হয় ঝুলে থাকি, নয়তো ঝুলিয়ে রাখি!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

১.

অনেক বড় চাকরি করেন কিংবা ভালো পরিমাণেই অর্থ-বিত্তের মালিক! পদণ্ডপদবি এবং ক্ষমতার বিচারে বড়াই করাই চলে! এসবের মধ্যে থেকেও জীবন কি নিজের মন যেভাবে চায়, সেভাবে উপভোগ করতে পারেন? মন চাইলে মায়ের কাছে যখন তখন ছুটে আসতে পারেন? ইচ্ছা হলেই সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে পূর্ণিমা দেখতে যেতে পারেন? অলসতায় ঘুমিয়ে থাকতে পারেন কয়েক দিন? পারেন না! আপনার দায়বদ্ধতা আছে! পিছুটান তৈরি হয়েছে! কয়েকটি টাকা মাইনে নেন বলে কৈফিয়ত দিতে হয়! সাগর-জ্যোছনায় ইচ্ছেমতো হারাতে পারেন না! প্রিয়জনের প্রয়োজনে পাশে থাকতে পারেন না!

কখনো কখনো আপনাআপনি মনে হয়, আপনি কোথাও নেই! আপনি কারো নন! কিন্তু দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতার কারাগারে বন্দি হয়েছেন পোক্তভাবেই। যা খুশি, যেভাবে খুশি সেভাবে জীবনের রঙে নিজেকে এখন আর সাজাতে পারেন না। কারো হুকুমে চলতে হয়, কারো গোলামি করতে হয়! প্রভূ বদলায়, কিন্তু দাসত্বের ধরন পাল্টায় না।

মহাবিরক্তিকর কাজও মহাধৈর্যের পরীক্ষায় নির্ভুলভাবে করতে হয়। মাঝেমধ্যে কথা শুনতেও হয়!

নিজেকে মাঝেমধ্যে রোবট মনে হয়! কখনো ব্যর্থও মনে করেন! পরিবারের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে পারেন না! শেকলে জীবন জড়িয়ে গেছে! দুই পা, হাত বাঁধা পড়েছে! মন ছুটতে চায়! মন-দেহ ছাড়া কোথায় যাবে! মন তো আশ্রয় চাহে!

২.

একটা ছন্নছাড়া জীবন আছে! বোহেমিয়ান বেশে চলতে পারেন! রাতে ছাদে চাঁদ দেখতে পারেন! গামছায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন অথৈ জলে। কল্পনায় কাটিয়ে দিতে পারেন ভরদুপুরে! ইচ্ছা হলেই ছুটতে পারেন, মন মিটিয়ে ঘুরতে ও ঘুমাতে পারেন দিন-দুপুরে! জীবনে টাকা-পয়সার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের সাধ্য কার? সেজন্য কিছু যোগ্যত লাগে! সেসব তো মনের ওপর চাপ দিয়ে আদায় করতে হয়! ভালোবেসে কবিতা লেখা যায়, গান শোনা যায়; কিন্তু টাকার মেশিন হওয়া যায় না! প্রয়োজন যখন ইচ্ছার উল্টোদিকে চলে তখন দুঃখ আসে, দুঃখ চাপে!

তখন স্বাধীনতায় বিঘ্ন ঘটে! নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে! কিন্তু চলতে, থাকতে এবং খেতে পয়সা কড়ির দরকার পড়ে। সেজন্য নিজেকে পোড়াতে হয়! খাঁটি করার নামে নিজেকে নিজেই ভোগাতে হয়। বিরক্তিতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জড়াতে হয়! আসল রঙ তখন বদলে যায়! দুঃখ ঘনায়, দুঃখ বাড়ে!

৩.

আমি সুখী- এমন ভাবতে পারলেই সুখী হওয়া যায়। কারো সঙ্গে তুলনা করে ভালো থাকতে, গেছেন তো নিজেকে খুইয়েছেন! স্বকীয়তা বলতে আর কিছু থাকবে না। ইচ্ছামতো নিজের ইচ্ছা আর আঁকবে না। হতাশায় জড়ালে, বড়ত্বের দম্ভ বাড়লে সে বরবাদ হোগেয়া! তবে সুখেরও যেমন পরম পূর্ণতা নেই, দুঃখেরও তেমন চরম পরিণতি নেই! অসংখ্য বিকল্পের মাঝে আমরা অসাধারণ জীবনযাপনকে বেছে নিই! যা সাধারণের মত মসৃণ না হলেও ফলাফল পূর্বানুমিত। অতি উত্থান এবং অসীম পতন- দু’পথকেই এড়িয়ে নির্ঞ্ঝাট জীবনের দিকে ধাবিত হই! ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি- জীবনের সংবিধান বানাই!

যেখানে সুন্দরী বউ, কিছু টাকা আর কয়েক বিষয়ে নিরাপত্তার আশায় বৈধ-অবৈধে তালগোল পাকাই! সঙ্গে বই রাখি না বলে সময় শান্ত হয় না, বৈধতায় থাকি না বলে সন্তান সুস্থ মস্তিষ্কের হয় না- এভাবে দুঃখ যাতনা বাড়ে! আষ্ঠেপৃষ্টে অশান্তি জড়িয়ে ছাড়ে! থরে থরে সুখ সাজাতে চেয়ে বিপদ বাড়িয়ে তুলি! লোভ, মোহমায়া এবং আবেগের আতিশয্যে বিবেকের দুয়ার তালাবদ্ধ করি! সম্পূর্ণভাবে আমরা কোনোটাই পাই না! হয় ঝুলে থাকি নয়তো ঝুলিয়ে রাখি!

‘যেটুকু পাইবার মতো পাওয়া সেটুকু পাইয়াই যেন সুখী হইতে পারি। তার চেয়ে বেশি যতটুকুই পাওয়া যায় তার অনেক ভার, অনেক দুঃখ।’