গভীর বাংকারগুলো ইউক্রেনীয় বাহিনীর সামনে একধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্মুক্ত প্রান্তরগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। কিন্তু সফলতা এসেছে সামান্যই। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মনোযোগ এখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার, গাজা যুদ্ধ, দেশব্যাপী ছড়িয়েপড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি নিবদ্ধ রয়েছে। এই ডামাডোলের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু প্রায় নীরবে চলে গেল। গত সপ্তাহে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ৮০০ দিনের মাইলফলক স্পর্শ করল। কিন্তু এই সংঘাত বন্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যত দিন গড়াচ্ছে, ততই এই সংঘাতের প্রভাব যুদ্ধরত দুই দেশের সীমানার বাইরে গিয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর প্রতিঘাত ভোগ করছে। পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশ্বে শান্তি যে কতটা ভঙ্গুর, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এই সংঘাত। ওয়াশিংটনে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ইউক্রেন নিয়ে তাদের নীতি কী হবে, তা নিয়ে বিবাদ চলছে। অনেক বিতর্কের পর গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ ইউক্রেনকে ৬১ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা বিল অনুমোদন দিয়েছে।

দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে অংশীজনদের বড় চাপের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা শিশু গণতন্ত্র ইউক্রেনকে সমর্থন দিলেও এ ক্ষেত্রে তাদের বেশ কিছু ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ কাজ করেছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, বড় বড় আন্তর্জাতিক উত্তেজনা ও কৌশলী কূটনৈতিক পদক্ষেপের মধ্যে ভারসাম্য আনতে গিয়ে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যে লড়াই চলছে, সেখানে সামরিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সহায়তা সত্ত্বেও তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র যে ৬২ বিলিয়ন ডলারের বিল অনুমোদন করেছে, তার ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য, তাদের ফুরিয়ে যাওয়া রসদ সরবরাহের কাজে। ১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে। ১১ বিলিয়ন দেওয়া হবে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ডে জোগাতে এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাদের তথ্য আদান-প্রদানব্যবস্থা উন্নত করতে। আর ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বেসামরিক খাতে। সামরিক সহায়তা অনুমোদনের খবরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেশ উৎফুল্ল। তিনি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই পার্টিকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। জেলেনস্কি মনে করেন, এ ঘটনা ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। জেলেনস্কি বলেন, বিশ্বের জন্য গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্র যতক্ষণ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সুরক্ষা দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো শক্তিশালী থাকবে। আমেরিকা তোমাকে ধন্যবাদ বলে তিনি তার বিবৃতি শেষ করেন। অন্যদিকে মস্কোয় ক্রেমলিন মুখপাত্রের অবস্থান ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই সংঘাতকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাবে। পেসকভ বলেন, এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হতে পারে, কিন্তু ইউক্রেনের ক্ষতি হবে। গত আটশ’ দিনের সংঘাতের ভয়াবহ স্মৃতি কিয়েভের সরকারি কার্যালয় ও রাস্তায় প্রতিধ্বনিত হয়ে চলছে, তা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়, এই যুদ্ধ কতটা দুর্ভোগের জন্ম দিয়েছে। এই সংঘাত অবসান এবং শান্তি, ন্যায্যতা ও স্বাধীনতার আশাও বেঁচে আছে। যদিও সে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। ইউক্রেন সংঘাত বন্ধে প্রচেষ্টা চলমান। সুইজারল্যান্ডসের নেতৃত্বে একটি শান্তি সম্মেলন করার আয়োজন চলছে। জুন মাসে বার্গেনস্টোক রিসোর্টে সম্মেলনটি হওয়ার কথা। সেখানে পোপ ফ্রান্সিসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের জন্য একটা ন্যায্য ও টেকসই শান্তির পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া ১৬০ জনপ্রতিনিধি ইউক্রেন সংঘাত বন্ধের উদ্দেশ্যে নেওয়া আগের পরিকল্পনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের ওপর ভিত্তি করে একটা শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই সম্মেলনে সংঘাতের মূলে যে দেশটি রয়েছে, সেই দেশটিকেই আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। সম্প্রতি সুইস সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, রাশিয়াকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। সুইস সরকার তাদের এই অবস্থানের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে, মস্কোকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রুশ সরকারের অংশগ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে। ইউক্রেন সংঘাতের মতো বিতর্কিত ইস্যুতে কূটনৈতিক সম্পর্কের যে জটিলতা, তার মধ্যে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটা সংলাপের আয়োজন করা অনেক কঠিন। আরেকটি ঘটনাও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট রুশ নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে যে রাশিয়া যা করেছে, সেটা রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে যে আন্তর্জাতিক সনদ আছে, তার পরিপন্থী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত