ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

তিনি এসেছিলেন বলেই আজকের এই অর্জন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। ১৯৮১ সালের এই দিনে ৬ বছর নির্বাসনে থাকার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকদের ষড়যন্ত্র আর অনিরাপত্তার কারণে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও দীর্ঘ ৬ বছর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। তার আগমনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ সময় চাঙা হন; নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। শেখ হাসিনা সবচেয়ে দুঃসময়ে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামে সর্বদা লড়াই করছেন। তিনি বার বার মৃত্যুর দ্বার থেকে ফিরে এসেছেন। দেশ ও দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য নিরন্তন প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, বিকাশ এবং মুক্তির লক্ষ্যে অগ্রণী হিসাবে কাজ শুরু করেন।

শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা এবং অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অঙ্গনে এক ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্ববিখ্যাত নেতা হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সব ধরনের শোষণ, বঞ্চনা, অবিচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার ও রক্ষণাত্মক ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এখন আওয়ামী লীগ টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল এবং দঢ় নেতৃত্বে বিশ্ব হতবাক। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ একটি ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০৪১ সালে একটি ‘উন্নত দেশ’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪টি মাইলফলক হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করা, ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার এবং ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। আওয়ামী লীগ সভাপতির সাফল্যের একটি বড় দিক হলো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে মনে করা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশকে উন্নত এবং অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বাংলাদেশকে একটা আত্মসম্মান মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। দেশের টাকায় নির্মাণ করা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদার এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই। বাংলাদেশে যখন সংকট তীব্র হয়, তখন সবকিছু আবর্তিত হয় অনিশ্চয়তায়, বাংলার আকাশে কালো মেঘ জমে থাকে, তখন শেখ হাসিনাই শেষ ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ান। তার পরিচয় প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি, তিনি এক অদম্য সাহসী মানুষ। তিনি একজন যোদ্ধা ও একজন অভিভাবক। তিনি সাহসিকতার সঙ্গেই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করছেন। এই চার দশকে তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য লড়াই করেছেন। সংগ্রামের এই গতিপথ ছিল প্রতিকূল।

শেখ হাসিনা, যিনি অলৌকিকভাবে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুর অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন। বাংলাদেশ আজ টেকসই উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তর সম্ভাবনার নতুন নতুন দিক উন্মোচন হচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিটি খাতে সৃষ্টি হয়েছে মহাজাগরণের। অমিত সম্ভাবনার হাতছানি এদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত ও আগ্রহী করে তুলছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে আজ উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজেই নিজের ভাগ্য নতুনভাবে গড়ে তুলছেন দেশের শিক্ষিত যুব সমাজ। সম্মিলিত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে দেশের চিত্র। সম্ভাবনার উজ্জ্বল চমক দ্যুতি ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। শিক্ষায় উন্নতি, যোগাযোগের অবকাঠামো, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষার সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতা বাড়ানো, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের সহযোগিতা ও অটিজম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন তার সরকারেরই অবদান। প্রকৃত অর্থে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আর এই মহতী যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের কাণ্ডারি, আমাদের শেষ ভরসাস্থল ও আশ্রয়স্থল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত