কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশে ভর্তিযুদ্ধ

জিপিএ-৫ পেয়েও ভালো কলেজ পাওয়া অনিশ্চিত

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

চলতি বছরে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। সবার সামনে এখন ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় ভালো কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন না অনেক জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী। আবার দেশের সব কলেজ তাদের নির্ধারিত সংখ্যক আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী পাবে না। কেননা আসনের তুলনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কম। সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কলেজে আসন আছে ৩৩ লাখের বেশি। এসএসসি পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ১৬ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত বছর জিপিএ-৫ পেয়ে কাঙ্ক্ষিত কলেজ পাননি সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী। পরে তারা অন্যত্র ভর্তি হয়। এবারও একই অবস্থা হবে। কারণ, রাজধানীসহ সারা দেশে আড়াইশ’র মতো কলেজে ভর্তির আগ্রহ থাকে বেশি। এই আড়াইশ’ কলেজের মধ্যে রাজধানীর ৩০ থেকে ৩৫টি কলেজে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়বে। এই কলেজগুলোতে সর্বসাকুল্যে আসন আছে ৩০ হাজারের মতো। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখা আছে। ফলে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। তাই বাইরের প্রতিষ্ঠানের জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এসব কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। শিক্ষা বোর্ডগুলো মনে করে, সারা দেশে ‘ভালো’ বা ‘মোটামুটি ভালো’ মানের কলেজ আছে ২৪০-২৫০টি। যেগুলোতে সবমিলিয়ে আসন আছে এক লাখের মতো। বিপরীতে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। তাই ভালো কলেজগুলো যদি কেবল জিপিএ-৫ পাওয়াদেরই ভর্তি করে তারপরও সব প্রার্থী এসব কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। অন্তত ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে হবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় গ্রেডের কলেজে। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, সারা দেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান করানোর অনুমতি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে প্রায় ২২ লাখের মতো। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে আছে প্রায় দুই লাখ ৪৩ হাজারের বেশি আসন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় নয় লাখ আসন রয়েছে। সবমিলিয়ে আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ। এবার পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার। অর্থাৎ সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও আসন শূন্য থাকবে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ। একাধিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশে সাড়ে ১১ হাজার প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান হলেও মূলত আড়াইশ’ কলেজে ভর্তির আগ্রহ থাকে সবার। এর মধ্যে প্রায় ২০০টি হলো কলেজ ও মাদ্রাসা, ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউট রয়েছে। ৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। ডিপ্লোমা ইন কমার্সের সাত প্রতিষ্ঠান ও বিএমটি এবং ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানেও কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবার একাদশের আসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। পর্যাপ্ত ভর্তিযোগ্য আসন থাকলেও ভালো কলেজে ভর্তির জন্য যুদ্ধ হবে। শিক্ষার্থীরা যদি নিজ ফল ও নম্বরের দিকে নজর রেখে আবেদন করে তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্রতি বছরের মতো এবারও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী আগামী ২৬ মে থেকে ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে। তিন ধাপে চলবে আবেদন প্রক্রিয়া। সব প্রক্রিয়া শেষ করে ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট শূন্য আসনের ৯৩ শতাংশ মেধা কোটা হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব শূন্য আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং দুই শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে। এসব আসনে শিক্ষার্থী না থাকলে তা মেধা কোটায় বিবেচিত হবে। কোটার ক্ষেত্রে আবেদনকারী সংখ্যা বেশি হলে মেধার ভিত্তিতে তালিকা করা হবে। তবে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি করবে নটর ডেম, হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফ। ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। তবে হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ ও নটর ডেম কলেজ নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। প্রতি বছরের মতো এবারও এই তিন কলেজ নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি করাবে বলে জানা গেছে।